বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আলোচনা

বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও পর্যবেক্ষণের বিষয় এসেছে।

বুধবার সন্ধ্যার পর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে এ আলোচনা হয়।

বিশেষ করে রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে ভবিষ্যতে কি ধরনের টানাপোড়েন সৃষ্টি হতে পারে সে বিষয়গুলোও আলোচনায় এসেছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এছাড়া দেশের বন্যা পরিস্থিতি, ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জঙ্গি হামলার ষড়যন্ত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বুধবার সন্ধ্যার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। এর আগেই বঙ্গভবনে পৌঁছান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।

প্রধানমন্ত্রীর পর বঙ্গভবনে আসেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। রাত ১০টার কিছু আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। রাত ১০টার পর বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে যান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর পরপরই আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল বেরিয়ে আসেন।

বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তবে রায়ের রিভিউ করা হবে কিনা বা কবে আবেদন করা হবে- এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষ হয়নি। আরও আলোচনা হবে বলে তিনি জানান। রাষ্ট্রপতি কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কিনা এ সংক্রান্ত  প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখন তা  বলা যাবে না।’

এর আগে সোমবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ‘আওয়ামী লীগের প্রকৃত অবস্থান জানাতে তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন’ বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। রায় নিয়ে শনিবার রাতে কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে যান ওবায়দুল কাদের। তিনি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে তার দল ও সরকারের মনোভাব অবহিত করেন।

বুধবার রাতে বঙ্গভবন থেকে বের হওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল যুগান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। অন্য কোনো প্রশ্নের তিনি উত্তর দেননি। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, তা অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেয়া রায় ১ আগস্ট প্রকাশ করেন সুপ্রিমকোর্ট। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তাতে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে খাটো করা হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশসহ তিন দিনের কর্মসূচি পালন করছেন দলটির সমর্থক আইনজীবীরা। এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলনে রায়ের পর্যবেক্ষণের ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য এক্সপাঞ্জ (প্রত্যাহার) করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি জানান, এ ব্যাপারে আবেদন করা হবে।

তবে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে ফিরে আসায় এ রায় এবং রায়ের পর্যবেক্ষণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। বিচারপতি খায়রুল হকের অপসারণ ও গ্রেফতারের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি পালন করছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। উভয়পক্ষের কর্মসূচির শেষ দিন আজ।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।