প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

ক্রাইমবার্তা রির্পোট:গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কান্তনগর বিণয়ভূষণ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল হকের বিরুদ্ধে দাতা সদস্য অন্তর্ভুক্তিতে অনিয়ম, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রেশন ফি এবং বিদ্যুৎ বিল আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির সঙ্গে যোগসাজশে তিনি এসব অনিয়ম করছেন। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়মের কারণে লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। তার কাছে শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। বিশেষভাবে বিদ্যালয়ে দাতা সদস্য অন্তর্ভুক্তি নিয়ে এলাকায় অসন্তোষ চলছে।

এদিকে, চলতি বছরের মে মাস থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী জানায়, প্রতিজন শিক্ষার্থীকে বছরে ৬০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দেয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমাকে ৩০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়েছে।

এছাড়া দশম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা লাগানোর কারণে ছাত্রছাত্রীরা বিড়ম্বনায় পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর অভিযোগ, শ্রেণিকক্ষে মেয়েদের দিক করেই সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এতে আমাদের স্বাভাবিক চলাফেরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন করার জন্য ২১০ টাকা ফি ধরে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ে চিঠি এসে পৌঁছে। এর চার মাস আগে ৪০০ টাকা ফি ধরে এই বছরেরই ১৬ মে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য বিদ্যালয়ে নোটিশ দেয়া হয়।

ফলে নবম শ্রেণির ৬৩ জন ছাত্রছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন ফি বেশি নেয়া হয়েছে। বোর্ড থেকে চিঠি আসার পর মাত্র একজন ছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবম শ্রেণির এক ছাত্র জানায়, এবার ২১০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি হলেও আমাদেরকে চারশ টাকা দিতে হয়েছে। একই শ্রেণির এক ছাত্রী জানায়, রেজিস্ট্রেশন ফির টাকা জমা দিতে দেরি হওয়ায় আমাকে ৫০০ টাকা জমা দিতে হয়েছে।

সহকারী শিক্ষক রেজা শাহজাহান প্রামাণিক গত এপ্রিল মাসের বেতন পাননি। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকায় আমি প্রধান শিক্ষককে জানিয়েছি, যে বিকেলের একটি ক্লাস নিতে পারবো না। পরদিন স্কুলে এলে আমাকে একটি নোটিশ দেয়া হয়। সেই নোটিশের জবাবও দিয়েছিলাম। বিনা অপরাধে সেই মাসের বেতন আমাকে দেয়া হয়নি।

এছাড়া বিনা কারণে অফিসের পিয়ন ও অন্যান্য শিক্ষকদেরও বেতন বন্ধ করার ঘটনা ঘটেছে। পরে অর্থের বিনিময়ে সমাধান করতে হয়েছে তাদের।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ফাহিমা ও রুনা আক্তার টাকা জমা দিলেও রেজিস্ট্রেশন এখনও করা হয়নি। এর প্রেক্ষিতে ওই শ্রেণিকক্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা জানতে চাইলে বিষয়টি দেখছি বলে এড়িয়ে যান প্রধান শিক্ষক একরামুল হক। তবে তারা টেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছে।

রুনা আক্তার জানায়, ক্লাসের সবার রেজিস্ট্রেশন করা হলেও আমার ও ফাহিমার রেজিস্ট্রেশন এখনও সম্পন্ন হয়নি। এ বিষয়ে একাধিকবার প্রধান শিক্ষক স্যারের কাছে গেলেও কোনো সমাধান পাইনি।

বিদ্যালয়টির অভিভাবক সদস্য আসাদুজ্জামান তুহিন বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয়ের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। দ্রুত এই সঙ্কটের সমাধান করা জরুরি।

এছাড়া গত ১৪ অক্টোবর বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী সালাম মিয়াকে মারধর করেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। এ নিয়ে সালাম মিয়া সাদুল্লাপুর থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবু হোসেন মন্ডল বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাতা সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য ৮টি আবেদন জমা পড়ে। সেদিন বিকেলেই দাতা সদস্য প্রার্থী নাছিরুল ইসলাম তালিকা চেয়ে আবেদন করেন। তাই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় আমি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে আটজন দাতা সদস্য প্রার্থী একটি তালিকা তাকে দিই।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক একরামুল হক  বলেন, বিদ্যালয়ে দাতা সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য ১২টি আবেদন জমা পড়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ে রশিদমূলে টাকা জমাদানকারী দাতা সদস্য প্রার্থী আব্দুল বাকী মন্ডল, রমিছা বেগম, আশরাফুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম বিদ্যালয়ে রশিদমুলে টাকা জমা করেছেন আর আবেদন জমা দিয়েছেন ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে। সহকারী প্রধান শিক্ষক আমার কাছে না জেনে ওই তালিকা দিয়েছেন। এ জন্য তাকে শোকজ করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রওশন আলম মন্ডল  বলেন, সবাই বাতাস খাবে, শুধু প্রধান শিক্ষক বিল দেবে কেন। তাই শিক্ষার্থীদের কাছে বিল নেয়া হচ্ছে। শৃঙ্খলার জন্য সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। অন্য বিদ্যালয়ের চেয়ে আমরা রেজিস্ট্রেশন ফি কমই নিচ্ছি।

এসব বিষয়ে সাদুল্লাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বোরহান উদ্দিন  বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির হাতে অফিস সহকারী সালাম মিয়াকে চরথাপ্পড় মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।জাগো নিউজ

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।