ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পেনড্রাইভ জাজমেন্ট: তাপস

 বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে সংসদকে ইমম্যাচিউরিটি বলা হয়েছে। এ কথার নিন্দা জানাই। এ রায়কে পেনড্রাইভ জাজমেন্ট আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, কোন পেনড্রাইভ ও ল্যাপটপ থেকে এ রায়ের উৎপত্তি হয়েছে সেটা আমাদের জানা আছে।
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে তিন দিনের কর্মসূচির বৃহস্পতিবার ছিল শেষ দিন।

এ নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এবং সমিতির উত্তর হলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম পৃথকভাবে সমাবেশ করে।

আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সমাবেশে ষোড়শ সংশোধনীর পুরো রায় বাতিলের দাবি জানানো হয়। এ রায়কে পেনড্রাইভ জাজমেন্ট আখ্যায়িত করে নেতারা বলেন, কোন পেনড্রাইভ ও ল্যাপটপ থেকে এ রায়ের উৎপত্তি হয়েছে সেটা আমাদের জানা আছে। এ ষড়যন্ত্রের মুখোশ আমরা শিগগিরই জনগণের কাছে উন্মোচন করব। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অসম্মান করায় প্রধান বিচারপতির কড়া সমালোচনা করেন নেতারা।

অপরদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভায় নেতারা বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। এ রায় দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরও মজবুত করবে। তারা বলেন, খায়রুল হক সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। তিনি একজন সরকারি বেতনভোগী কর্মকর্তা। তিনি আইন লঙ্ঘন করেছেন।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরষিদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সভাপতিত্বে সভায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, বার কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল বাসেত মজুমদার, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব শেখ ফজলে নুর তাপস এমপি, অ্যাডভোকেট এসএম মুনির, অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি, মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী ও সানজিদা খানম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সভায় ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে সংসদকে ইমম্যাচিউরিটি বলা হয়েছে। এ কথার নিন্দা জানাই। উদাহরণ দিয়ে বলব ওনারা কেমন ম্যাচিউরিটি। তিন বছরেও একজন যুদ্ধাপরাধী তার রায়ের কপি হাতে পাননি। এটা হল তাদের ম্যাচিউরিটি। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ছয়মাসের মধ্যে রায় লিখে দিতে হবে। তাহলে একজন ভুক্তভোগী তার রায় পাওয়ার পরও কী ছয় মাস সুপ্রিমকোর্টের দুয়ারে ঘুরে বেড়াবে। এই হল তাদের ম্যাচিউরিটি।

তিনি আরও বলেন, রায়ে যে উক্তিগুলো দেয়া হয়েছে, এতে আমি বলতে চাই, এটা হল পেনড্রাইভ জাজমেন্ট। তার মানে কোন পেনড্রাইভ থেকে এবং কোন ল্যাপটপ থেকে এ রায়ের উৎপত্তি হয়েছে সেটা আমাদের জানা আছে। এ ষড়যন্ত্রের মুখোশ আমরা শিগগিরই জনগণের কাছে উন্মোচন করব।

আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, আজ বাংলাদেশের আইনজীবীরা একত্রিত হয়েছে ষোড়শ সংশোধনী রায়ের বিরুদ্ধে। এ রায়ে আইনি কথার চেয়ে রাজনীতির কথা বেশি বলা হয়েছে। যে রায় দেয়া হয়েছে তাতে জনসাধারণের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়নি। আমরা আশা করব অনতিবিলম্বে এ রায় বাতিল করা হোক।

অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, আজকে যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটূক্তি করা হয়েছে সেটা কোনোদিন বাংলার মানুষ মেনে নেবে না, মেনে নিতে পারে না। এই বাংলাদেশ এককভাবে বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন।

ইউসুফ হোসেন হুমায়ন বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে ৯৬ অনুচ্ছেদ বাতিল করেছেন। সংসদের হাতে বিচারক অপসারণ ক্ষমতা থাকবে না সেই রায় দিয়েছেন। কিন্তু সেই রায়ের সঙ্গে ৪০০ পাতার যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সেটা আমরা মানি না, মানি না।

সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সুপ্রিমকোর্ট বারের সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, তৈমুর আলম খন্দকার, সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, আরিফা জেসমিন, আবেদ রাজা, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মির্জা আল মাহমুদ, তাহসিন আলী প্রমুখ।

সমাবেশের আগে সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনে বিক্ষোভ করেন আইনজীবীরা। আগামী রোব, বুধ ও বৃহস্পতিবার আইনজীবী ফোরামের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে।

খায়রুল হক সম্পর্কে মওদুদ বলেন, তিনি পদত্যাগ করলে ধরে নেব তিনি একজন সত্যবাদী মানুষ। অন্যথায় মনে করব সরকারের দালাল হিসেবে তিনি (খায়রুল হক) রায় নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।

জয়নুল আবেদীন বলেন, সরকারের শেষ সময়ে ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে তাদের মাথাব্যথা শুরু হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন হলে সেখানে তাদের পরাজয় নিশ্চিত।

তিনি বলেন, এ রায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রায়। খায়রুল হক ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ে অনেক অমূলক কথা বলেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ যে রায় দিয়েছিলেন ১৬ মাস পর তা তিনি নিজে পরিবর্তন করেছেন। একজন বিচারপতি বলেছেন, এটা তার বিচারিক অসততা।

সরকার সমর্থক আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাজনীতি করতে চাইলে ৩২ নম্বর বা টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে করেন। এখানে বিভক্তি সৃষ্টি করবেন না।

মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, আপিল বিভাগের এই রায়ের পর বর্তমান সরকার অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সংসদ বাতিল করে সরকারকে পদত্যাগ করে অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা সুপ্রিমকোর্টের রায়ের সমালোচনা করলে জনগণ তা কি করে মানবে। তিনি বলেন, আদালত অবমাননার দায়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।

Please follow and like us:

Check Also

নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

চট্টগ্রামে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।