এসপি সুভাসের অট্টালিকা

কুষ্টিয়া: সুভাস চন্দ্র সাহা। ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপার। তিনি একসময় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই আলোচিত পুলিশ সুপার সুভাস চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রীর নামে কুষ্টিয়া শহরে রয়েছে বাড়িসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ। শহরের চৌড়হাস এলাকায় পাঁচ কাঠা জমির ওপর তার একটি দৃষ্টিনন্দন পাঁচতলা বাড়ি এবং আরও পাঁচ কাঠা জমি রয়েছে। কুষ্টিয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনকালে তিনি এ সম্পত্তি কিনেছেন বলে জানা গেছে।
এ সম্পত্তির মূল্য কমপক্ষে চার কোটি টাকা। এতদিন গোপন থাকলেও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ওই পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা দায়েরের পর বিষয়টি সামনে চলে আসে। সুভাস চন্দ্র সাহা কুষ্টিয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন ২০১০ সালে। তিনি এ শহরে প্রায় তিন বছর চাকরি করেন। বেশ কয়েক মাস পুলিশ সুপারের দায়িত্বেও ছিলেন। আর এ সময়ই ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে কুষ্টিয়ায় বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেন তিনি। শহরের চৌড়হাস এলাকার জগতি মৌজায় সিকো নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে সুভাস চন্দ্র সাহা জমিসহ পাঁচতলা বাড়ি, ১৬টি দোকান ও পাঁচ কাঠা জমি ক্রয় করেন। পাঁচতলা এ বাড়িতে আছে ১৪টি ফ্ল্যাট। সব মিলিয়ে এ সম্পদের দাম কমপক্ষে চার কোটি টাকারও বেশি। এ সম্পদ পরে তার স্ত্রী রীনা সাহার নামে দলিল করেন তিনি। বর্তমানে দোকান ও বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
যুবলীগের স্থানীয় কয়েকজন ক্যাডার বাড়ি ও দোকান দেখাশোনা করেন। স্থানীয়রা পুলিশ কর্মকর্তা সুভাসকে না দেখলেও সবাই জানেন বাড়িসহ এ সম্পদ তার। বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাড়ির সামনে চেয়ার পেতে সব সময় পাহারায় থাকে স্থানীয় কয়েকজন ক্যাডার। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বাড়িটির কেয়ারটেকার মজিম উদ্দিন। তবে একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন বাড়ির মালিক পুলিশ সুপার সুভাস চন্দ্র সাহা।
একটি সূত্র জানায়, চৌড়হাস এলাকার সিকুসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এসপির চরম দহরম মহরম ছিল। তাদের যোগসাজশে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান। সিকুর সঙ্গে অর্থ নিয়ে বিরোধ তৈরি হলে বাড়ি ও জায়গার দখল ঠিক রাখতে শহরের সে সময়কার প্রভাবশালী নেতা মোমিনুর রহমান মোমিজের সঙ্গে খাতির গড়ে তোলেন। পরবর্তিতে মোমিজ যৌন সংক্রান্ত ঘটনায় দল থেকে বহিষ্কার হন। এরপর মোমিজ কিছুদিন গা ঢাকা দিলেও সুভাস সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে তাকে প্রকাশ্যে আসতে সহযোগিতা করেন। সুভাসের বাড়ির পিছনেই মোমিজের একটি ফ্যান তৈরির ফ্যাক্টরি আছে। কুষ্টিয়ায় চাকরিরত অবস্থায় তিনি স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে পার্টনারে জমির ব্যবসাও করেন। সে সময় তিনি স্থানীয় কাউন্সিলর মীর রেজাউল ইসলাম বাবুসহ জমির মালিকদের নানাভাবে হয়রানি করেন। তারাও সুভাসের শাস্তির দাবি করেছেন। তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার ব্যাপারে দুদকের তদন্ত শুরুর পর সম্পদ গোপন করতে তিনি তড়িঘড়ি করে কুষ্টিয়ার বাড়িটি সাবেক এক আওয়ামী লীগ নেতার নামে বায়না দেখানো হয়েছে বলে রেজিস্ট্রি অফিস সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থের সন্ধান পাওয়ায় মঙ্গলবার দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করলে এই বাড়ি ও জমির বিষয়টি সবার নজরে আসে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা কীভাবে এত বিপুল সম্পদের মালিক হলেন, তা নিয়ে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি রফিকুল ইসলাম টুকু জানান, দুদক কর্তৃপক্ষ ওই পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার অভিযোগে মামলা করেছে। তবে ওই সম্পদের বাইরে কুষ্টিয়ার এই বিপুল টাকার সম্পত্তির মতো তার আরও সম্পদ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে যাতে কোনো দুর্নীতিবাজ ছাড়া না পেয়ে যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।