একাত্তরের এই মার্চ মাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গোটা জনপদ প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফুঁসছিলো

স্টাফ রিপোর্টার : একাত্তরের এই মার্চ মাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গোটা জনপদ প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফুঁসছিলো। আন্দোলনমুখর এ প্রদেশ যেন জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। অসহযোগ আন্দোলনের সেই ষোড়শ দিন বুধবার। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সভা ও মিছিল অব্যাহত ছিলো। পুলিশ বাহিনীর মধ্যেও ব্যাপক স্বতঃস্ফূর্ততা পরিলক্ষিত হয়। প্রেসিডেন্টের ডিউটিতে নিয়োজিত পুলিশের ট্রাক ও জীপে কালো পতাকা উড়তে দেখা যায়। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে মহল্লায় মহল্লায় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের আমন্ত্রণে ঢাকার প্রেসিডেন্ট হাউজে (বর্তমান সুগন্ধা ভবন) তার সাথে আলোচনা করতে যান। সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে শেখ মুজিব তার সহকর্মীদের নিয়ে প্রেসিডেন্ট হাউজে যান। সেখানে দুপুর একটা পর্যন্ত অবস্থান করেন। এদিন কোনো আলোচনা হয়নি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে শেখ মুজিবের কাছে জানতে চান। শেখ মুজিব পহেলা মার্চ প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পর এখানে কি কি ঘটছে তার একটি বিবরণ দিয়ে সরাসরি বলেন যে, এখানকার ঘটনার জন্য এ দেশের মানুষ বা শেখ মুজিবকে দোষারোপ করা যায় না। শেখ মুজিব তাকে আরো বলেছেন যে, ৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তাকে (শেখ মুজিব) দোষারোপ করেছেন, এতে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে। তিনি প্রেসিডেন্টকে বলেন, তার যা বলার তিনি আগেই বলে দিয়েছেন। এখন যা করার প্রেসিডেন্টই করবেন। এ প্রসঙ্গে শেখ মুজিব ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সামরিক আইন প্রত্যাহার, সেনাবাহিনী প্রত্যাহার, হত্যার তদন্ত ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের চারটি দাবির কথা পুনরুল্লেখ করেন। এদিন দুপুর ১টা ১০ মিনিটে প্রেসিডেন্ট হাউজ থেকে বেরিয়ে এসে গেটে অপেক্ষমান দেশী-বিদেশী দু’শতাধিক সাংবাদিকের সামনে শেখ মুজিব বলেন, আমরা আমাদের কথা ইয়াহিয়া খান সাহেবকে বলে এসেছি। আলোচনা শুরু হয়েছে। আরো আলোচনা হতে পারে। আপনারা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। প্রেসিডেন্ট আমাদের দাবি নিয়ে উপদেষ্টাদের সাথে বৈঠকে বসেছেন। পরে বিকেলে প্রেসিডেন্ট হাউজ থেকে লেফট্যান্যান্ট জেনারেল পীরজাদা টেলিফোন করে পরের দিন সকাল ১০টায় আবার আলোচনায় বসার জন্য প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবকে আমন্ত্রণ জানান। শেখ মুজিব এদিন বিকেলেও সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রায় একই সময়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী ও জনতার একটি বিরাট মিছিল প্রেসিডেন্ট হাউজের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে শ্লোগান দেয়। এদিকে একই দিন কেন্দ্রীয় সরকারের আবগারী কর, শুল্ক ও বিক্রয় কর প্রভৃতি গ্রহণের জন্য ইস্টার্ন-মার্কেন্টাইল ব্যাংক বিশেষ অ্যাকাউন্ট খোলে। বাংলাদেশ ত্যাগীদের নিয়ে এদিন প্রথম যাত্রীবাহী জাহাজ ‘এমভি শামস’ দু’সহস্রাধিক লোক নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করে। এছাড়া এদিন খুলনার হাদিস পার্কে জাতীয় লীগ জাতীয় সরকার গঠনের দাবিতে জনসভার আয়োজন করে। ঢাকা হাইকোর্ট বার এসোসিয়েশনের এক সভায় শেখ মুজিবের দেয়া যে কোনো নির্দেশ মেনে চলার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

Please follow and like us:

Check Also

বিজয় দিবসে বিএনপির দিনব্যাপী কর্মসূচি

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।