মংডু থেকে ভেলায় চড়ে ৫২ রোহিঙ্গা টেকনাফে

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:মিয়ানমারের সেনানিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে এখনো রাখাইন রাজ্যে বাপ দাদার বসতভিটার মায়া ত্যাগ করে বাংলাদেশে আসছেন রোহিঙ্গারা।

আজ বুধবার সকাল ৯টার দিকে মংডু থেকে ভেলায় চড়ে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে ৫২ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু। তাদের মধ্যে ২২টি শিশু, ১৭ জন নারী এবং ১৩ জন পুরুষ।

ভেলায় চড়ে পালিয়ে আসা বুচিডং শহরের চিংঅং গ্রামের বাসিন্দা আবদুল্লাহ বলেন, পালানোর জন্য নৌকা না পেয়ে গত চার দিন ধরে প্লাস্টিকের জারিকেন ও বাঁশ দিয়ে একটি ভেলা তৈরি করা হয়। পরে ওই ভেলায় ৫২ জনকে নিয়ে মংডু শহরের ধংখালি গ্রাম থেকে রাত ৩টার দিকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেন তারা। বৈঠা চালিয়ে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে সকাল ৯টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ায় পৌঁছান। পরে বিজিবির সদস্যরা তাদের উদ্ধার করেন।

তিনি আরো বলেন, রাখাইনে সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী রাখাইন যুবকদের অত্যাচারে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। গত কয়েক মাসে অনেকে বাংলাদেশে আসতে পারলেও অনেকে আটকা পড়েছেন। বর্তমানে নৌকার সংকট দেখা দেয়ায় নিরুপায় হয়ে ভেলা তৈরি করে চলে এসেছি। বাংলাদেশে অন্ততঃ জীবনটা বাঁচাতে পারব বলে আশা করছি। ওপারে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন।

টেকনাফ-২ বিজিবি’র অধিনায়ক লে: কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম বলেন, সকালে খবর পেয়ে ৫২ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। তাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে জড়ো করে রাখা হয়েছে। তাদের সাথে ইয়াবা, অস্ত্র ও অবৈধ পণ্য আছে কিনা তল্লাশি করার পর নির্ধারিত স্থান উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হবে।

তিনি আরো বলেন, গত কয়েক দিন ধরে জারিকেনের সাহায্যে বেশ কিছু যুবক নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। ভেলা তৈরি করে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার ঘটনা এটাই প্রথম। অনেকেই বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্পে ঠাঁই হলেও, এখনো অনেক রোহিঙ্গা নাফ নদীর সৈকতের ওপারে আটকে আছেন।

রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণ ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা কমে এলেও, নির্যাতনের ধরণ পাল্টিয়েছে সেনাবাহিনী। সহিংস আক্রমণের পথ পরিহার করে খাদ্য অবরোধ করে রাখছে রোহিঙ্গাদের। রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে বেপারি, খরিদদার ও হকার আসা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। রোহিঙ্গা দোকানিদেরও মালামাল কিনতে বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি সাধারণ রোহিঙ্গাদের হাটবাজারে যেতেও বারণ করা হচ্ছে। ফলে তীব্র খাদ্য সংকটের মুখে আরাকান ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। গত এক সপ্তাহে নতুন করে প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্টে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের কড়াকড়ির কারণে রোহিঙ্গারা নৌকা যোগে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারলেও উখিয়ার আনজুমান পাড়া সীমান্ত দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করে চলছেন তারা। কিছু রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁতরে নাফ নদী পার হয়েও বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। গত শনি ও রোববার আরো ২৮ জনসহ এ পর্যন্ত ৬৭ জন রোহিঙ্গা প্লাস্টিকের জারিক্যান বুকে বেঁধে সাঁতরে নাফ নদী পার হয়ে শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছেছেন।

সাতরিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবকেরা জনিয়েছেন, এখন বাংলাদেশের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেছেন বুচিডং ও রাচিডং এলাকার রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার সীমান্ত উপকুলীয় ধাওনখালীর সৈকতে তিন শতাধিক রোহিঙ্গা আটকে আছেন। তারা সেখানে গত আড়াই মাস মাস ধরে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। রোদে পুড়ে, ঝড়ে ভিজে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে অনেক শিশু ও নারী। আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের অর্থ না থাকায় তারা নদী পার হতে পারছেন না। এছাড়া খাদ্য ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিপন্ন হচ্ছে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের জীবন।

Please follow and like us:

Check Also

কলারোয়া  উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি আবুল কাশেমের ইন্তেকালঃ বঙ্গবন্ধু বিশেষ সুপারিশে  যিনি কারা মুক্ত হন

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।