হতাশায় ভরা চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন

চট্টগ্রম: মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৬০ রান। সেই তুলনায় চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ৩০৫ রান বেশিই তো! খুব সাদামাটা হিসাব। ইনিংসের শুরুতেই মোস্তাফিজুর রহমান অস্ট্রেলিয়া শিবিরে আঘাত হানলে বেশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে টিম বাংলাদেশ। এরপর ধীরে ধীরে বদলে যায় ম্যাচের দৃশ্যপট। মুহূর্তেই যেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচ ব্যাটিং-স্বর্গে পরিণত হয়। যেই পিচে সকালের সেশনে মুশফিক-নাসিররা সংগ্রাম করেছেন সেই পিচেই রানের ফুল ফোটান স্টিভেন স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নার-পিটার হ্যান্ডসকম্বরা। এই তিনজন বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে অজিদের চালকের আসনে নিয়ে যান। অবশ্য তাতে ‘অবদান’ ছিল বাংলাদেশের মিস ফিল্ডিংয়েরও। টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৮ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশের চেয়ে ৮০ রানে পিছিয়ে রয়েছে অজিরা। সবমিলিয়ে টাইগারদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার ৬ উইকেটে ২৫৩ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। অজি বোলারদের তোপের মুখে পড়ে লাঞ্চের আগেই ৩০৫ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে দিন শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ২২৫ রান তুলেছে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশকে লিড দেয়ার পথে দারুণভাবে এগিয়ে চলেছে স্টিভেন স্মিথের দল।
ইনিংসের শুরুতেই ম্যাট রেনশকে হারিয়ে ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। তবে দ্বিতীয় উইকেট স্মিথ ও ওয়ার্নার সেঞ্চুরি ছুঁই ছুঁই জুটি গড়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেন। এরপর তৃতীয় উইকেটে স্মিথ-হ্যান্ডসকম্বের হার না মানা সেঞ্চুরি (১২৭) জুটিতে ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে অস্ট্রেলিয়া।
রেনশ ৪ রান করে ফিরে গেলেও বাকি তিনজনই রানের দেখা পান। স্মিথ আউট হন ৫৮ রান করে। দিন শেষে ওয়ার্নার ৮৮ এবং হ্যান্ডসকম্ব ৬৯ রানে অপরাজিত রয়েছেন।
প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় অস্ট্রেলিয়া। মোস্তাফিজুর রহমানের করা ব্যক্তিগত প্রথম এবং ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ম্যাট রেনশ। অসাধারণ দৃঢ়তায় ঝাঁপিয়ে পড়ে রেনশর ক্যাচ লুফে নেন মুশি।
শুরুতেই উইকেটের দেখা পেলেও অস্ট্রেলিয়াকে কোণঠাসা করে ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে স্মিথ ও ওয়ার্নার ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন। তাইজুল আক্রমণে এসে সেই বিপজ্জনক জুটি ভাঙেন। তবে তার আগেই ৯৩ রানের দারুণ জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন স্মিথ-ওয়ার্নার।
২৯তম ওভারে প্রথমবারের মতো তাইজুলকে আক্রমণে আনেন মুশফিক। প্রথম বলেই আস্থার প্রতিদান দেন এই টাইগার স্পিনার। তাইজুলের আর্ম বলে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন স্মিথ। বাকি গল্পটুকু অস্ট্রেলিয়ার একচ্ছত্র আধিপত্যের। তৃতীয় উইকেটে দারুণ জুটি গড়ে এরপর বাংলাদেশের মুখের হাসি কেড়ে নেন ওয়ার্নার ও হ্যান্ডসকম্ব।
এরমধ্যে দু’দুবার ওয়ার্নারকে নতুন জীবন দেন মুমিনুল ও মুশফিক। শেষ সেশনের শুরুতেই ওয়ার্নারের ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন মুমিনুল। অন্যদিকে দিনের খেলা হওয়ার ১০ মিনিট আগে ওয়ার্নারকে স্টাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মুশফিক। মিরাজের করা ৫৭তম ওভারের প্রথম বলে ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে খেলতে চেয়েছিলেন অজি ওপেনার। তিনি পরাস্ত হলেও বল ধরতে ব্যর্থ হন মুশফিক। ফলে আরেকটি উইকেট থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। টেস্টের তৃতীয় দিন এই দুটি ‘ব্যর্থতা’র বড় মাশুলই হয়তো দিবে হবে মুশফিকদের।
মঙ্গলবার ৬ উইকেটে ২৫৩ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। দিনের শুরুতেই মুশফিকুর রহীম ফিরে গেলে নাসির হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ ছোট অথচ কার্যকরী জুটি গড়ে দলের সংগ্রহ ৩০০ পার করেন। আগের দিনের সঙ্গে আরো চার রান যোগ করে ব্যক্তিগত ৬৬ রানে আউট হন মুশফিক। ১৯ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা নাসির আউট হন ৪৫ রান করে।
আগের দিন সাব্বির আউট হয়েছেন ৬৬ রান করে; টেস্টে এটাই তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। সৌম্য সরকার ৩৩, মুমিনুল হক ৩১ এবং সাকিব করেন ২৪ রান। তামিম ইকবাল ৯ এবং ইমরুল কায়েস ৪ রান করে আউট হন।
ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে কোনো দলের প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলা নাথান লায়ন যথারীতি অস্ট্রেলিয়ান বোলিং অ্যাটাকের নায়ক। ৯৪ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট নেন এই অজি স্পিনার। এই নিয়ে টানা তিন টেস্টে ৫ উইকেটের দেখা পেলেন লায়ন। অ্যাস্টন অ্যাগার নেন দুটি উইকেট।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।