রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বই এখন অস্বীকার করছে মিয়ানমার, মুছে ফেলছে সব নাম-নিশানা

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: দীর্ঘ দিনের নির্যাতন আর দমন-নিপীড়নের পর এবার রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বই অস্বীকার করতে শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার। এত দিন তারা রোহিঙ্গাদের বলত অবৈধ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী। সেই সুর পাল্টে এখন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলছেন ‘রোহিঙ্গা বলতে কিছুই নেই। এটি ভুয়া খবর’।

রাখানই রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কাইয়াও স্যান লাকে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আদতে রোহিঙ্গা বলতে কিছুই নেই। এটি ভুয়া খবর’। এ ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কৌশল নিয়েছে মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলেই তাকে ‘ভুয়া খবর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্যে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন মিয়ানমারের প্রবীণ রাজনীতিক কাইয়াও মিন। ৭২ বছর বয়সী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা এই নেতা ১৯৯০ সালের জাতীয় নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কলেজ জীবনে রোহিঙ্গা ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। পাল্টা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ঐতিহ্য ও ইতিহাস নিয়ে বেঁচে আছি। কিভাবে তারা আমাদের অস্বীকার করে?’

গত অক্টোবরে প্রকাশিত জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাখাইনে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর সব স্মারক ও স্মৃতি মুছে ফেলতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের বসবাসেরও কোনো চিহ্ন রাখা হচ্ছে না সেখানে, ফিরে আসার সুযোগ পেলেও তারা দেখবে সম্পূর্ণ অচেনা এক এলাকা। জাতিসঙ্ঘের ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে শিক্ষক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় নেতা ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালীদের টার্গেট করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও শিক্ষা পুরোপুরি বিলুপ্ত করতেই এই পরিকল্পনা নিচ্ছে তারা।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস ধ্বংসের মুখে। গত আগস্টে শুরু হওয়া ওই জাতিগত নির্মূল অভিযানের পর ছয় লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করেছে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে।

পাঁচ বছর আগেও রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তেয় নগরীতে রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইন বৌদ্ধদের অনুপাত ছিল প্রায় সমান। কিন্তু ২০১২ সালে নিপীড়ন শুরু হওয়ার পর নগরীটি এখন প্রায় মুসলিম শূন্য। এমনকি রাখাইনের মধ্যাঞ্চলে যে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ছিল তারাও এখন বেশির ভাগ উদ্বাস্তু শিবিরে বাস করছে।

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।