শিক্ষার সব স্তরেই প্রশ্নফাঁস কোনোভাবেই থামছে না প্রশ্নফাঁস। শিক্ষার সব স্তরেই এখন এই পরিস্থিতি। কেন বন্ধ হচ্ছে না সর্বনাশা এ জালিয়াতি। কী প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর? তিন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন অভিমত।

ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট: পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় প্রশ্নফাঁস হওয়া একের পর এক চলছেই। প্রাথমিক সমাপনী থেকে শুরু করে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা, উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষায়ও ফাঁস হচ্ছে প্রশ্ন।

এর ফলে একদিকে যেমন দুর্বল মেধার শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করে এগিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে মানসম্মত শিক্ষায় পুষ্ট হতে পারছে না জাতি। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায়ও প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। মোটা টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র কিনে মেধাহীনরা বাগিয়ে নিচ্ছে বড় বড় চাকরি। সরকারি ব্যাংক থেকে শুরু করে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরীক্ষায়ও          অভিযোগ ওঠে প্রশ্নফাঁসের। শিক্ষাবিদরা বলছেন, অবিলম্বে প্রশ্নফাঁস বন্ধ করতে না পারলে জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে পড়বে। গত ১ নভেম্বর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরুর দিন থেকেই প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে বাইরে চলে আসে। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পরীক্ষার দেড় থেকে দুই ঘণ্টা আগে পরীক্ষার হল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রছাত্রীরা সেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই পরীক্ষা দেয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও বন্ধ হয়নি প্রশ্নফাঁস। রবিবার শুরু হয়েছে প্রাথমিক স্কুল সমাপনী ও এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা। এ পরীক্ষায়ও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেকেই প্রশ্নফাঁসের কথা বলছেন। কিন্তু এটি গুজব ছাড়া কিছু নয়। ’ গতকাল পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা নির্ধারিত ছিল। বেলা ১১টায় এ পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ পরীক্ষার প্রশ্ন (সেট কোড-৪২০) ভাইরাল হয় সকাল ১০টার আগেই। এমসিকিউর ৫০টি প্রশ্নসহ পুরো ১০০ নম্বরের প্রশ্নই হুবহু মিলে গেছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে। All Exam Suggestion Roki Vai নামের ফেসবুকের পাবলিক পেজ থেকে এ প্রশ্ন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদকের কাছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের স্ক্রিনশর্ট সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ফেসবুক আইডি, পেজ, গ্রুপ থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে দেওয়া হচ্ছে পরীক্ষার আগেই। ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও সমমানের নানা পরীক্ষা এবং এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাগুলোয়ও প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এর আগে পরীক্ষার আগের দিনে বা রাতে প্রশ্ন ফাঁস হতো, এখন তা কমে এসেছে। এখন প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে পরীক্ষার দিন সকালে। এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এর আগে বলেছেন, পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্নপত্র খুলে কিছু নীতিহীন শিক্ষক বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তিনি এসব শিক্ষককে ‘শিক্ষক নামের কলঙ্ক’ বলে অভিহিত করেন এবং এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পরীক্ষার দিনে ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র পরীক্ষার কেন্দ্রে নেওয়ার পথে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। যারা এ প্রশ্ন খোলার দায়িত্বে থাকেন তাদেরই আমরা এজন্য সন্দেহ করছি। কীভাবে পরীক্ষার কেন্দ্রেই প্রশ্ন ছাপানো যায় সে বিষয়টিই এখন ভাবছি আমরা। এজন্য অনেক কমিটি কাজ করছে। এসব কমিটির কাছ থেকে প্রতিবেদন পেলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। প্রশ্নফাঁস বন্ধে তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। ’ সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কোনো একটি কেন্দ্র থেকে কোনো অসাধু ব্যক্তি প্রশ্নের ছবি তুলে বাইরে পাঠালে মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তা পৌঁছে যাচ্ছে। পরীক্ষার আগে প্রশ্ন বাইরে যাওয়া নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। ’ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে এ বছর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। গত বছরও পরীক্ষার আগেই প্রশ্নের উত্তর বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ ছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে বরাবরই। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের একটি ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতরা ‘সঠিক উত্তর’ চেনার সুবিধার্থে ওগুলোকে ঝাপসা করে দিয়েছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে মাঝেমধ্যেই। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকে কর্মকর্তা নিয়োগের পরীক্ষায়ও। ১৯ মে মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে সকালে ও বিকালে দুই ধাপে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এ পরীক্ষার আগের রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় পরীক্ষার প্রশ্ন। সকালের প্রশ্নের সঙ্গে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের মিল পাওয়া গেলে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ আমলে নিয়ে কর্তৃপক্ষ বিকালের পরীক্ষা স্থগিত করে। নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতরের অধীনে সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ৬ অক্টোবর। এ পরীক্ষায়ও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তোলেন চাকরিপ্রার্থীরা। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে কর্তৃপক্ষ এ পরীক্ষা বাতিল করেছে। জানা গেছে, এ পরীক্ষার আগের রাতে মোটা টাকায় কেনাবেচা হয়েছে প্রশ্ন।bd-pratidin.com

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।