আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া নন, ইউনূস: ভারতীয় পত্রিকা

আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পান না। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশেষ বিবেচনা করছেন। ভারতের তেহেলকা ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের গৌহাটির বিশিষ্ট সাংবাদিক নভ ঠাকুরিয়া।

তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কে বেশি জনপ্রিয়- একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নাকি তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী? তার ভাষায়, এমন প্রশ্ন বাংলাদেশের মানুষের কাছেও একটি প্রধান প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি তার প্রতিবেদনে বলেন, গত এক দশক ধরে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিকে শাসন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ইউনূস ব্যাংকার থেকে সামাজিক বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি পান এবং তার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর থেকে তিনি দেশের মানুষের নজর কাড়তে শুরু করেন।

ভারতীয় ওই সাংবাদিকের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা দারিদ্রপীড়িত দেশটিতে তার রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রেখেছেন। বাংলাদেশের মানুষ আগামী দিনে নির্বাচনের জন্যে অপেক্ষা করছে যখন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে দৃশ্যত তার অবস্থান হারিয়েছেন।

সাংবাদিক নভ ঠাকুরিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধানের জন্যে প্রফেসর ইউনূস তাই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী, যিনি শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। এবং ইউনূস বাংলদেশের ১৭ কোটি মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা রাখেন। বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনা ইউনূসের সমালোচনা করেছেন। মুসলিম অধ্যুষিত দেশটির একজন নোবেল বিজয়ী সরকার প্রধানের সমালোচনার বাইরে নন। সংসদে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। বিদেশ ভ্রমণেও হাসিনা -ইউনূসকে গরিব মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুদে ঋণদাতা বা রক্তচোষা ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করেছেন।

অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে গরিব নারীদের জন্যে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার জন্যে প্রফেসর ইউসূসের দীর্ঘদিনের ইতিহাস রয়েছে। কয়েক দশক আগে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৬ সালে তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনিও নোবেল পুরস্কার পান। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহণের পর অন্তত ৫০ মিলিয়ন নারী দারিদ্র থেকে মুক্তি পেয়েছে। স্বপ্নদর্শী এই ব্যাংকার যিনি তার জন্মদিনে জাতীয় নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন, তিনি শেখ হাসিনার সরকারের সময় গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তার সমালোচনা শুরু করেন। উন্নয়নশীল দেশটির ভেতরে এবং বাইরে অনেক পর্যবেক্ষও অনাকাঙ্খিত এই বিতর্কের স্বাক্ষী হয়ে ওঠেন।

এক বছর আগে প্রফেসর ইউনূসের সাক্ষাতকার নেওয়ার সময় তিনি ইঙ্গিত করেন স্থানীয় গণমাধ্যমে কিছু উপাদান যা তাদের প্রতি শত্রুতা সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু ঢাকায় এমন যুক্তি দেখেছি, যেখানে মনে করা হয় পার্বত্য শান্তি চুক্তির জন্যে শেখ হাসিনাই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নোবেল পুরস্কার পেতেন যা প্রফেসর ইউনূস পাওয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়।

এখন গরিবের ব্যাংকার হিসেবে পরিচিত ইউনূস সামাজিক ব্যবসার ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছেন, যেখানে লাভের বিষয়টি টাকার বিচারে নয় বরং তা বিবেচনা করা হয় সামাজিক উন্নয়ন হিসাবে। ইউনূস গরিবের জন্যে দান পছন্দ করেন না বরং তিনি মনে করেন প্রতিটি মানুষ সম্ভাবনা নিয়েই জন্মায়। এবং সামাজিক ব্যবসা তাদেরকে সেই সম্ভাবনাকে উন্নতির এক অমোঘ সুযোগ করে দিতে পারে।

ইউনূস সেন্টার মিডিয়ায় তাকে নিয়ে বিভিন্ন বিতর্কে সাড়া দেয়, সচিবালয় হিসেবে কাজ করে, প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনার জবাব দেয়। ঢাকা ভিত্তিক এ সেন্টার দেশে ও দেশের বাইরে সামাজিক ব্যবসা নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সর্বশেষ ঢাকায় আয়োজিত তাদের এমন একটি অনুষ্ঠান পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে বাতিল হয়ে যায়। ইউনূস সেন্টার এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে একটি বিবৃতি দেয়। জাতিসংঘের অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল থমাস গ্যাস’এর এ সম্মেলনে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপনের কথা ছিল।

বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান একেএম শহিদুল হক দাবি করেন, শেষ মুহূর্তে ইউনূস সেন্টার এ আয়োজনের কথা জানায়। হঠাৎ করেই তারা ওই আয়োজনে পুলিশ নিরাপত্তা দেয়ার কথা জানান।

তিনি বলেন, সরকার এ ধরনের একটি আন্তর্জাতিক আয়োজনকে স্বাগত জানায় এবং পুলিশও নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে নিরাপত্তার প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আয়োজনের মাত্র ৩ দিন আগে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো এবং বিষয়টি সম্পর্কে অন্ধকারে থাকায় কোনো সাহায্য করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

তিনি এও বলেন, সরকার এ ধরনের সম্মেলন ভণ্ডুল করার সঙ্গে জড়িত ছিল না। তবে ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে ওই সম্মেলনে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদনটি ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারিন্ডেন্ট’এর কাছে জমা দেয়া হয় গত ২০ জুলাই। সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল ২৮ ও ২৯ জুলাই।

ওই সম্মেলনে সামাজিক ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের মধ্যে আলোচনা, বিতর্ক ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের উদ্দেশ্য ছিল। বিশেষ করে সম্পদের অসম বন্টন মোকাবিলায় কীভাবে উদ্ভাবনী উপায়ে করা যায় তার কৌশল নির্ধারণই ছিল ওই সম্মেলনের একটি উদ্দেশ্য।

সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন, ওয়ার্ল্ড অলিম্পিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জোয়েল বিউজো, সুইজ্যারল্যান্ডের কেইথ টাফলে, ফ্রান্সের জ্যাকুয়েস বার্জার, যুক্তরাষ্ট্রের রাঙ্গু সালগেম, কানাডার রিচার্ড সেন্ট-পিয়েরে, ফ্রান্সের নিকোলাস হ্যাজার্ড, অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ল্যান্ডার্স, মালয়েশিয়ার দাতো চ্যারন মোখজানি, আজারবাইজানের মাতিন কারিমলি, চীনের বেই ডুওগুয়াং এবং ওয়াং ঝেইনইয়াও, ভারতের শঙ্কর ভেঙ্কটেশ্বরান, অনিল কুমার গুপ্ত, আচ্যুত সামন্ত ও রাহুল বোস প্রমুখ।

সম্মেলনে হাজার দুই আমন্ত্রিত ব্যক্তির মধ্যে ৫০টি দেশের ৪০০ অতিথির অংশ নেয়ার কথা ছিল। ফেসবুক ব্যবহার করে সম্মেলন চলাকালে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনাও ছিল।

প্রসঙ্গত, সাংবাদিক নভ ঠাকুরিয়া- ভারতের জার্নালিস্ট কমলা সাইকিয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য ও গৌহাটি ভিত্তিক মিডিয়া কমেনটেটর।

Please follow and like us:

Check Also

আবুল কাশেম কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি,তাই জনগণ তাকে বার বার নির্বাচিত করতেন: সাতক্ষীরায় মিয়া গোলাম পরওয়ার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।