সাতক্ষীরা সীমান্তে ভারতীয় গরুতে ব্যাপক চাঁদাবাজি !

সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া , দেবহাটা ও কালিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় গরু প্রবেশ করছে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন’শ ভারতীয় গরু সাতক্ষীরার সীমান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। তবে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। গরুপ্রতি ৫০০ টাকা সরকারি রাজস্ব আদায় করার কথা থাকলেও আদায় করা হচ্ছে গরুপ্রতি ৪ হাজার ২০০ টাকা করে। আর এসব টাকা কয়েকটি সরকারি সংস্থার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা , ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা, এক শ্রেণীর দালাল চক্র ও রাজস্ব অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গরুর মাংস সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে এবং দাম কমাতে সম্প্রতি ভারতীয় গরু প্রবেশের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্ত সীমান্তে ভারতীয় গরু আনার ক্ষেত্রে ব্যাপক চাঁদাবাজির কারণে সরকারের সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে, ভারতীয় গরু প্রবেশের ফলে দেশীয় খামারীরা বেশ দু:চিন্তায় পড়েছে। ভারতীয় গরুর কারণে গরুর বাজার মূল্য কমে যাবে বলে মনে করছেন দেশীয় খামার মালিকরা।

সাতক্ষীরা কাস্টমস্ অফিসের রজাস্ব কর্মকর্ত আব্দুল লতিফ  জানান, সাতক্ষীরার কুলিয়া, সোনাবাড়িয়া, সাতানি ও বসন্তপুর পৃথক এই চারটি করিডোর দিয়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ করে থাকে। ওই চারটি করিডোর দিয়ে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে গরু এসেছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৮ টি। এরমধ্যে ২০১৭ সালে জানুয়ারি মাসে এসেছে ২৫ হাজার ১ শত ৭৩ টি। ফেব্র“য়ারি মাসে এসেছে ১৫ হাজার ৫ শত ৪৭ টি। মার্চ মাসে ৩ হাজার ৫ শত ৯৯ টি। এপ্রিল মাসে ২৭৫ টি। মে মাসে ১ হাজার ৩ শত ৮২ টি। জুন মাসে ২ হাজার ৫ শত ৭২ টি। জুলাই মাসে ৩ হাজার ২ শত দুইটি এবং চলতি আগষ্ট মাসে (১৫ আগষ্ট পর্যন্ত ) ৩ হাজার ৮ শত ৩৪ টি গরু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩’শ ভারতীয় গরু সাতক্ষীরার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় গরু প্রবেশ সম্পতি বেড়ে তা দ্বিগুন হয়েছে।
২০১৬ অর্থবছরে জুলাই মাসে কুলিয়া সীমান্ত দিয়ে ১৮১১টি, সোনাবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে ৫৪৭ টি, সাতানি সীমান্ত দিয়ে ২০৮ টি ও বসন্তপুর সীমান্ত দিয়ে ১২৫৪ টি গরু এসেছে। সেপ্টেস্বর মাসে ৪৬৫০টি, অক্টোবর মাসে ১৫৪৮১টি, নভেম্বরে ১৬০৫৭টি ও ডিসেম্বরে ২০২০৭ টি গরু এসেছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে দুই থেকে তিন শত গরু আসছে। এসব গরু কাষ্টম করিডোর করে বৈধ করা হয়। তাতে খরচ হয় গরুপ্রতি ৫১০ টাকা। এরপর এসব গরু রাজধানি সহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে কিনে নিয়ে যায় ব্যাপারিরা।

তবে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা সীমান্তে ব্যাপক ভাবে চাঁদাবাজি হচ্ছে। গরুপ্রতি সরকারি কোষাগারে ৫০০/= টাকা নেওয়ার কথা অর্থাৎ সরকারি খাতে গরুপ্রতি রাজস্ব জমা হয় ৫০০ টাকা। সেখানে গরুপ্রতি তাদেরকে বর্তমানে চাঁদা দিতে হচেছ ৪ হাজার ২০০ টাকা। অতিরিক্ত এসব টাকা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তা রাজস্ব অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা, স্থানীয় দালালদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হচ্ছে বলে তারা জানায়। অতিরিক্ত চাঁদা আদায় বন্ধে সংশ্লিষ্ট মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে তারা বলেন, গরুর মাংস সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে ভারতীয় গরু প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু ব্যাপক চাঁদাবাজির কারণে সরকারের সেই উদ্দেশ্র ব্যহত হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশ

জানান, জেলায় এবার ৩২ হাজার গরুসহ ৫৩ হাজার বিভিন্ন ধরনের দেশীয় পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যা দিয়ে কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে আরও ১০ হাজার পশু অন্য জেলায় পাঠানো সম্ভব। ভারতীয় গরু না আসলেও কোন সমস্যা নেই। বরং ভারতীয় গরু আসার কারণে দেশীয় খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
##

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।