সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করছে মিয়ানমার

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে থাকা কাঁটাতারের বেড়া পুনরায় মেরামত করছে মিয়ানমার। গত তিন দিন ধরে তারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করছে। আজ সোমবারও (২৫ সেপ্টেম্বর) নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, তমব্রু ও জলপাইতলী সীমান্তে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যদের কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করতে দেখা গেছে।

স্থানীয়দের ধারণা, আর কোনও রোহিঙ্গা যাতে মিয়ানমারে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ক্ষতিগ্রস্ত কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করে মজবুত করা হচ্ছে।

.সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া (ছবি প্রতিনিধি)মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, সীমান্ত ঘেঁষে তাঁবু তৈরি করে শ্রমিক নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করা হচ্ছে। সীমান্তের যেসব পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়া ক্ষতিগ্রস্ত করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মূলত সেসব পয়েন্টগুলোয় মেরামত করা হচ্ছে। একইসঙ্গে কাঁটাতারের বেড়ার সঙ্গে লাগোয়া সীমান্ত পিলারও পরিবর্তন করা হচ্ছে। যাতে করে কোনও রোহিঙ্গা ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।

ঘুমধুম ও তমব্রু সীমান্তে বসবাসকারী রাহামত উল্লাহ, সাদেক মিয়া ও ফজল আহমদসহ অনেকে জানিয়েছেন, গত তিন দিন ধরে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী তাদের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করছে। এসব কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আসছে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে।

তারা বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানামারে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্তে তাদের তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে। যেসব স্থানে কোনও দিন বিজিপি আসেনি এখন সেসব স্থানেও তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

.ট্রাকে করে আনা হচ্ছে সরঞ্জামাদি (ছবি প্রতিনিধি)নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তের ছরার পাশ ঘেঁষে নো-ম্যানস ল্যান্ডে গড়ে উঠেছে একটি ছোট রোহিঙ্গা বস্তি। ওই বস্তিতে থাকা রোহিঙ্গা নাগরিক আব্দুল মতলব, ছৈয়দ আলম, কালো মিয়া, মরিয়ম বেগম, ফাতেমা জানান, রাখাইন রাজ্যের গ্রামগুলো এখন সবই ফাঁকা। সেখানে কোনও বসতিতে মানুষ নেই। যা কিছু লোক এখনও রয়েছে, তারাও বিভিন্ন ঝোঁপজঙ্গলে লুকিয়ে আছে। এ কারণে আর কোনও রোহিঙ্গা যাতে মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে সে ব্যাপারে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমার সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া মেরামত, বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে স্থল মাইন পুঁতে রাখা ও আকস্মিকভাবে সীমান্তে টহল জোরদারসহ নানা কার্যক্রম করে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গারা জানান, সীমান্তের খুব কাছে অবস্থান নেওয়ার একটি উদ্দেশ্য ছিল যেন রাখাইনের পরিস্থিতি সামান্য শান্ত হলে তারা দেশে ফিরে যাবেন। তাদের কারও কারও বাড়ি সীমান্তের এক থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে। এমনিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে তারা দিনে একবার হলেও নিজের ক্ষতিগ্রস্ত বসতিগুলো দেখতে যেতো। আর এখন কাঁটাতারের বেড়া আরও মজবুত করায় সেটি আর সম্ভব হবে না।

.মিয়ানমার সীমান্তে টহল জোরদার (ছবি প্রতিনিধি)  জানতে চাইলে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, ‘মিয়ানমার কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করছে সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সেখানে আমাদের কোনও হস্তক্ষেপ নেই। তবে আমরা আমাদের সীমান্তে খুব সতর্কাবস্থায় আছি। সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্ট সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে।’

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যকার সীমান্তপথ রয়েছে ২৭১ কিলোমিটার। এরমধ্যে ২০৮ কিলোমিটার স্থলপথ ও ৬৩ কিলোমিটার জলসীমান্ত। পাঁচ বছর আগে থেকেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরের অধিকাংশ সীমান্তজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে সেদেশের সরকার

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।