রোহিঙ্গা সংকট: বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব মিয়ানমারের

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার। আান্তর্জাতিক চাপের মুখে রাখাইনে সহিংসতা শুরু হওয়ার প্রায় এক মাস পর এমন প্রস্তাব দিল দেশটি। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইড লাইনে বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং টুনের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর বৈঠকে মিয়ানমার এ প্রস্তাব দেয়। নিউইয়র্কে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের খবরে একথা বলা হয়েছে।
নিউইয়র্কে নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করতে বলা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পাঁচ দফা তার ভাষণে উল্লেখ করেছেন তার ওপর ভিত্তি করে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। বৈঠকে মিয়ানমারের উপদেষ্টা জানান, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে বসতে চায়।
এর আগে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করে মে মাসে মিয়ানমার সরকারকে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। এর আগেও বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গারা ফেরত গেছে এবং ওই পরিকল্পনায় সচিব বা অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের বৈঠকের কথা বলা আছে যারা পুরনো পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে নাকি নতুন কোনো উপায় বের করা হবে সেটি নিয়েও আলোচনা করবে। সংকট সমাধানে তারা যে সিরিয়াস সেটা দেখানোর জন্য আগেও মিয়ানমার এ ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আলোচনার টেবিলে তাদের কাছ থেকে এ সমস্যার সমাধানে আন্তরিকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে সহিংসতা শুরু হলে মিয়ানমার ৩ মাস সময় নিয়েছিল দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসার জন্য। সেবার জানুয়ারিতে মিয়ানমার সরকার ‘কেউ টিন’ নামে এক বিশেষ দূতকে কোনো ম্যান্ডেট ছাড়াই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ঢাকায় পাঠায়। ওই সময়ে বিশেষ দূতের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, চার লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছেন। তখন বিশেষ দূত বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আছেন দুই হাজার মাত্র। তখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, বাংলাদেশ সরকারের দেয়া হেলিকপ্টারে কক্সবাজার গিয়ে রোহিঙ্গাদের সরেজমিন দেখুন। ওই বিশেষ দূত তখন বলেন, এভাবে সরেজমিন যাওয়ার কোনো ম্যান্ডেট তার নেই।
বাংলাদেশি কর্মকর্তারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে বসতে রাজি হয়েছে কিন্তু এটি চাপ লঘু করার কৌশল। যেটি এর আগে মিয়ানমার প্রয়োগ করেছে। অক্টোবর পরবর্তী সহিংসতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা বাংলাদেশের সঙ্গে বসতে ৩ মাস সময় নিয়েছিল এবং এমন একজনকে পাঠিয়েছিল যার কোনো ম্যান্ডেট ছিল না।’ কিন্তু একই ধরনের সহিংস ঘটনা ডিসেম্বরে চীন সীমান্তে হওয়ার দু’দিনের মধ্যে দু’পক্ষের সামরিক বাহিনীর জেনারেল পর্যায়ে বৈঠক হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চাই এবং এজন্য আমরা অবশ্যই বসব কিন্তু আমরা তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও সজাগ থাকব।’

Please follow and like us:

Check Also

পৃথিবীর যেসব দেশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিরও উপরে

জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ভয়াবহতার সাক্ষী হতে যাচ্ছে সারাবিশ্ব। প্রতিদিনই একটু একটু করে বৈরি হচ্ছে আবহাওয়া, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।