পুলিশ হেফাজতে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় জাতি উদ্বিগ্ন -শিবির সেক্রেটারি জেনারেল

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়ন করতে সরকার পুলিশ দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে। পুলিশ হেফাজতে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় জাতি উদ্ধিগ্ন।
গতকাল শুক্রবার দিনাজপুরের এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবির দিনাজপুর অঞ্চলের সদস্য শিক্ষা শিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দিনাজপুর শহর সভাপতি সোহেল রানার পরিচালনায় শিক্ষা শিবিরে বক্তব্য রাখেন, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় মানবাধিকার সম্পাদক নাদিমুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী দিনাজপুর উত্তর জেলা আমীর অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান, ঠাকুরগাঁও জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম, ঠাকুরগাঁও শহর সভাপতি মোঃ রাজিউর রহমান রাজু, ঠাকুরগাঁও জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, দিনাজপুর জেলা উত্তর সভাপতি রেজাউল ইসলাম, দিনাজপুর জেলা দক্ষিণ সভাপতি সাদিকুর রহমান সবুজ, পঞ্চগড় জেলা সভাপতি বেলাল হোসেন, দিনাজপুর শহর সেক্রেটারি তোফায়েল আহমেদসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
শিবির সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, অবৈধ সরকারের ঘৃণ্য এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানা কায়দায় শত শত নিরপরাধ মেধাবী ছাত্রসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে পুলিশ। সম্প্রতি গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে হাত পায়ের নখ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে বর্বর নির্যাতন চালিয়ে পুলিশ হত্যা করেছে ছাত্রদল ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহসভাপতি জাকির হোসেন মিলনকে। এ হত্যাকান্ডই একমাত্র হত্যাকান্ডের ঘটনা নয়। এর আগেও পুলিশ এমন বর্বর হত্যাকান্ডের নিকৃষ্ট নজির স্থাপন করেছে। এরা শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং থানায় নিয়ে চোখে উপড়িয়ে ফেলা হয়েছে অনেকের। কয়েক বছর আগে চট্টগ্রামে থানায় নিয়ে ১২ বছরের কিশোর শিবির কর্মী আবিদের চোখ উপড়িয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল পুলিশ। তাছাড়া গ্রেফতারের পর বন্দুক যুদ্ধের নাটক সাজিয়ে বহু শিবির নেতাকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করেছে পুলিশ। গুম করেছে  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিবির নেতা ওয়ালিউল্লাহ ও মোকাদ্দাসহ অনেক নেতাকর্মীকে। এমনকি বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে গুলী চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে বহু নেতাকর্মীকে। একই ভাবে গ্রেফতারের পর নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে শিবিররের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেনসহ অনেককে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনটিরই বিচার হয়নি। উল্টো নানা ভাবে হত্যাকারী পুলিশকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। পুলিশের এই ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞে আজ জাতির সামনে স্পষ্ট যে, অবৈধ সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঘাতক বাহিনীতে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে একের পর মায়ের বুক খালি করে চলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ধ্বংস করে দিয়েছে হাজারো ছাত্রের ভবিষ্যৎ। এতিম করেছে অসংখ্য শিশুকে। অঘোষিত ভাবে গ্রেফতারের পর খুন, গুম, নির্যাতন হয়রানিকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, শুধু মাত্র ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চার বছরে ২৬০ জন হেফাজতে মারা গেছেন যার মধ্যে ২০১৬ সালে এক বছরেই মারা গেছেন ৭৮ জন। অথচ মানবাধিকার সংস্থাগুলো বরাবরই রহস্যজনক নিরব ভূমিকা পালন করে চলেছে। যা সার্বিক ভাবে দেশকে বিভীষিকাময় করে তুলেছে। প্রতিটি শ্রেণি পেশার মানুষ আজ শঙ্কিত। মনে হচ্ছে বেঁচে থাকার অধিকার, নাগরিকের মৌলিক অধিকার কেবল এক দলের জন্য প্রযোজ্য। যা কোন সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্রের চিত্র হতে পারেনা। দেশের মানুষ নিজেদের কষ্টের টাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লালন করে তাদের দ্বারা খুন গুম ও নির্যাতিত হওয়ার জন্য নয়। দেশের মানুষ আর পৈশাচিকতা দেখতে চায়না। অবিলম্বে এই পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। ছাত্রদল নেতা হত্যাকারী পুলিশ সদস্যদের দায়মুক্তি না দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে বিচারের কাঁঠগড়ার মুখোমুখি করতে হবে। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের উপর চালানো প্রতিটি গুম খুনের বিচার করতে হবে। পুলিশ হেফাজতে হত্যা নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। এমন বেআইনি হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত থাকলে জনগণের কাছে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকবে না। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।

Please follow and like us:

Check Also

অনিশ্চয়তার নতুন যুগে মধ্যপ্রাচ্য

ইউক্রেন-রাশিয়া রেশ কাটতে না কাটতেই ফিলিস্তিনের গাজায় শুরু হয় ইসরাইলি আগ্রাসন। এরপর থেকে অশান্ত হতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।