নাটোরে জমে উঠেছে শ্রমিকের হাট মজুরী বৈশম্যের শিকার নারী শ্রমিক

নাটোর প্রতিনিধি
শরীর চাদরে মোড়া। হাতে কাস্তে-কোঁদাল আর দড়ি। কাঁধে ধান বাহনের বাক। এসব সরঞ্জামাদি নিয়ে ষাটোর্ধ্ব দিনমজুর আছির মিয়া নিজেকে হাটে তুলেছেন শ্রম বিক্রির জন্য। সময় তখন ভোর পাঁচটা। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হওয়ায় রিতিমতো জবুথবু অবস্থা তার। দিনমজুর আছির মিয়ার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার দবিরগঞ্জে। ভোর চারটায় দশ টাকা ভাড়ায় ট্রাকে চরে এসেছেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের নয়াবাজার শ্রমিকের হাটে। এই হাটে শুধু যে আছির মিয়া এসেছেন তা নয়। প্রকৃতির সব প্রতিকূলতা পেছনে ঠেলে জীবিকার তাগিদে আশপাশের কয়েকটি জেলা থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক এসেছেন শ্রম বিক্রি করতে। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও আসে ওই হাটে শ্রম বিক্রি করতে। প্রতিটি পুরুষ শ্রমিকের মজুরী সাড়ে তিনশ থেকে পাঁচশ’ টাকা। আর নারী শ্রমিকের মজুরী দেড়শ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকা। কৃষকদের তথ্যমতে- দক্ষিণ চলনবিলের নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও পাবনার চাটমোহর উপজেলায় বিনাহালে রসুন রোপন আর আমন ধান কাটার উৎসবকে ঘিরে এই শ্রমিকের হাট বসে প্রতিদিন। এখানে উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ আসে শ্রম বিক্রি করতে। কৃষি অধিদপ্তর ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে- চলনবিলের পানি এখন ভাটির টান। জেগে উঠছে আবাদী জমি। দক্ষিণ চলনবিলের প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে চলছে ধান কাটার উৎসব। ধান কাটার পর নরম-কর্দমাযুক্ত পলিমাটিতে শুধু নাটোরের সাতটি উপজেলায় ২৫ হাজার ৭শ ৯৫ হেক্টর জমিতে বিনাহালে রসুন রোপনের কাজ শুরু হয়েছে। এসব কাজের চাহিদা মেটাতে চলনবিলের নিচু এলাকার শ্রমিক এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শ্রমিকরাই এই শ্রমিকের হাটে আসে। বৃহস্পতিবার ভোড়ে নয়াবাজারের শ্রমিকের হাটে গিয়ে দেখা গেল- গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম ছাড়াও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, সলঙ্গা ও উল্লাপাড়া এবং বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শ্রমিকরা দল বেঁধে এখানে জমায়েত হয়েছেন। এসব শ্রমিকদের সবাই এসেছেন ট্রাক-বাসের ছাদে, নছিমন কিংবা অটোভ্যানে। সকলের গায়েই রয়েছে শীতের পোষাক, হাতে কাস্তে, কোঁদাল ও ধান বহনের জন্য বাক। দবিরগঞ্জের পঞ্চাশার্ধ নারী শ্রমিক জামিরন বেগম জানান, পেটের টানে আসতে হয়। কাজ সমান সমান করলেও মজুরী পাই অর্ধেকেরও কম। অসুস্থ্য স্বামী বাড়ীতে রেখে এসছি। তার চিকিৎসা ও পেট বাঁচাতে আসতেই হয়। বেশক’জন কৃষকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, বিনাচাষে রসুন রোপন, সেখানে লারা (ধানের খড়) বিছানো ও ধানকাটাসহ জমি তৈরির কাজ করানো হয় বহিরাগত এসব শ্রমিকদের দিয়ে। তাছাড়া স্থানীয় শ্রমিকের মজুরী বেশী। স্থানীয় শ্রমিকের মুজুরি ৫শ’ টাকা। অথচ একই কাজে বহিরাগত শ্রমিকদের দিতে হয় ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা। তুলনামূলক কম মজুরিতে কাজ করায় এসব শ্রমিকের চাহিদা বেশি। নভেম্বরের শুরু থেকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চলে শ্রমিকদের এই হাট। তাড়াশের মাঝগাঁ গ্রাম থেকে এসেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শত শত ওরাঁও সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ। কয়েকজন নারী শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের এলাকায় কাজ না থাকায় এখানে এসেছেন তারা। তবে এখানে ন্যায্য মজুরি তেকে বঞ্চিত তারা। তারা নিজের খেয়ে মজুরি পান দেড় থেকে ২শ’ টাকা। অথচ পুরুষরা ৩-৪শ’ টাকা মজুরী পায়। গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, গুরুদাসপুর উপজেলাসহ আশপাশের এলাকাতে বিনাচাষে রসুন আবাদের কাজ শুরু হয়েছে। এসব আবাদকে ঘিরে বিভিন্ন উপজেলা এলাকা থেকে শ্রমিকরা গুরুদাসপুরের এই শ্রমিকের হাটে জড়ো হন। এ কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা বেশ সুবিধা পাচ্ছেন। সহজে শ্রমিক পাওয়ায় সময়মতো আবাদ করতে পারছেন তারা।

 

Please follow and like us:

Check Also

কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রী’র আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিনিধি :সাতক্ষীরার কলারোয়ায় স্বামী আজহারুল ইসলামের পুরুষাঙ্গ কেটে দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণা খাতুন আত্মহত্যা করেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।