রোহিঙ্গা সংকট সুচি ব্যর্থ, সেনারা অপরাধী

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর শোচনীয় দুর্দশার ব্যাপারে দেশটির নেত্রী অং সান সুচির দীর্ঘদিনের নীরবতা একটা লজ্জার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

দেশটির বেসামরিক নাগরিক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিধনযজ্ঞ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল। এ অপরাধ দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীই করছে।

এ ব্যাপারে সুচিকে অবশ্যই কথা বলতে হবে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় বৌদ্ধ অধিবাসীদের সাম্প্রতিক সহিংসতার শিকার হয়ে এরই মধ্যে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

এতে শান্তিতে নোবেলজয়ী সুচির নৈতিক পবিত্রতার বাতাবরণ এখন প্রশ্নবিদ্ধ। দলিল-প্রমাণের বিরুদ্ধে গিয়ে মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীটির নাগরিকত্ব অস্বীকার করছে মিয়ানমার সরকার।

দেশটির সরকারের দাবি, তারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। দশকের পর দশক ধরে বঞ্চনা-লাঞ্ছনার পর রোহিঙ্গা সংকট এখন আরও বাজে রূপ নিয়েছে। মিয়ানমারে তাদের মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রীয় সেবাগুলো থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। বহু আগে থেকেই তাদের এ বঞ্চনা শুরু হয়েছে।

২০১২ সাল থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারপরও এসময়ের মধ্যে সরকারি বাহিনী ও বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের তিন তিনটি বড় ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে তারা। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে শুরু হয় আরেকটি সহিংসতা যাতে এখন পর্যন্ত তিন হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু দেশটির নেত্রী সুচি এ ব্যাপারে একেবারেই চোখ বুজে রয়েছেন।

জনগণ তাকে এ ব্যাপারে কথা বলার ও কিছু একটা করার আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ যাবৎ তার বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড খুব বাজে ধরনের ছিল।

তার সরকার রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাহায্য সংস্থার কর্মীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের সব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজের ফেসবুক ওয়ালে সুচি চলমান সহিংসতার জন্য ‘সন্ত্রাসীদের ভুল তথ্য ছড়ানোকে দায়ী করেছেন।

রোহিঙ্গাদের প্রতি যেসব কাল্পনিক দোষ তিনি চাপাচ্ছেন, সেগুলো আসলে বিতর্কিত প্রশ্ন। তিনি তার এসব বক্তব্যের পক্ষে কোনো চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন না। মিয়ানমারে দেশটির বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা যে ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামভীতি তৈরি করেছে তারাই সম্ভবত সুচিকে এ ব্যাপারে উদাসীন থাকতে উৎসাহিত করেছে এবং করছে।

এদিকে বুধবার মিয়ানমার সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাখাইন সংকটে মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে বলেছেন, তার দেশ রাখাইন রাজ্যে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ ব্যাপারে মিয়ানমারের উদ্বেগের অংশীদার।

রোহিঙ্গাদেরকে এরই মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। মিয়ানমারের অধিবাসী হয়েও তারা রাষ্ট্রহীন ও নাগরিকত্বহীন জীবনযাপন করছে।

এদিকে সাম্প্রতিক সহিংসতার পর গত দুই সপ্তাহে যে দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, তাদের অবস্থাও শোচনীয়। অন্যদিকে মিয়ানমার সরকার দাবি করেছে, সহিংসতায় যে কয়েকশ’ মানুষ নিহত হয়েছেন, তারা প্রধানত রোহিঙ্গা বিদ্রোহী এবং তারাই গ্রামগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

তবে সরকারের এ দাবির বিপক্ষে বহু প্রমাণ রয়েছে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও বেশি এবং তাদের বেশিরভাগ বেসামরিক রোহিঙ্গা নাগরিক।

এক হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া একজন গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, শিশু ও বৃদ্ধদেরও গুলি করে বা গলা কেটে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। আরও কয়েকজন তাদের পুরো পরিবারকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার কথা বলেছেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর একই অপরাধে সংঘটনের অভিযোগে অভিযুক্ত করে।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস এ নীরব নিধনযজ্ঞের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গারা ‘জাতিগত নিধনের’ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তবে কয়েকজন নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট জাতিগত নিধনের পর্যায়ে চলে গেছে।

Please follow and like us:

Check Also

কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যা বললেন ডিবির হারুন

ভুয়া সনদ সরবরাহে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।