হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে সৌদি যুবরাজ মুকরিন নিহত

ইয়েমেন সীমান্তের কাছে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় এক সৌদি প্রিন্স নিহত হয়েছেন। রোববার তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয় বলে রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে কয়েকজন প্রিন্স এবং মন্ত্রীকে গ্রেফতার এবং ইয়েমেন থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র সৌদি আরব ভূপাতিত করার খবরের মধ্যে এ তথ্য প্রকাশ করা হলো। বিবিসি এবং আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ খবর প্রকাশ করেছে।

নিহত প্রিন্সের নাম মনসুর বিন মাকরিন। তিনি ছিলেন আসির প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর। তার বাবা ছিলেন সাবেক ক্রাউন প্রিন্স। হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় তাতে আরো কয়েকজন কর্মকর্তা ছিল। তবে কী কারণে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে তা জানানো হয়নি।

মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, সৌদি আরবজুড়ে ধরপাকড়ের খবর পাওয়ার পর প্রিন্স মনসুর দেশ থেকে পালাচ্ছিলেন। তিনি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরাগভাজন ছিলেন বলে জানা গেছে।

সৌদিতে ১১ প্রিন্স, ৪ মন্ত্রী ও কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী গ্রেফতার

দুর্নীতির অভিযোগে সৌদি আরবে ১১ প্রিন্স, চারজন মন্ত্রী ও ডজনখানেক সাবেক মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বিশিষ্ট ধনকুবের প্রিন্স ওয়ালিদ বিন তালাল রয়েছেন বলে জানা গেছে। সৌদি ন্যাশনাল গার্ডের প্রধানের পদ থেকে প্রিন্স মিতআব বিন আবদুল্লাহকে সরিয়ে খালেদ বিন আইয়াফকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আবদুল্লাহ বিন সুলতান বিন মোহাম্মদ আল সুলতানকে এবং অর্থমন্ত্রী আদেল আল ফাকিহসহ বেশ কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।
আদেল আল ফাকিহকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-তোইজরিকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে সৌদি বাদশাহ এক ফরমান জারি করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে নতুন দুর্নীতি দমন কমিটি গঠন করেন। নতুন কমিটি গঠিত হওয়ার পরপরই তাদের গ্রেফতার করা হয়।

সৌদি মালিকানাধীন আল আরাবিয়া টেলিভিশনে বলা হয়েছে, আটককৃতদের মধ্যে চারজন বর্তমান ও বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী রয়েছেন। লোহিত সাগর উপকূলীয় শহর জেদ্দায় ২০০৯ সালের বন্যা নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। এই তদন্তের অংশ হিসেবেই তাদের আটক করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাষ্ট্র পরিচালিত সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের জানমালের সুরক্ষা প্রদান ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।

আর রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, যুবরাজের নেতৃত্বে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিটিকে গ্রেফতারি পরোয়ানার পাশাপাশি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারিরও মতা দেয়া হয়েছে। আলাদা আদেশে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সৌদি ন্যাশনাল গার্ড ও নৌবাহিনীর শীর্ষ পদেও পরিবর্তন এনেছেন বাদশাহ সালমান।

এর মধ্যে ন্যাশনাল গার্ডবিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে প্রিন্স মিতআব বিন আবদুল্লাহকে সরিয়ে খালেদ বিন আইয়াফকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আদেল আল ফাকিহর বদলে এসেছেন ওই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মোহাম্মদ আল তোইজরি। নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আবদল্লাহ বিন সুলতান বিন মোহাম্মদ আল সুলতানকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
সৌদি আরবের মরহুম সাবেক বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের ছেলে মিতআবকে এক সময় সিংহাসনের অন্যতম দাবিদার বলে মনে করা হতো। রাজপরিবারে আবদুল্লাহর বংশধরদের মধ্যে কেবল তিনিই সৌদি সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে ছিলেন। প্রতিরামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা যুবরাজ মোহাম্মদ এই রদবদলের ফলে পুরো দেশের সব নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণ পেলেন।

সম্প্রতি রিয়াদে এক অর্থনৈতিক সম্মেলনে তিনি বলেন, সৌদি আরবের আধুনিকায়নের েেত্র তার পরিকল্পনার মূলমন্ত্র হবে ইসলামের উদারনীতিতে ফিরে আসা। চলতি বছর জুনে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের সংস্কারমূলক পদপে নিচ্ছেন যুবরাজ মোহাম্মদ।
বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশ সৌদি আরবে আরো বেশি করে বিদেশী ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে দেশটির যুবরাজ একটি উচ্চাকাক্সী অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মন্ত্রিপরিষদে এ রদবদল যুবরাজ মোহম্মদ বিন সালমানকে দেশটির নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে সহায়তা করবে, যা দীর্ঘ দিন ধরে শাসক পরিবারের আলাদা আলাদা মতা শাখা থেকে পরিচালিত হতো।

এই ঘটনায় সৌদি আরবে তোলপাড় : বিবিসি আরো জানায়, সৌদি আরবে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ১১ জন প্রিন্স, চারজন বর্তমান মন্ত্রী এবং প্রায় ডজনখানেক সাবেক মন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পর দেশটিতে শুরু হয়েছে তোলপাড়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে সৌদি বিলিয়নিয়ার প্রিন্স আল ওয়ালিদ বিন তালাল রয়েছেন। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি প্রিন্সের সাথে কোনো যোগাযোগও করা যায়নি।
তবে, ইতোমধ্যেই তার মালিকানাধীন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কিংডম হোল্ডিংসের শেয়ারের মূল্য ১০ শতাংশ পড়ে গেছে।

সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জে দিনের শুরুতে ব্যবসায়িক লেনদেনে ধস নেমেছে। সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জ আরব বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থার একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, অভিযানের ভয়ে ব্যক্তিগত বিমান নিয়ে পালানোর সময় জেদ্দায় কয়েকটি জেটের উড্ডয়ন আটকে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, ওই জেটগুলোতে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পালিয়ে যাচ্ছিলেন।

এই ধরপাকড়ের প্রতি সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতারা সমর্থন জানিয়েছেন। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাদের কাউন্সিল এক টুইট বার্তায় বলেছে, দুর্নীতি দমন অভিযান সৌদি আরবের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুর্নীতিবিরোধী এই ধরপাকড় এবং দু’জন মন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ার পর, সৌদি আরবের নিরাপত্তাব্যবস্থার ওপর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একক কর্তৃত্ব সুসংহত হলো।
কিন্তু ‘হাই প্রোফাইল’ লোকজনকে আটকের খবরে দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।

সৌদি আরামকোকে মার্কিন শেয়ার বাজারভুক্ত করার আহ্বান ট্রাম্পের

আলজাজিরা

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোকে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার ওয়ালস্ট্রিটে তালিকাভুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল রোববার ট্রাম্প নিজেই এ কথা জানিয়েছেন। জাপান যাওয়ার সময় এয়ারফোর্স ওয়ানে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমি সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সাথে কথা বলেছি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরামকোর শেয়ার বিক্রির বিষয়টি তিনি বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জোরালোভাবেই চাই তারা নিউ ইয়র্ক শেয়ার বাজার, এনএএসডিএকিউ কিংবা আমাদের অন্য কোনো শেয়ার বাজারে তারা আসুক’। তিনি বলেন, মামলা ঝুঁকি কিংবা অন্যান্য ঝামেলার কারণে আরব রাষ্ট্রটি যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে আসতে চাচ্ছে না যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তেল বাণিজ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান আরামকো হচ্ছে সৌদি অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। সৌদি আরামকো নামে পরিচিত কোম্পানিটির পুরো নাম আরব-আমেরিকান কোম্পানি। সৌদি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী বছর প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়বেÑ যা হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও। এর সম্ভাব্য মূল ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার।

এর আগে শনিবার ট্রাম্প এক টুইটার পোস্টে লিখেছেন, ‘নিউ ইয়র্ক শেয়ার বাজারে সৌদি আরামকোর আইপিও আসার বিষয়টি দারুণ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ’ সৌদি আরবের অর্থনৈতিক ভিশন ২০৩০-এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ আরামকোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার। এর মাধ্যমে দেশটি চাইছে অর্থনীতিতে তেল নির্ভরতা কমিয়ে আনতে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের জন্য এ রকম একটি চুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

 

 

 

 

সৌদি যুবরাজ মনসুর বিন মুকরিন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

রোববার দেশটির আসির প্রদেশের দক্ষিণে ইয়েমেনের সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর বিবিসির।

প্রিন্স মনসুর বিন মুকরিন আসির প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন।0

 

Please follow and like us:

Check Also

এদেশের সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি: কাদের

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এদেশের সাম্প্রদায়িকতার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।