রোহিঙ্গা সংকট নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্প ‘ভীষণ উদ্বিগ্ন’, সংকট সমাধানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে দায়িত্ব * মিয়ানমার সেনার সঙ্গে সম্পর্ক হ্রাসের চিন্তাভাবনা * রাখাইনে সহিংসতায় দায়ীদের বিচার দাবি

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। সংকট নিরসনে ট্রাম্প তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধের উপায় খুঁজে বের করতে বলেছেন। মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের কে থামাতে পারবে, সবাই এটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এক মন্ত্রী রাখাইনে নিপীড়নের ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক হ্রাস করার কথা বলেছেন আরেক কর্মকর্তা। এসব দেখে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র নড়াচড়া শুরু করেছে। এদিকে সৌদি আরবও রাখাইনে হত্যাযজ্ঞ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ দেয়ার দাবি জানিয়েছে। খবর এপি, টাইম ম্যাগাজিন, ওয়াশিংটন পোস্ট ও আরব নিউজের। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বৃহ¯পতিবার নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমার নিয়ে আমরা শুধু সুচিকেই চাপ দিচ্ছি না, সামরিক বাহিনীকেও দিচ্ছি। তিনি বলেন, ‘বার্মার কর্তাদের কে বোঝাতে সক্ষম তা বের করার চেষ্টা করছেন সবাই। প্রায় ৫ লাখ লোক দেশ ছেড়েছে এবং যে ট্র্যাজেডি ও নিপীড়ন সেখানে হচ্ছে তা হজম করা যায় না।’

হ্যালি বলেন, ট্রাম্পের উদ্বেগের কথা জানাতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির সঙ্গে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। হ্যালি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান মেরিন জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের এই নির্যাতন বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। বুধবার এ নির্যাতন বন্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে শক্ত ও দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তিনি রাখাইন পরিস্থিতিকে ‘বড় ট্র্যাজেডি’ এবং ‘মানবাধিকারের ওপর হৃদয়বিদারক আঘাত’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি রোহিঙ্গাদের এই প্রয়োজনের মুহূর্তে তাদের সাহায্য এবং তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করার আহ্বান জানান।

এদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক হ্রাসের কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টাইম ম্যাগাজিনকে এ তথ্য জানিয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক মুখপাত্র বলেন, ‘বার্মার সেনাবাহিনী যদি আইনের শাসন মেনে কাজ না করে এবং সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুত করা বন্ধ না করে তবে তাদের সঙ্গে কাজ করে যাওয়াটা কঠিন হবে।’

ওই মুখপাত্র অবিলম্বে সেনা সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে আনুষ্ঠানিক সহযোগিতা দেয়া, তাদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি এবং প্রশিক্ষণ দেয়ার ওপর এখনও নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে ওই মুখপাত্র জানান, দুটো দেশের মধ্যে সম্পর্ক বিকশিত হওয়ার পথে ছিল।

হোয়াইট হাউস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মিয়ানমারের বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা সরকার ও সেনাবাহিনীকে রাখাইনে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর সুযোগ দেয়ারও কথা বলছেন। তবে জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনে ট্রাম্প যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে রোহিঙ্গা সংকটের কথা উল্লেখ ছিল না। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাট্রিক মার্ফি বলেছেন, রাখাইনে মুসলিমদের ওপর সোনবাহিনীর নিপীড়নের অভিযোগ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার যদি তা না করে তবে কিভাবে সেটা করা যায় সেই কৌশল খুঁজে বের করতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। মার্ফি গত সপ্তাহে মিয়ানমার সফর করেছেন। তিনি রাখাইন সফর করেন। তবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া এলাকায় তাকে যেতে দেয়া হয়নি।

আন্তর্জাতিক চাপ চায় সৌদি আরব : রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছে সৌদি কর্মকর্তা। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং বাদশাহ সালমান মানবিক ত্রাণ কেন্দ্রের প্রধান ড. আদুল্লাহ আল রাবিয়াহ বলেন, মুসলিম নিধনযজ্ঞ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে হবে। রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে শান্তিতে নাগরিক অধিকারসহ বাস করতে পারে সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চান তিনি। তিনি বলেন, সৌদি সরকার বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা দিচ্ছে।

Please follow and like us:

Check Also

পৃথিবীর যেসব দেশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিরও উপরে

জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ভয়াবহতার সাক্ষী হতে যাচ্ছে সারাবিশ্ব। প্রতিদিনই একটু একটু করে বৈরি হচ্ছে আবহাওয়া, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।