কোনো দল নির্বাচনে না এলে কিছু করার নেই: প্রধানমন্ত্রী#সাংবাদিকরা অপকর্ম না করলে আইনের অপপ্রয়োগ হবে না: #প্রশ্নফাঁস যুগ যুগ ধরে চলে আসছে

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপো:কোনো দল নির্বাচনে না এলে কিছুই করার নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধানে যেভাবে আছে সে অনুযায়ী সময়মতো নির্বাচন হবে। ১৪ সালে নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি এবারও আর কেউ পারবে না। আমাদের প্রতি জনগণের আস্থা আছে।

ইতালি ও ভ্যাটিকান সফর শেষে আজ সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম বেগম খালেদা জিয়ার সাজা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালত তার শাস্তি দিয়েছে, সেখানে আমাদের কিছুই করার নেই। কোরআন শরীফে আছে এতিমের টাকা খাওয়া যাবে না। যার শাস্তি আল্লাহ দিবেন, এখনও শাস্তি হয়েছে। আর শাস্তি কি আমি দিয়েছি যে তুলে নেব, সেটা সম্ভব নয়। শাস্তি দিয়েছে আদালত। এখন তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কি না সেটা আদালতই সিদ্ধান্ত দিবে।

এ সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে অনেক ফোন বা চাপ থাকলেও খালেদা জিয়ার সাজা নিয়ে দেশ-বিদেশে কোনো প্রশ্ন করা হচ্ছে না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরো বলেন, এ মামলা তো আমরা করিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় করা হয়েছিল। ফখরুদ্দীন আহমেদ তাদের আমলে বিশ্বব্যাংকে বড় পদে চাকরি করেছেন। মইন ইউ আহমেদকে নয়জন ডিঙ্গিয়ে সেনা প্রধান করা হয়। আর ইয়াজউদ্দীন আহমেদ তো তাদের ইয়াজউদ্দীন। সবাই তাদের লোক। মইনুল-মতিনরা তাদের লোক। মামলাতো তারা করেছে, দুদক করেছে। ১০ বছর এ মামলা চলেছে। ৮০ বারেরও বেশি রিট করা হয়েছে। ২৬১ কার্যদিবস ধরে চলে। সময় চেয়েছে ১০৯ বার। বহু টালবাহানা আপনারা দেখেছেন। এতো কিছুর পরও মাত্র ৪৩ দিন তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলা শুরুর পর ওনার আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছিলেন টাকাটা দিয়ে দিন, তাহলে আর মামলা থাকবে না। উনি ফেরত দিলেই তো হতো। এটাতো এতিমের টাকা। এখন ওনার সাজা হয়েছে। আর বিএনপি বলছে তাকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। আর না গেলে সেখানে আমাদের কী-ই বা করার আছে। ১৪ সালের নির্বাচনেও তো তারা আসেনি। বরং ঠেকানোর নামে সারাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। পেট্রোলবোমা মেরে বাসে আগুন দিয়ে পাঁচ শতাধিক মানুষকে হত্যা আর তিন হাজার মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করে। পোলিং অফিসারদের হত্যা করে। ট্রেনের ১৯টি বগি পুড়িয়ে দেয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুড়িয়েছে। তারপর জনগণ যখন রুখে দাঁড়িয়েছে তখন তারা থামলো। এতো কিছুর পরও তারা নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি আর পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেকেইে কথা বলে। কিন্তু ক্ষেত্রে বিশেষ দুর্নীতি করলে তা নিয়ে তেমন কথা হয় না। কোর্ট রায় দিয়েছে আর সেটার দায়ও পড়ছে সরকারের ওপর। সেখানে আমাদের কিছুই করার নেই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রসঙ্গ
বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির একটি গঠনতন্ত্র আছে কিন্তু তার কোনো খোঁজও করা হয় না। তাদের গঠনতন্ত্রের সাথে লোকবলের কোনো মিল নেই। ওটার ধার ধারে না। যাকে যতগুলো পারে দিয়েই যাচ্ছে। গঠনতন্ত্রে সব ক্ষমতা চেয়ারপারসনের। আমাদের (আওয়ামী লীগের) গঠনতন্ত্রে কিন্তু তা নেই। এখানে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলো নির্বাহী কমিটি ও প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। কথা নেই বার্তা নেই কয়েকদিন আগে হঠাৎ করেই গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দুর্নীতির ধারাটি বাদ দেয়া হয়েছে। এরপরই রায়টা হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঠিকই আছে ১নং ভাইস চেয়ারম্যানকে ভারপ্রাপ্ত করা হলো। তবে দেশে বিএনপির কি এমন কোনো নেতা নেই যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হবেন? দুর্নীতির দায়ে যিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি, রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে যিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন তাকেই করতে হলো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন। বিএনপির যারা আছেন এখন দেখছি খুব কর্মঠ, বেশ কাজ করছেন তারা। তাদের কাউকে দায়িত্ব দেয়া গেল না! বিএনপির কী এতই দৈন্যদশা। দেশের ভেতরে কাউকে দেয়া গেল না। আমরা আর বলবো না। আমি বলতে গেলেই তো আবার দোষ!’

প্রশ্নফাঁস প্রসঙ্গ
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা এ দেশে নতুন নয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুগ যুগ ধরেই এগুলো হচ্ছে। তবে এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে বেশি ছড়াচ্ছে। আর এটাই বাস্তবতা। প্রযুক্তি যেমন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, তেমনি সমস্যাও সৃষ্টি করে। তাই বলে মন্ত্রীকে গালি দিতে হবে সেটা ঠিক না।’

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থতার দায়ে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রী প্রশ্ন ফাঁস করেন না, বা সচিবও প্রশ্ন ফাঁস করেন না। তাহলে তাকে কেন সরে যেতে হবে? মনে হচ্ছে সরকারের ইমেজ নষ্ট করতে এটা একটা সুর তুলে দেয়া হচ্ছে প্রশ্নফাঁস প্রশ্নফাঁস।

তিনি আরো বলেন, সাধারণত কতদিন আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়? পরীক্ষার ২০ মিনিট আগে। যদি কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট বা একঘণ্টা আগে, অথবা দুই ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র পায়, তাহলে এমন ফটোজেনিক ও মেধাবী পরীক্ষার্থী কে আছে, যে চট করে প্রশ্ন দেখেই উত্তর মুখস্থ করে ফেলতে পারে? এত ট্যালেন্টেড কে আছে? পারলে আপনারা ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিন। আমরা ব্যবস্থা নেবো, শাস্তি দেবো। এখন আর পারছে না। কোনো দিকে দোষ নাই, একটা নিয়ে খোঁচাখুচি!

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। তাই তাদের সাথে আমরা কোনো বিরোধে যেতে চাই না। রোহিঙ্গ সমস্যা তাদের এবং এটি তাদেরকেই সমাধান করতে হবে। আমরা সেজন্য আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। মিয়ানমারের সীমা সংলগ্ন দেশগুলোর সাথেও আলাপ করছি। আমরা সব রোহিঙ্গার ডাকা সংরক্ষণ করেছি। এখন আট হাজার পরিবার ফেরত গেলে তাদের সাথে কী ব্যবহার করা হয় তা দেখবো। এবং পর্যায়ক্রমে সব রোহিঙ্গা ফেরত যাবে। তবে তাদের জন্য আমরা আপাতত ভাসানচরে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছি। তবে মিয়ানমার নানা রকম টালবাহানা করছে সেটা ঠিক। আর এটা তাদের চরিত্র।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এতো আশঙ্কা কেন সাংবাদিকদের সেই প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ অপকর্ম না করলে ডিজিটাল আইনের অপপ্রয়োগ হবে না। আর যদি অপকর্ম করে তবে তখন এটি প্রয়োগ হচ্ছে বলে মনে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ইতালিতে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (ইফাদ) গভর্নিং কাউন্সিলের ৪১তম বার্ষিক বৈঠকে যোগ দেয়া এবং ভ্যাটিকান সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাড়াও বিভিন্ন মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ইতালি ও ভ্যাটিকান সিটিতে চারদিনের সরকারি সফর করেন। তিনি আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (ইফাদ) প্রেসিডেন্ট গিলবার্ট এফ হংবো-এর আমন্ত্রণে ইফাদের বার্ষিক পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে অংশ নেন।

প্রশ্নফাঁস যুগ যুগ ধরে চলে আসছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রশ্নফাঁস যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। পরীক্ষার বিশ মিনিট আগে প্রশ্নফাঁস হলে আপনি কী করবেন? এক ঘণ্টা বা দুঘণ্টা আগে প্রশ্নফাঁস হয়ে কারো কারো কাছে চলে গেলে সেই প্রশ্ন দেখে উত্তর খুঁজে বের করে পরে পরীক্ষার হলে গিয়ে লেখার মতো ট্যালেন্ট ছাত্র কে আছে? কতজন আছে? কে প্রশ্নফাঁস করেছে আপনি বলেন, সচিব করেছে, মন্ত্রী করেছে? আপনারা সাংবাদিক আপনারা বলেন- কে করেছে? আপনারা একজনকে চিহ্নিত করে দিন, আমরা তাকে শাস্তি দেব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সবার হাতে মোবাইল ইন্টারনেট, সবার হাতে ফোন। এখন যে কেউ প্রশ্নের ছবি তুলে ফাঁস করে দিতেই পারে। এতে আমাদের কী করার আছে? যদি ২৪ ঘণ্টা আগে ফাঁস হয়, দুদিন আগে হয় তাহলে একটা কথা। তাতো হচ্ছে না।

“এ জন্য মন্ত্রীকে গালি দিতে হবে, সচিবকে গালিতে হবে, মন্ত্রীকে চলে যেতে হবে- এতে কি প্রশ্নফাঁস বন্ধ হয়ে যাবে? আপনারা কি চান ইন্টারনেট বন্ধ করে দিব? আপনারা বলেন, আপনারা পক্ষে লিখেন, আমরা বন্ধ করে দিব। যখন প্রশ্ন যাচ্ছে তখন কে ছবি তুলে পাঠালো-আপনারা ধরে দেন। আমরা শাস্তি দেব। কোনো দিকে দোষ না পেয়ে একটা দিকে খোঁচাখুচি!

 

 

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।