খুলনার কয়রা ও পাইকগাছা নিয়ে খুলনা-৬ আসন#আওয়ামী লীগে ৪ জনের ভিড়ে – জামায়াতের শক্ত প্রার্থি

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:খুলনার কয়রা ও পাইকগাছা নিয়ে খুলনা-৬ আসন। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এখানে আওয়ামী লীগের যেমন ব্যাপক ভোট রয়েছে, তেমনি জামায়াতে ইসলামীর রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক। আসন্ন নির্বাচনেও এ দুই দলের প্রার্থীর মধ্যেই মূল লড়াই হবে বলে এলাকার মানুষ ধারণা করছেন।

আওয়ামী লীগে মনোনয়ন পেতে চাইছেন অন্তত চারজন। এ বিভেদ কাজে লাগাতে উন্মুখ হয়ে আছে জামায়াত। এর মধ্যেই জোর প্রচার চালাচ্ছেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও।

এ আসনে বর্তমানে এমপি আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট শেখ মো. নুরুল হক। এবারও নির্বাচন করতে চান তিনি। এ দলে আরও মনোনয়ন চাইছেন সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাব আলী সানা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা আকতারুজ্জামান বাবু এবং সাবেক ছাত্রনেতা ইঞ্জিনিয়ার প্রেমকুমার মণ্ডল।

বিএনপিতে জেলা সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মন্টু, কয়রা উপজেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম ও পাইকগাছা উপজেলা আহ্বায়ক ড. আবদুল মজিদ মনোনয়ন চাইছেন। জামায়াতে প্রার্থী একজনই- সংগঠনের খুলনা মহানগরের আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু এখানে দলের মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম বাবুলও।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন শেখ মো. নুরুল হক।

এর আগে ১৯৯৬ সালে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন এ আসন থেকে। প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকাতেও উন্নয়নের ছোঁয়া দিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি বেশ সমাদৃত হন। এর পরও ২০০১ সালে তিনি পরাজিত হন জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুসের কাছে।

সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে থাকে নুরুল হকের। দলের প্রবীণ এক কর্মীর জায়গা দখল করে বাড়ি তৈরি, পাইকগাছায় ইটভাটা দখলসহ নানা কারণে বিতর্কিত হন। ২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচনী এলাকায় কম আসা আর স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে তার জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে।

তবে শেখ মো. নুরুল হক বলছেন, ‘নেত্রী চাইলে আমি নির্বাচন করব। আমি সারা জীবন কয়রা-পাইকগাছার মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। এখানকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে বলেই আমি দু’বার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। এখন দলের একাধিক নেতাপ্রার্থী হওয়ার কারণে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কয়রা-পাইকগাছার মানুষ নন এমন ব্যক্তিও দল থেকে মনোনয়ন চাইছেন।’

২০০৮ সালে এ আসনে জয়লাভ করেছিলেন সোহরাব আলী সানা। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ ক্ষমতায় থাকাকালীন পরিবারের বাইরে কোনো নেতাকর্মীর কথা তিনি শুনতেন না। স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও জামাই জড়িয়ে পড়েন নিয়োগ-বাণিজ্যে।

স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগও ওঠে। পরে গেল নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। তবে সানা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। যুগান্তরকে তিনি বলেন, এবার দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। পেলে ইনশাআল্লাহ জিতব।

আকতারুজ্জামান বাবু দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের সাথে মিশছেন। সাম্প্রতিক সময়ে পোস্টার ও ব্যানার লাগিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। যুগান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমি ২০০৮ সালের নির্বাচনেও দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলাম। এবারও মনোনয়ন চাইব। কয়রা-পাইকগাছার মানুষের জন্য আমি ছাত্রজীবন থেকেই কাজ করছি। দলের দুঃসময়েও আমি তাদের পাশে ছিলাম। এলাকার মানুষ চায় বলেই আমি নির্বাচন করতে আগ্রহী।’

ইঞ্জিনিয়ার প্রেমকুমার মণ্ডল বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অনুদান দেয়াসহ প্রতিটি উৎসব-পার্বণে শুভেচ্ছা সম্বলিত পোস্টারে প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন। যুগান্তরকে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কয়রা-পাইকগাছার মানুষ হিসেবে মনোনয়ন চাইছি।

এ আসনে ১৯৯১ সালের পর থেকে দু’বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন জামায়াতের প্রার্থী। সর্বশেষ ২০০১ সালে নির্বাচিত হন অধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ। এবার এখানে শক্ত প্রার্থী মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।

মামলা থাকায় দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকলেও এখন তিনি প্রায়ই হাজির হন নির্বাচনী এলাকায়। বিভিন্ন ঘরোয়া প্রোগ্রামের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রেখেছেন তিনি। এলাকায় নির্বাচনী পোস্টারও রয়েছে তার।

জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, ‘সংগঠন থেকে নির্বাচনী প্রচার চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি সে আলোকেই কাজ করছি। তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। ভোট কেন্দ্র কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ জোটগতভাবে হোক বা এককভাবে তিনি প্রার্থী হবেন বলে যুগান্তরকে জানান।

বিএনপির অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘কয়রা-পাইকগাছার জনগণ এবার বিএনপির প্রার্থী চায়। দীর্ঘদিন এ এলাকার নেতাকর্মীরা ক্ষমতার বাইরে। এ ছাড়াও এ আসনে এখন বিএনপি অনেক শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ১৯৭৯ সালে এ আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করে। সেই অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি।’

মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করছি। এলাকার নেতাকর্মীদের সংগঠিত করেছি। কয়রা-পাইকগাছায় বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। ড. আবদুল মজিদ বলেন, এখানে বিএনপি অগোছালো ছিল। আমি সংগঠিত করেছি। আশা করি দল আমার বিষয়টি বিবেচনা করবে।

জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, ‘কয়রা-পাইকগাছা একসময় জাতীয় পার্টির ঘাঁটি ছিল। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলেই কয়রা এবং পাইকগাছাকে পৃথক করা হয়। আমরা আমাদের অবস্থান ধরে রাখতে এবার ওই আসনে প্রার্থী দেব। দলের হাইকমান্ড আমাকে সেখানে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।’

খুলনার এ আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় পৌনে তিন লাখ। এর মধ্যে শুধু হিন্দু ভোট রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার যুগান্তর

Check Also

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। জুড়ী উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।