এসএম শহীদুল ইসলাম: আজ মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর ২০১৭) সাতক্ষীরায় আসছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। আজ সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে আওয়ামী লীগের কর্মী সংগ্রহ অভিযান উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বানে জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তিনি। এরআগে দু’দফায় আসতে চেয়েও অনিবার্য কারণে আসতে পারেননি মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রীর আগমনে জেলা আওয়ামী লীগে যেনো ‘জাগিয়া উঠিল প্রাণ’। জেলার ২২ লক্ষ মানুষের মনে আশা জেগেছে আজ। প্রাণের কথা, মনের কথা খুলে বলতে পারবেন এমন আশা জেলাবাসির। ‘হৃদয়ের কথা আজ কহিতে ব্যাকুল’ জেলার নেতৃবৃন্দ। দীর্ঘদিন প্রিয় নেতাকে কাছে পাবার এমনই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ছিলেন জেলার ২২লক্ষ মানুষ। জেলার উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমৃদ্ধির পাশাপাশি সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা প্রিয় নেতার কাছে প্রাণখুলে বলবেন জেলার নেতৃবৃন্দ। সাতক্ষীরা অতি প্রাচীন একটি জনপদ। এ জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য অত্যন্ত গৌরবের। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী ইতিহাস গৌরবগাঁথা। জেলা আওয়ামী লীগে নেই কোনো দ্বন্দ্ব, নেই প্রতি হিংসা। আছে প্রতিযোগিতা। জেলার মানুষ শান্তি প্রিয়। অসাম্প্রদায়িক। ধর্মপরায়ন। নিরীহ। কায়িক পরিশ্রমী। উদ্যমী। পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। দুর্যোগে দুর্দিনে সবাই প্রত্যেকে মোরা পরের তরে। সিকান্দার আবু জাফর, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, খান বাহাদুর আহসান উল্ল¬াহসহ অসংখ্য বরেণ্য ব্যক্তির পূণ্যভূমি এ সাতক্ষীরা। খেলাধূলা ও সংস্কৃতির বিকাশে এ জেলাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সৌম্য মুস্তাফিজ সাবিনাসহ অনেকে। এ জেলার উন্নয়নে জাতির জনক তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে রেল লাইন, বাইপাস সড়ক, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ভোমরা স্থল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, সাতক্ষীরা টেকনিক্যাল স্কুল, জলাবদ্ধতা নিরসনে কপোতাক্ষ টিআরএম প্রকল্পসহ অর্ধশতাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। ইতোমধ্যে বাইপাস সড়ক নির্মাণে সড়ক বিভাগের তামাশা জেলাবাসিকে চরমভাবে হতাশ করেছে। জেলার দুটি ভূমিদস্যু পরিবারকে বাঁচাতে বাইপাস সড়কের মূল নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। বাইপাস সড়কটি ভোমরা মহাসড়কের সাথে মিলিত হবার কথা আদি নকশায় উল্লেখ থাকলেও শুধুমাত্র ভূমিদস্যুদের স্বার্থ রক্ষার্থে সে নকশা পরিবর্তন করে বাইপাস সড়ককে মেডিকেল কলেজের বুকের মধ্যে ঠেলে তোলা হয়েছে। জেলার একটি রাস্তাও আস্ত নেই। শহর থেকে গ্রামের প্রত্যেকটি রাস্তার ছাল চামড়া উঠে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। রেল লাইনের কাজ চলছে শামুক গতিতে। বৃষ্টি হলে ঢেউ খেলে সড়কে।
জেলার ২২ লক্ষ মানুষ আজ স্বপ্ন দেখে উন্নত সাতক্ষীরা গড়ার। উন্নয়নের সৈনিক হিসেবে দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ, পরিকল্পনা ও চিন্তার প্রতিফলন ইতোমধ্যে জেলাবাসি ভোগ করতে শুরু করেছে। সরকারের দৃশ্যমান অদৃশ্যমান অনেক উন্নয়নের কারণে জেলার চেহারাও দিনদিন পাল্টে যাচ্ছে। সরকারি সেবাসমুহ জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে সকারের সুচিন্তিত পরিকল্পনার ফসল ভোগ করছে জেলার ২২লক্ষ মানুষ। মহান স্বাধীনতার পর সাতক্ষীরা অর্থনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। অর্থনীতির খোলা জানালা ভোমরা বন্দর আজ সম্ভাবনার নব দিগন্ত উন্মোচন করেছে। জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করার সময় এসেছে। কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্পে এ জেলার সুখ্যাতি দেশব্যাপি। জেলার অফূরন্ত সম্ভাবনার মাঝে অনেক সমস্যাও রয়েছে। সমস্যার বোঝা মাথায় নিয়ে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে নিচ্ছেন দেশকে। তারই ধারাবাহিকতায় উন্নয়নের মডেল হিসেবে গড়ে তুলছেন সাতক্ষীরাকে।
জেলার পর্যটন শিল্পের আকাশ ছোঁয়া সম্ভাবনা। সড়ক পথেই সুন্দরবনের নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ সাতক্ষীরা ছাড়া আর কোথাও নেই। রাজা প্রতাপ আদিত্য’র রাজধানী সাতক্ষীরার অপরূপ সৌন্দর্য বিশ্ববাসিকে করেছে মুগ্ধ। কিন্তু যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হবার কারণে বিকশিত হতে পারছে পর্যটন শিল্প। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন অতীব জরুরী। জলাবদ্ধতা এ জেলার চিরদিনের সমস্যা। প্রাণ সায়র খাল সাতক্ষীরা শহরের রক্ষা কবজ। সেই খাল আজ মৃত প্রায়। এক সময়ের প্রমত্তা মরিচ্চাপ নদীকে বানানো হয়েছে খাল। বেতনার ত্রাহি অবস্থা। কপোতাক্ষ তীরে সৃষ্টি হয়েছে আরেক ভবদহ। জলাবদ্ধতা থেকে চিরমুক্তি চায় জেলাবাসি। প্রাণ সায়র দখলমুক্ত হোক। প্রাণ সায়রের দু’তীরে গড়ে উঠুক দৃষ্টিনন্দন পার্ক। যে পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে একদিন আগামীর প্রজন্ম জানতে পারবে আমাদের গৌরবগাঁথা ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা। এ জেলায় কোনো ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। শিল্প বিপ্ল¬ব ছাড়া উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় না। জেলার চিংড়ি আম কুলসহ নানা প্রকার কৃষিপণ্য দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের মাটি স্পর্শ করেছে। কিন্তু সকল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও অনুন্নত সড়ক ব্যবস্থার কারণে তা ম্ল¬ান হচ্ছে। সাতক্ষীরার সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ সকল সমস্যা সমাধানে আজ সড়ক ও সেতু মন্ত্রীর আগমনে জেলাবাসির মনে জ্বলে উঠেছে প্রত্যাশার আলো। সে আলোয় আগামীর পথে এগিয়ে যাবে সাতক্ষীরা।
১২ ডিসেম্বর,২০১৭ মঙ্গলবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি