বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ৪ আসামির রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া বহুল আলোচিত পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত চার আসামির রায় স্থগিত চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

আজ সোমবার সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে এ আবেদন করা হয় বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান।

বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাইফুল ইসলাম সাইফুল ও কাইয়ুম মিয়া টিপুকে খালাস দেন হাইকোর্ট। আর একই মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম মোস্তফা ও এ এইচ এম কিবরিয়াকেও খালাস দেওয়া হয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান জানান, বিশ্বজিৎ দাস হত্যায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর আপিল করা হয়েছে।

এর আগে গত ১ নভেম্বর মঙ্গলবার বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের ৮০ পৃষ্ঠার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। গত ৬ আগস্ট দেওয়া রায়ে বিচারপতি মো: রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ দু’জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। ২১ আসামির মধ্যে চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। পলাতক বাকি ১১ আসামি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি হাইকোর্ট।

বিচারিক আদালতের রায়ে ফাঁসির আদেশ পাওয়া ৮ জনের মধ্যে রফিফুল ইসলাম শাকিল ও রাজন তালুকদারের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রয়েছে। তাদের মধ্যে রাজন পলাতক। অন্য ছয়জনের মধ্যে মাহফুজুর রহমান নাহিদ, ইমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন ও মীর মোহাম্মদ নূরে আলম লিমনের সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। লিমন পলাতক থাকলেও অন্য তিনজন কারাগারে আছেন।

হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, মূলত এ ঘটনার সঙ্গে শাকিল ও রাজন দায়ী। তারা দুজনই অস্ত্র দিয়ে মারাত্মক আঘাত করেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যার করার ঘটনাটি ছিল একটি বর্বরতা। তাদের এই অপরাধের ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং গোটা যুব সমাজের সঙ্গে মানানসই না। এ কারণে তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়ার ক্ষেতে ন্যূনতম সহানুভূতি দেখাতে পারি না। এটা কোন পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নয়। হঠাৎ বোম ব্লাস্টের কারণই বিশ্বজিত হত্যার শিকার হয়। নাহিদ, এমদাদ, শাওন, লিমন হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলেও তারা মারাত্মকভাবে বিশ্বজিতকে আঘাত করেনি। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের অতীত ইতিহাস পরিষ্কার। এদের মধ্যে নাহিদ শাওন ও এমদাদ পাঁচ বছর ধরে কনডেম সেলে রয়েছে। তারা স্বভাবগত অপরাধী নয়। এ কারণে ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ তিনজনের সাজা কমিয়ে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া ন্যায়সঙ্গত। একই কারণে নুরে আলম লিমনকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া যুক্তিযুক্ত হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এই ভূমিতে গৌরবোজ্জ্বল ছাত্র রাজনীতির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। যা কিছু যুবক ছাত্ররাজনীতির নামে অপরাধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদের কারণে মারাত্মকভাবে কলঙ্কিত হচ্ছে। কোনো কোনো সময় তারা নিজ নিজ এলাকায় নিরঙ্কুশ প্রভাব বিস্তারের জন্য ন্যাক্কারজনকভাবে ক্ষমতা ও পেশিশক্তি প্রদর্শন করছে। তথাকথিত কিছু রাজনৈতিক নেতা তাদের নিজেদের স্বার্থে এদেরকে পৃষ্টপোষকতা দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন এবং বিরোধীদলীয় দায়িত্বশীল জাতীয় নেতাদের কাছে প্রত্যাশা এই, ছাত্ররাজনীতির এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তারা নীতি নির্ধারণ করবে। বিরোধী দলকে দমন করার নামে ছাত্র বা যুবসমাজকে উৎসাহিত করবে না।

পুলিশ এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ হবে বিরোধী দলীয় রাজনীতির নামে করা বেআইনি কার্যক্রম বা সন্ত্রাস প্রতিরোধ করা।

আমাদের ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় অস্বচ্ছ তদন্ত কার্যক্রম প্রতিরোধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে সমাজে বাস করি সেখানে টাকাওয়ালা ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে দায়মুক্তি পাচ্ছে এবং ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে খুব সহজেই তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে যায়।

বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম সাইফুল ও কাইয়ুম মিয়া টিপু বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। আর গোলাম মোস্তফা ও এ এইচ এম কিবরিয়াকে দেওয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যে ১১ আসামির বিষয়ে হাইকোর্ট কোনো মন্তব্য করেননি, তারা হলেন- খন্দকার মো: ইউনুস আলী ইউনুস, তারিক বিন জহুর তমাল, মো: আলাউদ্দিন, মো: ওবায়দুল কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন ইমরান, আজিজুর রহমান আজিজ, আল আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন মোশাররফ।

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, পলাতক আসামিরা গ্রেফতার হলে বা আত্মসমর্পণ করলে তাদের বিষয়ে পরবর্তী বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এ মামলায় আটটি আপিল ও সাতটি জেল আপিল করেন আসামিরা। এসব আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি একসঙ্গে নিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।

২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত পুরনো ঢাকার দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবিএম নিজামুল হক এ রায় ঘোষণা করেন।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগ ক্যাডাররা নির্মমভাবে খুন করে দর্জি দোকানী বিশ্বজিৎ দাসকে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দলবেঁধে নিরীহ পথচারী বিশ্বজিৎকে নির্মমভাবে কুপিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। ওই দৃশ্য তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। এ হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ছাত্রলীগের ২১ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই ২১ আসামির মধ্যে আটজন কারাগারে এবং বাকিরা পলাতক রয়েছে।

Check Also

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে: স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইয়ে রাষ্ট্রপতি

মহান স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।