যশোর-খুলনা সড়কে অবস্থা করুণ দেখার কেউ নেই : সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:    বিশেষ প্রতিনিধি : প্রায় ৬’শ বছরের অধিককাল আগে খুলনা-কলকাতা রাস্তাটি নির্মিত হয়েছিল বলে জনশ্রুতি আছে। যশোর থেকে এই রাস্তাটি দেশের উত্তর বঙ্গ ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। আঠারো দশকের প্রথম ভাগে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানী খুলনা থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত রেল সড়ক নির্মান শুরু করে। যশোর থেকে বেনাপোল হয়ে কোলকাতা পর্যন্ত ইস্টিম (কয়লা) ইঞ্জিন চলাচল করত। এই সড়ক দিয়ে ৬’শ বছর আগে খানজাহান আলী ভারত বর্ষের পূর্বদেশের আগে যশোর বারো বাজার আসেন। তিনি দক্ষিনাঞ্চল যাওয়ার পথে অসংখ্য পুকুর, দীঘি খনন করে সেই মাটি রাস্তা নির্মানের কাজে ব্যবহার করেছিলেন বলে জানা যায়। সুপেয় পানির চাহিদা পুরণ করতো পুকুর-দীঘির পানি। আরো জানা যায়, জেলার অভয়গরের প্রেমবাগে রূপসনাতন সহোদর অনুরূপ পুকুর খনন করেছিলেন।
ষাট দশকের প্রথমে নির্মিত হয়েছিল খুলনা-বেনাপোল সিমেন্টের ঢালাই রাস্তা। পাকিস্তান সরকারের সওজ বিভাগের মাঠ কর্মীরা রাস্তার উভয় পাশে নালা কেটে দিত। যাতে পানি জমে না থাকে।
বর্তমানে যে সিরিশ-মেহগানী গাছ দেখা যায় এগুলো সেই আমলে লাগানো। মাঠ কর্মীরা পালাক্রমে রাস্তা ও গাছের পরিচর্যা করতেন। পাশের মাটি ভেঙ্গে গেলে মাটি ভরাট করা হতো। এটা এখন আর নজরে পড়ে না। কালেভাদ্রে সওজের কোনো লোক দেখা যায় না। যশোর-খুলনা সড়ক দিয়ে নেপাল-ভুটান-ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মালামাল মংলা ও শিল্প শহর নওয়াপাড়া হতে সরবরাহ হয়। যে কারণে আলোচিত সড়কটি অতি গুরুত্বপূর্ন।
কিন্তু বর্তমান অবস্থা দেখলে মনে হয় এর কোনো অভিভাবক নেই। খানা-খন্দে ভরপুর। বড় বড় গর্তে পড়ে যানবাহন দূর্ঘটনায় পড়ছে নিত্য দিন। পথচারীরা বাসে না উঠে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থাকেন স্টেশনে। এ্যম্বুলেন্স চলতে পারে না। বর্ষা মওসুম শেষ হলেও রাস্তা মেরামতের কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অতিগুরুত্বপূর্ন যশোর-খুলনা-বেনাপোল সড়কটি মেরামত না করে যশোর এলজিইডি ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৮ কি.মি. দৃষ্টি নন্দন সড়ক নির্মান করেছেন যশোর-রাজগঞ্জ ভায়া সাগড়দাঁড়ি সড়ক। কিন্তু ব্যস্ততম সড়কটি জরাজীর্ণ হওয়ায় চালকরা যানবাহন চালাতে বিরক্তিবোধ করেন। জনসাধারণের অভিযোগ প্রতি বছর সড়ক সংস্কার করার কিছুদিন পর ভেঙ্গেচুরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। যার কারণ হিসেবে তারা অভিযোগ করে বলেছেন-সড়ক নির্মানে ঠিকাদারদের চরম দূর্নীতি।

আর এই দূর্নীতির পৃষ্টপোষকতা করেন এলজিইডি ও সওজের কতিপয় সরকারী লোকেরা। জনসাধারণ আরো যে অভিরযাগটি করেছেন তা হলো, সড়ক নির্মান সামগ্রীতে কারচুপি। ঠিকাদারেরা মোটা অংকের উপরি দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কতিপয় লোকদের তুষ্ট করে পিচের সাথে পোড়া মবিল মিশিয়ে রাস্তায় দেয়া হয়। সচেতন মহল বলেছেন, পিচের ধর্ম খোয়া ও পাথরকে আকড়ে ধরা। কিন্তু পিচ কম দিয়ে তাতে পোড়া মবিল মিশ্রিত করলে তাতে পিচের স্থায়িত্ব নষ্ট হয়। অপর যে অভিযোগটি করা হয়েছে তা হলো ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় উপপাতি নেতার নগ্ন হস্তক্ষেপ। তারা ঠিকাদারের উপর প্রভাব ঘাটিয়ে আর্থিক তুষ্ট হন। সংগত কারণে সিডিউল মোতাবেক কাজ হয় না।
কিন্তু তদারকি ও নিয়ন্ত্রনে কোনো মহলকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। রাজধানী থেকে খুলনায় প্রায় প্রতিদিন আসেন মন্ত্রীসহ সরকারের উর্দ্ধতন মহল। তারাও আটকে যান সড়কে। এ ব্যাপারে মাননীয় সড়ক ও সেতু মন্ত্রীর আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভুগী জনসাধারন। যাতে ৬’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী গুরুত্বপূর্ন যশোর-খুলনা সড়কটি সঠিক নিয়মে সংস্কার হয়।

২১ডিসেম্বর২০১৭,বৃহস্পতিবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।