মংডুতে আরও ২ গণকবরের সন্ধান ২৮ রোহিঙ্গার গলিত লাশ উদ্ধার

শাহনেওয়াজ জিল্লু, কক্সবাজার : এবার মংডুতে আরো দু’টি গর্তের সন্ধান মিলেছে যা থেকে উদ্ধার হয়েছে শিশুসহ ২৮ রোহিঙ্গার গলিত লাশ। ২৪ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেলে উপজেলার রোহিঙ্গা পল্লী কৈয়মাসে প্রকাশ ফকিরাবাজার এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশের দু’টি গর্ত থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। সেনাবাহিনীর অপরাধ আড়াল করার জন্য বার্মিজ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্মী রাখাইনরা লাশের তথ্য নিয়ে চালাচ্ছে প্রপাগান্ডা। রোহিঙ্গাদের হত্যা করে এগর্ত দু’টিতে মাটি চাপা দিয়েছিল সৈন্যরা। আরাকানে বর্মী সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের উপর চলমান দমন পীড়ন অভিযানে শত শত রোহিঙ্গাকে গুপ্তহত্যা করা হয়। আটক পরবর্তী হত্যার মাধ্যমে লাশ গুম করেছে অহরহ। পাহাড়ের ঢালুতে, নির্জন অরণ্যে ও নদীর কিনারায় গণকবর দিয়েছে শত শত রোহিঙ্গাকে। ইতিপূর্বে মংডুতে দুইটি গণকবর ও একটি লাশের নদীর খোঁজ পেয়েছিল রোহিঙ্গারা। এসবেও রোহিঙ্গাদের মৃতদেহে ঠাসা ছিল। শেয়াল-কুকুরে লাশ টানা-হেঁচড়া করে সর্বত্র হাড়গোড় ও নাড়িভুড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে। সূত্র জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর নিপীড়ন থেকে প্রাণ বাঁচাতে একদল রোহিঙ্গা পাহাড়ি পথে বাংলাদেশের দিকে আসার সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দুটি গর্তে মানুষের দেহাবশেষ দেখতে পায়। তারা গর্ত দু’টি খুঁড়তে থাকে। গর্তের ভেতর অজস্র লাশ দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে তারা। বাংলাদেশগামী রোহিঙ্গারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং নিকটবর্তী গ্রামবাসীদের বিষয়টি জানিয়ে দেয়। সূত্র আরো জানিয়েছে, খবরটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সেনা কর্তৃপক্ষকে অবগত করে। পরে সেনা সদস্যরা গিয়ে গলিত লাশগুলো উত্তোলন করে এবং ছবি তোলে নেয়। তড়িঘড়ি করে একটি ভ্যানে উঠিয়ে লাশগুলো নিয়ে যায় সৈন্যরা। এদিকে লাশের তথ্য নিয়ে মিথ্যাচার ও প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে বার্মিজ প্রশাসন, গণমাধ্যম ও রাখাইনরা। উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলো আরাকানের হিন্দু নাগরিকদের(!) দাবি করে এর হত্যার দায় চাপিয়ে দিচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর। মূলত সেনাবাহিনীর অপরাধ আড়াল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তারা। বার্মার বহুল সমালোচিত মুসলিম বিদ্বেষী বৌদ্ধ ভিক্ষু উইরাথু তার ফেইসবুক পেজেও মৃতদেহের ছবিগুলো পোস্ট করে বানোয়াট ক্যাপশান জুড়ে দিতে দেখা গেছে। সেনা সমর্থিত বার্মিজ গণমাধ্যম ‘নারিনজারা’ও মিথ্যাচার করেছে। বার্মার প্রেসিডেন্ট’র মুখপাত্র ‘জ টুয়ে’ টুইটারে মিথ্যাচার করে টুইট করেছে। মিথ্যাকে সত্য রূপ দেয়ার জন্য সৈন্যরা কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ লোকজনকে জিম্মি করে মিথ্যা জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে। এর আগে সেদেশের সেনাবাহিনী একজন মুসলিম আলেমকে জিম্মি করে ‘স্থানীয় একটি মসজিদে রোহিঙ্গা মুসলিমরাই হামলা করেছে’ এমন জবানবন্দী নিতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্লেষকরা বলেন, “আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বার্মার সরকার কি করবে আর কি বলবে তা ঠিক করতে পারছে না। ফলে একের পর এক মিথ্যাচার ও নাটক করছে।” বিশ্লেষকরা আরো বলেন, “সত্য কখনো চাপা থাকে না। বর্মী সেনাবাহিনীর অপরাধ দিবালোকের মত সত্য। যতই প্রপাগান্ডা ও মিথ্যাচার করুক সত্য উম্মোচিত হবেই।”

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর চলমান রোহিঙ্গা কিলিং অপারেশনের গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর এক মাস পূর্ণ হয়েছে। এরই মধ্যে সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম ও প্রায় ৪শ’ মত রোহিঙ্গা হিন্দু নৃশংসভাবে বর্মী সেনাদের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় মারা গেছে ন্যূনতম পাঁচশো জন। শুধু নাফ নদীতেই নিহত হয়েছে দেড় শতাধিক। অগণিত নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ৪১ হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পিতা মাতা হারিয়ে এতিম হয়েছে প্রায় ৪ হাজার নাবালক শিশু। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম।

Please follow and like us:

Check Also

কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যা বললেন ডিবির হারুন

ভুয়া সনদ সরবরাহে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।