নিজস্ব প্রতিনিধি: ১৯৭৫ সাল থেকে যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে এতোদিন পরিচিত ছিল বর্তমানে সে দেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ লাভ করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ এখন আরও এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখছে। ২০২৪ সালে এদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে পূর্নাঙ্গতা লাভ করবে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত সিডিপির সাম্প্রতিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ লাভ করেছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরনের সকল মানদন্ড পূরনের স্বীকৃতি। এখন প্রয়োজন উন্নয়ন ধারাবাহিকতা রক্ষার। চলতি ২০১৮ সালে প্রথম, ২০২১ সালে দ্বিতীয় পর্যালোচনা এবং ২০২৪ সালে শেষ পর্যালোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতিসংঘে উপস্থাপিত হয়ে লাভ করবে এ সংক্রান্ত সনদ। এর প্রথম ধাপ বাংলাদেশ পার করেছে।
মঙ্গলবার বিকালে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন তার সম্মেলন কক্ষে মিট দ্য প্রেসে এই তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মাথা পিছু আয় এবং কিছু সামাজিক সূচকের ভিত্তিতে বাংলাদেশ এই বিরল স্বীকৃতি লাভ করেছে। তিনি বলেন মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এই তিন সূচকে বাংলাদেশ এই উত্তরণ লাভ করেছে। বাংলাদেশ এখন নি¤েœর কাতারে নেই মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, এতে বাংলাদেশের সক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পেল তেমনি দেশের ভাবমুর্তিও উজ্জ্বল হলো। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, এলডিসি থেকে ডিসিতে উত্তরনে দেশের মাথাপিছু আয় প্রয়োজন ছিল ১২৩০ মার্কিন ডলার। অথচ বিশ্বব্যাংক নির্ধারিত অ্যাটলাস পদ্ধতিতে দেখা গেছে বাংলাদেশে মাথাপিছু গড় আয় এখন ১২৭২ মার্কিন ডলার। এছাড়া মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ স্কোর প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশে সেই সূচক ৭২.৮। অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচক প্রয়োজন ছিল ৩২ বা তার কম। বাংলাদেশে তা ২৫ স্কোর। তিনি বলেন, দেশের মানুষ কি কি নাগরিক সুবিধা লাভ করছেন তার একটি স্পষ্ট ও ধারাবাহিক বর্ণনামূলক কর্মসূচি বিশেষ সেবা সপ্তাহের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এখন প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কখনও ঋণ খেলাপি নয় । তবুও বাংলাদেশ ছিল সফট লোন পাবার যোগ্য। এখন তা থেকে উত্তরন পেয়ে বাংলাদেশ বড় মাপের ঋন সুবিধা লাভ করতে পারবে। জাতীয় অর্থনীতিতে তার প্রতিফলন ঘটবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ শীর্ষক মিট দ্য প্রেসে সাতক্ষীরার উন্নয়ন প্রসঙ্গ টেনে আলোচনায় জেলা প্রশাসক বলেন দুর্যোগ প্রবণ এই জেলা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সবচেয়ে সব ক্ষয় ক্ষতির শিকার। এ জন্য সরকার জলবায়ু তহবিলের ৬৮০ কোটি টাকার একাংশ এখানে ব্যয় করছেন বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে। এর মধ্যে থাকছে রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টিং এবং পুকুর খনন করে ভূ উপরিস্থ সুপেয় পানি নিশ্চিত করা, শিক্ষা স্বাস্থ্য পুষ্টি ও আবাসনে সহায়তা দেওয়া, অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন, সুন্দরবন রক্ষা ইত্যাদি। সাতক্ষীরায় উন্নয়নের পর্যাপ্ত ছোঁয়া আছে মন্তব্য করে জেলা প্রশাসক বলেন, সাতক্ষীরা একটি সম্পদশালী জেলা। এখানকার সুন্দরবনের অফুরান সম্পদ, হিমায়িত খাদ্য বিশেষ করে চিংড়ি চাষ ও রপ্তানি, রাজস্ব আদায়, খাসজমি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর ভোমরা স্থল বন্দর, পর্যটন সুবিধা, আম রফতানি, চাহিদার অনেক বেশি পরিমাণ কৃষি ও মৎস্য সম্পদ উৎপাদন, সাতক্ষীরার আকর্ষন সড়ক পথে সুন্দরবন এসব বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন সাতক্ষীরায় অচিরেই একটি অর্থনৈতিক জোন তৈরি হবে। এতে উন্নয়ন গতি আরও ত্বরান্বিত হবে বলে জানান তিনি।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগ আরও বাড়বে। দেশকে কোনো সুবিধা দেওয়া বড় কথা নয় বরং টিকে থাকাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুল হান্নান, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, জেলা তথ্য অফিসার মো. মোজাম্মেল হক, সদর এসি ল্যান্ড সাদিয়া আফরিন, এনডিসি মোশাররফ হোসেন প্রমূখ।
জেলা প্রশাসক বলেন, আগের আদম শুমারি অনুযায়ী সাতক্ষীরায় শিক্ষার হার শতকরা ৬৭ ভাগ ছাড়িয়ে গেছে যা জাতীয় পর্যায়ের অর্জন থেকেও বেশি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে গ্রাজুয়েশনের মানদন্ডে বাংলাদেশ স্বীকৃতি লাভ করায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
Check Also
সন্ধ্যায় আবারো সড়ক অবরোধ তিতুমীর শিক্ষার্থীদের
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত প্রকাশ না করায় আবারো সড়ক …