সংস্কার কাজে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় ১৬২টি কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে অ্যালায়েন্স

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:সংস্কার কাজে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় ১৬২টি কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি। এ পোশাক কারখানাগুলো জোটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ওয়ালমার্ট, টার্গেট, গ্যাপ, জেসিপ্যানিসহ ২৯টি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পোশাক তৈরির ক্রয়ের আদেশ পাচ্ছে না।

অ্যালায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি এ তথ্য জানান। বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স চতুর্থ বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যালায়েন্সের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ স্কট লারসেল, ডেপুটি ডিরেক্টর পল রিগবি, ডিরেক্টর অব অপারেশনস কামরুন্নেসা বাবলি।
অ্যালায়েন্স অধিভুক্ত ২৩৪টি কারখানা সংশোধনী কর্মপরিকল্পনায় মেরামত কাজ শেষ করেছে জানিয়ে জেমস এফ মরিয়ার্টি বলেন, ‘আমাদের মেরামত কাজের ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। যার ভেতরে ৮০ শতাংশ উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেরামত কাজ (যেমন ফায়ার ডোর স্থাপন এবং কলাপসিপল গেট সরিয়ে ফেলা) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর যেসব কাজ বাকি রয়েছে সেগুলো ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হবে।’
তিনি বলেন, ‘কারখানা মালিকরা যে কঠোর পরিশ্রম করছেন, তার সুফল তারা এখন পাচ্ছেন। আগামী বছর অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে। তখন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।’
তিনি জানান, একটি স্বাধীন ‘প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো’র হাতে আমাদের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চাই। যেখানে বাংলাদেশ সরকার, আইএনও, বিজিএমইএ এবং অন্যান্য অংশীদাররা থাকবে।
কারখানার নিরাপত্তা বাড়ানোর কারণে পোশাক মালিকদের ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বাড়লেও তারা সে অনুযায়ী আমেরিকার বাজারে দাম পাচ্ছেন না সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে মরিয়ার্টি বলেন, ‘এখন ট্রানজিশনাল পিরিয়ড চলছে। বিদেশি বায়াররা উপলব্ধি করছে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নত হয়েছে। আমি আশা করি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকলে তারা ভালো মূল্য পাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অ্যালায়েন্সের ৬৫৮টি সদস্য কারখানায় কাজ করেন ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৫৬৬ পোশাকশ্রমিক। তাদের মধ্যে অধিকাংশকেই প্রাথমিক অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রায় ২৭ হাজার নিরাপত্তাকর্মীকে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে অ্যালায়েন্স। ১৭১টি কারখানায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সেফটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন ওঠে। তখন কর্মপরিবেশ উন্নয়নে পাঁচ বছরের জন্য ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। তাদের প্রকৌশলীরা প্রায় আড়াই হাজার পোশাক কারখানার অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও ভবনের কাঠামোগত পরিদর্শন করে ত্রুটি চিহ্নিত করে দেন। তারপর তাদের অনুমোদিত সংশোধন কর্মপরিকল্পনা (ক্যাপ) অনুযায়ী কারখানাগুলো ত্রুটি সংশোধন করে।
চতুর্থ বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অ্যালায়েন্সের সদস্য কারখানাগুলো ৮৫ শতাংশ ত্রুটি সংশোধন শেষ করেছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ছিল উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেরামত কাজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যালায়েন্সের সদস্য পোশাক কারখানার সংখ্যা ৭৮৫টি। তার মধ্যে সচল আছে ৬৫৮টি। এগুলোর মধ্যে ২৩৪টি কারখানা অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও ভবনের কাঠামোগত সব ধরনের ত্রুটি সংশোধন কর্মপরিকল্পনা (ক্যাপ) অনুযায়ী শেষ করেছে।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।