আ’লীগ নেতার ছেলে ধনীর দুলালের কাণ্ড ‘অপমানের’ প্রতিশোধ নিতে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:    মধ্যরাতে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কের হোয়াইট হল কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। এর সামনের রাস্তায় উল্টোপথে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে কয়েকজন পথচারীকে আহত করেন আ’লীগ নেতার ছেলে এক মদ্যপ ধনীর দুলাল। উপস্থিত জনতা গাড়ি আটকে প্রতিবাদ করলে নাজমুল হুদা নামের ওই ধনীর দুলালের কয়েকজন বন্ধু গাড়ি থেকে নেমে একজনকে মারধর করেন। এতে জনতা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে নাজমুল গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। কিন্তু এ ঘটনায় তিনি খুবই ‘অপমানিত’ হন। এর প্রতিশোধ নিতে কিছুক্ষণ পর আবারও ফিরে আসেন এবং কমিউনিট সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের ওপর গাড়ি তুলে দেন। এ সময় আবদুল মোতালেব (৫৫) নামে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়। আহত হন আরও কয়েকজন। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, নাজমুল এ ঘটনা ঘটিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি গাড়ি নিয়ে চলে যান হাজারীবাগ থানায়। সেখানে গিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মারধর করেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে। নাজমুলের বাসা হাজারীবাগে। তার বাবা শামসুল হুদা ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি নিজেও একজন ব্যবসায়ী।

এদিকে মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে প্রাণনাশের অভিযোগ এনে মোতালেবের শ্যালক হুমায়ুন কবীর শনিবার ধানমণ্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এতে নাজমুলসহ তার সহযোগীদের আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত দেড়টায় বিয়ের অনুষ্ঠানটি প্রায় শেষের দিকে। সবাই কমিউনিটি সেন্টার থেকে বের হচ্ছিলেন। এ সময় মদ্যপ অবস্থায় উল্টোপথে বেপরোয়া গতিতে বিএমডব্লিউ গাড়ি চালাচ্ছিলেন নাজমুল। তার গাড়ির ধাক্কায় কয়েকজন আহত হলে উপস্থিত লোকজন এর প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার তিন সহযোগী গাড়ি থেকে নেমে প্রতিবাদকারীদের মারধর শুরু করেন। এদের মধ্যে কামরুল হাসান নামে একজন ছিলেন। বাকি দু’জনের নাম জানা যায়নি। উপস্থিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে নাজমুল গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর আবারও ফিরে এসে কমিউনিটি সেন্টারের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনকে গাড়ি দিয়ে চাপা দেন। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এর মধ্যে আবদুল মোতালেবের অবস্থা গুরুতর ছিল। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, ইতালি প্রবাসী মোতালেব দুই মাস আগে দেশে আসেন। তার বাসা পশ্চিম ধানমণ্ডিতে। শুক্রবার রাতে হোয়াইট হল কমিউনিটি সেন্টারে তার এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল।

পুলিশের ধানমণ্ডি জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ কাফী  বলেন, নাজমুলের বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। তিনি মদপান করে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ঘটনার সময় গাড়িতে তার স্ত্রীও ছিলেন। মোতালেব নামে এক প্রবাসীকে গাড়িচাপা দিয়ে নাজমুল হাজারীবাগ থানায় চলে যান। থানার সামনে রাখা কয়েকটি মোটরসাইকেলও চাপা দেন তিনি। পরে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় একজন পুলিশ সদস্যকে তিনি মারধর করেন। তার গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

নিহতের ভাই আলমগীর হোসেন  বলেন, মোতালেব পরিবার নিয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে ইতালিতে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দেশে আসেন। পশ্চিম ধানমণ্ডিতে আমাদের একটি বাড়ি রয়েছে। দেশে আসার পর তিনি ওই বাসায়ই ছিলেন। আমাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে।

এদিকে হাজারীবাগ থানা পুলিশ জানায়, নাজমুল এতটাই মদ্যপ ছিলেন যে, তার নিজের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। পরে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পথচারীদের গাড়িচাপা দেয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে তাকে ধানমণ্ডি থানায় হস্তান্তর করা হয়। তার গাড়িটিও (ঢাকা মেট্রো : ৩৩০০৬৫) ধানমণ্ডি থানা পুলিশের হেফাজতে আছে।

হাজারীবাগ থানার ওসি মীর আলিমুজ্জামান  বলেন, অভিযুক্ত নাজমুল একজন ব্যবসায়ী। তিনি হাজারীবাগ এলাকায় থাকেন। চীনের একটি মেয়েকে তিনি বিয়ে করেছেন। রাতে তাকে নিয়েই বাইরে বের হয়েছিলেন।

ধানমণ্ডি থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নাজমুল স্ত্রী ও বন্ধুদের নিয়ে প্রায় রাতে ‘লং ড্রাইভে’ বের হন। মদপান করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। এমনকি উল্টোপথে গাড়ি চালানোর সময়ও তিনি বেপরোয়া গতিতেই গাড়ি চালান। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, জব্দ করা গাড়িটির মালিক নাজমুল।যুগান্তর

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।