নাটোর-২, সদর ও নলডাঙ্গা বিএনপিতে একক প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী দুলু আওয়ামী লীগে ডজন খানেক

মো.রিয়াজুল ইসলাম, নাটোর
নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) জেলা শহর, সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটি জেলার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। বরাবরের মতো এবারো সব দলেরই কেন্দ্রীয় ও জেলার র্শীষ নেতারা এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। ফলে কে পাচ্ছেন মূল দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন সেটা নিয়ে সবার মধ্যেই রয়েছে কৌতুহুল।
এই আসনটিতে গত কয়েক সংসদ নির্বাচনের মতো এবারো বিএনপির একক প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাটোর জেলা সভাপতি এই আসন থেকে তিনবার নির্বাচিত সাবেক এমপি ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। মামলা জটিলতা বা অন্য কোন কারনে তিনি প্রার্থী হতে না পারলে নবম সংসদ নির্বাচনের মতো এবারো প্রার্থী হবেন তারই সহধর্মীনি ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন ছবি। নবম সংসদ নির্বাচনে দুলু প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে না পারায় হঠাৎ করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তার সহধর্মীনি সাবিনা ইয়াসমিন ছবি আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের কাছে অল্প ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন দৌড়ে নেমেছেন দলের প্রায় ডজন খানেক নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন গত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হওয়া তরুন নেতা জেলা আওয়ামী লীগের নতুন সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপি। তার মনোনয়ন দৌড়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন, আওয়ামী লীগের গত আমলের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শরিফুল ইসলাম রমজান এবং জেলা যুবলীগের সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া। মনোনয়ন প্রত্যাশী এসব নেতারা দুই উপজেলার প্রতিটি এলাকায় এবং কেন্দ্রে নেতাদের কাছে লবিং গ্রুপিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাজেদুর রহমান খান, সহ-সভাপতি ও নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি, নাটোর কোর্টের পিপি সিরাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক শেখ, প্রচার সম্পাদক চিত্ত রঞ্জন, মহিলা দলের জেলা সভানেত্রী রতœা আহম্মেদ,নাটোর পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাবেক এমপি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান সেন্টুও মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
তিন লাখ ৩১ হাজার ৮৯৭ জন ভোটারের নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন এই আসনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিএনপিতে কোন দ্বিমত না থাকলেও আওয়ামী লীগে ব্যাপক কোন্দলের কারনে এখানে বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে নিজেদের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন প্রায় এক ডজন নেতা। গত দশম সংসদ নির্বাচনে নাটোর সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তৎকালীন নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল। এমপি হওয়ার পর তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন। অভিযোগ রয়েছে তিনি দলীয় সিনিয়র নেতা কর্মিদের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে ইচ্ছামত দলকে পরিচালিত করেন। তার মতের বিরোধীদের নানাভাবে হয়রানী সহ হামলা ও নির্যাতন করে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টার অভিযোগ করেন দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই। ২০১৪ সালে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শফিকুল ইসলাম শিমুল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার সময় তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি ছিলেন নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান। দলের কাউন্সিল অধিবেশনে কারচুপি করে তাকে হারানোর অভিযোগ করে শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, যেখানেই টাকা সেখানেই এমপি শিমুল, স্কুলের নাইটগার্ড থেকে শুরু করে স্কুল কলেজের শিক্ষক, সরকারীভাবে ধানচাল গম ক্রয়ে অনিয়মের মাধ্যমে এবং টেন্ডারের কাজ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে এমপি শিমুল কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। যার তথ্য প্রমাণ তার কাছে রয়েছে। তিনি বলেন, দলীয় কর্মকান্ডে সাবেক মন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাজেদুর রহমান খান, নাটোর পৌরসভার বর্তমান মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি উমা চৌধুরী জলিসহ সিনিয়র রাজনীতিবিদদের দলীয় কার্যক্রমে ডাকা হয়না। তিনি বিএনপি থেকে আগত হাইব্রিড নেতাকর্মী পরিবেষ্ঠিত অবস্থায় দলকে পরিচালিত করেন। তিনি বলেন, এমপি শিমুলের এহেন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সবাই একত্র হয়েছেন। এমপি শিমুল বিরোধী এসব নেতাদের এক সংগে বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশ গ্রহণ করতেও দেখা যাচ্ছে। এমপি শিমুলের কর্মকান্ডের বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে লিখিত ভাবে বিস্তারিত জানানো হয়েছে বলেও এই নেতা জানিয়েছেন।
সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার বলেন, ক্যাডাররা তার বাড়ীতেই হামলা চালিয়ে তার মেয়েকে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দিয়েছে। তার জামাই ও আরেক মেয়েকেও মারধর করা হয়েছে। তিনি বলেন সবাই জানে লক্ষ লক্ষ টাকা না দিলে এখন চাকুরী হয়না। কিন্তু আমার সময়ে এমন অভিযোগ কেউ করতে পারবে না। বর্তমানে এমপি শিমুল যে ধারার রাজনীতিতে আছেন সেটা সমর্থন যোগ্য নয়। নাটোরে আওয়ামী লীগের ভেতরে যে নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে তা থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
১৯৯০ সালে নাটোর সদর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে রাজনীতি শুরু করা নাটোর জেলা যুবলীগের সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় ভয়ে শিমুল এমপি হওয়ার জন্য মনোনয়ণ পত্র জমা দিতে যেতে পারেনি, সেদিন আমি নিজে আব্দুল মালেক শেখকে সাথে নিয়ে গিয়ে জমা দিয়েছি। আমি ছিলাম বলেই সে আজ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক। জেলা শহরের মধ্যে আমার পরিবার ঐতিহ্যবাহী ধনী পরিবার, আমাকে টাকার জন্য চিন্তা করতে হয় না। আমি নাটোর জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। কিন্তু মতের মিল না পড়ায় ক্যাডার দিয়ে এমপি শিমুল মালিক সমিতি অফিস দখল করে তার ছোট ভাই সাগরকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বসায়। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের এখন সে আর চিনে না। হাইব্রীড নেতাদের নিয়ে চলে। ফলে তিনি এবার পরিবর্তন চান। তিনি মনে করেন, বিএনপির প্রার্থী সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে হারানোর ক্ষমতা তিনি ছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আর কেউ রাখেন না।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস বলেছেন, আওয়ামী লীগের গত আমলের শেষ দিকে নাটোরে বিএনপি-জামায়াত যে আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে ছিল, তখন নাটোরে আওয়ামী লীগের আহাদ আলী সরকার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তিনি সেই সন্ত্রাস বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে তখনকার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুল সেই সন্ত্রাস বন্ধ করেছেন, এখন আর বিএনপি-জামায়াত রাস্তায় বেরুতে পারে না। তারা বলেন, শিমুল এমপি হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ৬৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে নাটোরে গোপন ভোটে জেলা সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচন হয়। সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে শিমুল, দলের জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সব কমিটি সুসংগঠিত করেছেন। অডিটোরিয়াম, ইনডোর স্টেডিয়াম ও টেকস্টাইল ইন্সটিটিউটসহ হাজারো উন্নয়ন কাজ করেছেন, তাই যে যাই বলুক দলের মনোনয়ন শিমুলই পাবেন।
এদিকে ২০দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর নাটোর জেলা আমীর অধ্যাপক মোঃ বেলালুজ্জামান জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী সকল আন্দোলন সংগ্রামে নাটোরে জামায়াতে ইসলামী বলিষ্ট ভুমিকা পালন করেছে। সাধারন ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে তাই নাটোরের চারটি সংসদীয় আসনেই তাদের দলীয় চারজন নেতাকে দলীয় ভাবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে এর মধ্যে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া)আসনে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক তাসনীম আলম, নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী অধ্যাপক ড. মীর মোঃ নূরুল ইসলাম, নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে জেলা আমীর অধ্যাপক মোঃ বেলালুজ্জামান এবং নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর)আসনে দলের জেলা সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খানকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এসব নেতারা নিজ নিজ এলাকায় সভা সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনী কাজ করছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নাটোর জেলা সেক্রেটারী মাওলানা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী জানান, কোন দলের সাথে জোট না করে তার দল একক ভাবে নির্বাচন করার জন্য নাটোরের আলোচিত মুখ ইসলাম বিরোধী সব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ব্যক্তিত্ব সংগঠনের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আমেল খান চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় সংগঠন সদর আসনে মনোনয়ণ দিয়েছেন।
নাটোর থেকে তারেক রহমানকে দিয়ে গ্রামমার্চ শুরু করে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিএনপির একক প্রার্থী ু দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাটোর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন, আমিও তিনবার এমপি এবং টানা পাঁচ বছর মন্ত্রী ছিলাম, বর্তমানে যা যা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে কেউ এমন কোন অভিযোগ করতে পারবে না। আমি এক সদর উপজেলাতেই এক সাথে ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও করেছিলাম, সবাই জানে কারো তথন একটাকাও খরচ হয়নি অথচ এখন পিয়ন থেকে শিক্ষক নিয়োগ প্রতি ক্ষেত্রেই নাকি সংসদ সদস্যদের লাখ লাখ টাকা দিতে হয় এর চাইতে লজ্জার আর কি আছে ? তিনি বলেন, আমি নাটোরের গ্রামগঞ্জে শত শত কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ব্রীজ কালভার্ট করেছি, অবহেলিত হালতি বিলে কংক্রিটের রাস্তা করেছি, কাারিগরি প্রশিক্ষন কেন্দ্র করে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি, নাটোরে শিশু পার্ক করেছি, দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের বিপদে পাশে থাকার চেষ্ঠা করেছি, ফলে নাটোরের জনগন আমার পাশে আছে। তাই ভীত হয়ে সরকার আমার বিরুদ্ধে শতাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। দুলু বলেন, তারপরও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে প্রার্থী যেই হোক, জেলার সব আসনেই বিএনপি মনোনিত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন এতে কোন সন্দেহ নেই।
নাটোর-১ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের এমপি ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুল নিজের দলের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সন্ত্রাসের জনপদ নাটোরে আমি শান্তি ফিরিয়ে এনেছি। বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য বন্ধ করেছি, দলকে সংগঠিত করেছি, আমি নাটোরে শতকোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি। আমার আমলেই সর্ব প্রথম নাটোরের সকল ইউনিয়ন ও পৌরসভায় আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছি। ফলে আমি শতভাগ আশাবাদী, দল আমাকেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দিবে। তিনি বলেন, দলের ভিতরের দুজন ব্যক্তি যাদের চেয়ারে বসার যোগ্যত্যা ছিলনা তাদের চেয়ার দিয়েছি, তারাই এখন দলের বিপক্ষে কাজ করছে। এরাই সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে আমার বিরুদ্ধে বড় বড় খবর লেখায়। যুবলীগ সভাপতির অভিযোগ অস্বীকার করে শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেছেন, আমিই তাকে মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক করেছিলাম। পরে মালিক সমিতিতে ইয়াবার ব্যবসা শুরু হলে বাস মালিকেরাই তাকে সরিয়ে দেয়, আমি তাকে সরাই নাই।

 

 

 

নাটোর-৪, বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর
আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে নতুন মুখের ছড়াছড়ি
মো. রিয়াজুল ইসলাম, নাটোর
নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা কৌশলে মাঠে নেমে পড়েছেন। জনগণের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। বিলবোর্ড, পোষ্টারিং, ব্যানার, মোবাইলে ম্যাসেজ ও ফেসবুকের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন দুই উপজেলার প্রায় কুড়িজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া কুলখানি ও বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমেও ভোটারদের সাথে চলছে কৌশলী গণসংযোগ। এবার নাটোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে পুরাতন একাধিক প্রার্থীর পাশাপাশি নতুন মুখের ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস। তার অবর্তমানে যেন তার পরিবারের কেউ এই আসন থেকে মনোনয়ণ পান সেজন্য এখনই প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন তার মেয়ে কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি। এ ক্ষেত্রে বাবা-মেয়ের বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবেন বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী এবং গুরুদাসপুর পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা। এছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রতন সাহা, প্রয়াত এমপি রফিক সরকারের ছেলে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক অ্যাডভোকেট আরিফ উদ্দিন সরকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ আলী মোল্লা ও কৃষকলীগ নেতা জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নাটোর জেলা সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াহাব। এ সব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিভিন্ন সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাথে যোগাযোগ করে চলেছেন।
অপরদিকে, বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোঃ মোজাম্মেল হক এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তবে তার মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি দলের দু:সময়ে সব আন্দোলন সংগ্রামে জোর তৎপরতা চালানো নেতা গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ। গুরুদাসপুরের বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেছেন, দলের দুঃসময়ে যখন বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলা-মামলার শিকার হয়েছে তখন একমাত্র আব্দুল আজিজ চেয়ারম্যানরই তাদের পাশে ছিলেন, তাই আগামী নির্বাচনে তিনিই মনোনয়ন পাওয়ার প্রকৃত হকদার। তাছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার আগে টানা ২০বছর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করায় উপজেলার প্রায় সব জনসাধারনের সাথে তার রয়েছে গভীর সর্ম্পক। ফলে তাকে প্রার্থী করলেই বিএনপির বিজয় সহজ হবে।
আসনটির দুটি উপজেলার মধ্যে বড়াইগ্রাম উপজেলায় ভোটার সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এবার বড়াইগ্রাম থেকে একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। এর মধ্যে বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইসাহাক আলী যিনি পর পর দুই বার প্রথমে বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পরে দুইবার বড়াইগ্রাম পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় দুই উপজেলাতেই তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। সে কারণে তার সমর্থকেরা এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে তাকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জন গমেজ, বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল কাদের মিয়া, সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লা নুর বাবুর সহধর্মিণী মহুয়া নুর কচি নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি জনসাধারণের সাথে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোজাম্মেল হক গত ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সরকারের সময় থেকে রয়েছেন একেবারে নিস্কিয়। দলেও এখন তার কোন পদ নেই। মাঝে মাঝে দেশের বাহিরে থাকলেও বেশির ভাগ তার সময় কাটে ঢাকার একাধিক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে। রাজনীতিতে আসার আগেই এনজিও ব্যক্তিত্ব হিসেবে নাটোর-৪ আসনের দুটি উপজেলাতেই তিনি নিজের নামে গড়ে তুলেছেন বেশ কয়েকটি স্কুল কলেজ। সংসদ সদস্য হওয়ার পরও উন্নয়ন কাজ করেছেন। হঠাৎ গত ১১ বছর থেকে রয়েছেন নেতাকর্মীও এলাকা ছাড়া। নিজের অনুসারীদের নিয়ে দু একটি ইফতার মাহফিল করা ছাড়া এর মধ্যে তার কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। তাছাড়া দলের জেলা বা উপজেলা নেতৃবৃন্দের সাথেও তার তেমন কোন সু সর্ম্পক নেই বলেই প্রচারনা রয়েছে। এরই মধ্যে মারা গেছেন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর সংসদ সদস্য ও বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একরামুল আলম। বিগত নির্বাচন গুলোতে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইতেন সাবেক এই দুই সংসদ সদস্য। এবার একজন মৃত অন্যজন রয়েছেন একেবারেই আলোচনার বাহিরে। ফলে এ আসনে বিএনপির এবার কে দলীয় প্রার্থী হতে পারেন তা নিয়ে সর্ব মহলেই রয়েছে জোরালো আলোচনা। দলের কিছু নেতাকর্মী তাই মনে করেন স্থানীয় ভাবে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন না করা গেলে প্রার্থী হতে পারেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠণিক সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী ও নাটোর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন দলের জেলা সাধারন সম্পাদক নাটোর চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মোঃ আমিনুল হক নিজেও। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠণিক সম্পাদক সাবেক এমপি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল কাশেম সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি নানা কর্মকান্ডের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দুবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সাধারন মানুষের সাথে তার ভাল আচরনের বিষয়টি এখনো দুই উপজেলার মানুষের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।
অন্যদিকে নাটোর জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারী বর্তমানে সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান ২০দলীয় জোট বা জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের নিবন্ধন নিয়ে জটিলতার কারনে প্রয়োজনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হলেও তার নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। নাটোর জেলার মধ্যে এই আসনে জামায়াতের দলীয় অবস্থান ভাল থাকায় তিনিও ভাল ভাবেই নির্বাচনী প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুরে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশসহ গণ সংযোগ করে যাচ্ছেন। এছাড়া জাসদের জেলা সাধারণ সম্পাদক ডিএম আলম নির্বাচন করার লক্ষ্যে গণসংযোগ করছেন।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, নাটোর-৪ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের সাথে রয়েছে বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরোধ। দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এমনকি দুটি উপজেলাতেই অভ্যন্তরীন দ্বন্ধের কারণে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গুরুদাসপুর পৌর মেয়র শাহ নেওয়াজ আলী মোল্লা অভিযোগ করেন, দলীয় বিরোধের জের ধরে এমপি কুদ্দুসের নির্দেশে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায় ও লাঠিপেটা করে। এ ঘটনায় মেয়র সহ কয়েকজন দলীয় কর্মি আহত হন। শুধু তাই নয় শাহনেওয়াজ মোল্লা ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা। সে মামলায় তাকে আটক করে পুলিশ জেলেও পাঠিয়েছিল। তিনি বলেন, এমপি আব্দুল কুদ্দুস দুই উপজেলার সকল স্কুল ও কলেজে তাঁর আত্মীয় স্বজনকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। দলীয় ত্যাগী নেতা কর্মিদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এসব নানা কারণে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও এর সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে গুরুদাসপুর এলাকায় তাকে বার বার অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়। মেয়র শাহ নেওয়াজ আরো অভিযোগ করেন, এমপি কুদ্দুস দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে অন্য একজনকে গুরুদাসপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে সমর্থন দিয়ে সেই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করে।
বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা: সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, সম্প্রতি বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ উপ-নির্বাচনে দল তাকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিলেও স্থানীয় এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক কুদ্দুস তার বিরুদ্ধে এবং বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। এমনকি যারা তার নির্বাচনে দলের পক্ষে কাজ করেছেন তাদের নানাভাবে হয়রানী করাসহ মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে আব্দুল কুদ্দুস সমর্থকদের হামলায় বড়াইগ্রাম এলাকায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সহ কমপক্ষে ৫০ জন কর্মি আহত হয়েছেন। বর্তমানে নৌকার পক্ষে কাজ করার অপরাধে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মিদের বিরুদ্ধে প্রায় ২৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক কুদ্দুস এমপি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিয়োগ বাণিজ্য একটি মুখরোচক অভিযোগ। এ ধরণের অভিযোগ শুধু মিথ্যা তাই নয়, এগুলো রুচিহীন এবং ষড়যন্ত্রমুলক রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, এ আসন থেকে আমি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। এলাকার লোকজন ভালবাসে বলেই আমাকে বার বার নির্বাচিত করেছেন। যে যাই বলুক আগামী দিনেও তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন এবং বিজয়ের বিষয়েও তিনি শতভাগ আশাবাদী। তিনি এলাকার দুটি ডিগ্রী কলেজ ও একটি হাইস্কুল সরকারি করাসহ স্কুল কলেজ রাস্তা ঘাট ব্রীজ কালভার্ট সহ নানামুখী উন্নয়নের মাধ্যমে পশ্চাদপদ বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর এলাকার প্রভূত উন্নয়ন করেছেন। তিনি চেষ্টা করেছেন সকল শ্রেণির মানুষকে সাথে নিয়েই উন্নয়ন সহ দলীয় আদর্শ বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু দলের মধ্যে সুবিধাবাদী কিছু মানুষ বরাবরই বিরোধিতা করে তাই এখনও করছে।

তাং ০২.১১.১৭
নাটোর, মোবাঃ ০১৭১৩-৭৭৫৯৮০

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Check Also

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। জুড়ী উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।