রজব মাস পৃথিবীর ইতিহাসে অতি গুরুত্বপুর্ণ -তাৎপর্যমন্ডিত ঐতিহাসিক মাস

সাখাওয়াত উল্যাহ

রজব মাস পৃথিবীর ইতিহাসে অতি গুরুত্বপুর্ণ মাস। তাৎপর্যমন্ডিত ঐতিহাসিক মাস। আরবী সপ্তম মাস। এ মাসের গুরুত্ব ফজিলত আজ মুসলিম বিশ্বে মুসলিম জনগণের কাছে হারানো অতীত। মুসলিম জাতি রজবের ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে বেখেয়াল হয়ে পড়েছে। ইতিহাস বিচ্যুতির কারণে আজ ইসলামী খেলাফত হারিয়ে গেছে, হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত মুসলমান ইসলামের ইতিহাস থেকে।

১লা রজব: ইমাম মুহাম্মদ বনি আলী আল বাকির (আ.)-এর জন্ম দিন।

২রা রজব: ইমাম আলী বিন মুহাম্মদ আল হাদী (আ.)-এর জন্ম দিন।

৩রা রজব: ইমাম আলী বিন মুহাম্মদ আল হাদী (আ.)-এর শাহাদত দিবস।

৪র্থ রজব: লাইলাতুল রাগাইব বা কামনার (আশার্পূণ করার রাত, অর্থাৎ বিশেষ নামায পড়ে মনের অব্যক্ত বাসনাগুলো আল্লাহর কাছে চাওয়ার রাত)

পবিত্র রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবারে সিয়াম পালন করার জন্য অধিক তাগিদ করা হয়েছে এবং এই রাতে মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে সর্বমোট ১২ রাকাত নামায আদায় করার জন্য বলা হয়েছে।

নামাযের নিয়ম:

দুই দুই রাকাত করে সর্বমোট ১২ রাকাত নামায আদায় করতে হবে যার প্রত্যেক রাকাতে একবার সুরা ফাতেহার পর ৩ বার সুরা ক্বদর এবং ১২ বার সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে।

৭ই রজব: আব্বাসিয় খলিফা মামুন ইমাম রেজা (আ.)-কে তার উত্তরসূরী হওয়া আবদেন করে পত্র পাঠিয়েছিলেন।

১০ম রজব: ইমাম মুহাম্মদ বিন আলী আল যাওয়াদ (আ.)-এর জন্ম দিন।

১০ম রজব: হযরত আলী আসগারের জন্ম দিন ।

১২ই রজব: ১. আমিরুল মুমেনীন ইমাম আলী (আ.) কুফাকে ইসলামী হুকুমতের রাজধানী হিসেবে মননীত করে কুফাতে প্রবেশ করে। ২.আর এদিনেই মানব ইতিহাসের ঘৃণ্যব্যক্তি ইয়াজিদের পিতা মুয়াবিয়া মৃত্যুরবন করে।

১৩ই রজব: পবিত্র ক্বাবার সন্তান এবং আল্লাহর রাসুলের (স.) পরবর্তী প্রতিনিধি হযরত ইমাম আলী ইবনে আবিতালিবের (আ.) জন্ম দিন।

১৫ই রজব: ১. ইতিহাসের নির্যাতিতা কারবালা আর্দশের পতাকাবাহী বীর নারী হযরত যায়নাবের ওফাত দিবস।

২. আজকের এই দিনে মুসলমানদের কেবলা পরির্বতন হয়।

৩. এদিনেই দীর্ঘ তিন বছর শা’বে আবিতালিবে বন্দী ও নির্বাসিত জীবন অবসান ঘটে, মুসলমানরা মুক্ত হন।

অর্থাৎ রজব মহিমান্বিত মাস; আল্লাহ এ মাসের সওয়াবকে বর্ধিত এবং গুনাহকে হ্রাস করেন।

রজব মাসের ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্বের কোন অন্ত নেই। আল্লাহ এ মাসের ভাল কাজের সওয়াবকে কয়েকগুন বাড়িয়ে দেন এবং মন্দ কাজের শাস্তিকে হ্রাস করেন। এ সম্পর্কে একটি তাৎপর্যপূর্ণ হাদীস ইমাম মুসা কাজীম (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদীসে ইমাম (আ.) বলেন, অর্থাৎ রজব মহিমান্বিত মাস; আল্লাহ এ মাসের সওয়াবকে বর্ধিত এবং গুনাহকে হ্রাস করেন।’ আমরা যদি এ হাদীসের মর্মার্থকে বিবেচনা করি তাহলে বুঝতে পারব যে, আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ মাসকে অতিবাহিত করছি।

রজব মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে শাবিস্তান প্রতিবেদক বিশিষ্ট ইসলামী গবেষক হযরত আয়াতুল্লাহ ফারহীর সাথে আলোচনায় মিলিত হয়। এখানে তা সারাংশ আকারে পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুল ধরছি-

প্রশ্ন: রজব মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ মাস মু’মিনের অন্তরে আশা ও উৎসাহের সৃষ্টি করে। এ মাসের ইবাদত-বন্দেগী এবং দোয়ার মাধ্যমে বান্দারা শয়তানের বন্দিদশা থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর রহমত ও বরকতের মাস রমজানে প্রবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। কিভাবে আমরা এক্ষেত্রে সঠিক ও যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারি?

উত্তর: বস্তুত: রজব মাস হচ্ছে রমজান মাসের প্রস্তুতিকাল। যদি কেউ রমজান মাসের পরিপূর্ণ ফজিলত ও বরকতকে অনুধাবন করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই রজব মাস থেকে সে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। হাদীসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন; অর্থাৎ রজব মাস হচ্ছে মজবুত রশি; যে কেউ উক্ত রশিকে শক্তভাবে আকড়ে ধরবে, সে আমার নিকট পৌছাতে পারবে।’ এটা থেকে বুঝা যায় রজব মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অসীম ও অনন্ত। কেননা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এ মাসকে মজবুত রশির সাথে তুলনা করেছেন। যে রশির মাধ্যমে বান্দারা আল্লাহর নিকট পৌছাতে পারে। তবে এ রশিকে আকড়ে ধরতে হলে আমাদেরকে অবস্যই আত্মশুদ্ধি ও আত্ম সংশোধনের পথ বেছে নিতে হবে। ইসলামে ঘোষিত হালাল ও হারামকে যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। শুধুমাত্র ওয়াজিব ও ফরজ আমল করলেই যথেষ্ট নয়; বরং মুস্তাহাব আমলসমূহের প্রতিও মনোনিবেশ করতে হবে।

যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা রাখবে সে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করবে এবং আল্লাহর গজব থেকে দূরে থাকবে এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ থেকে একটি দরজা তার প্রতি বন্ধ করে দেওয়া হবে।”হযরত ইমাম মুসা কাজিম (আ.) থেকে বর্ণিত যে, “যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা পালন করবে জাহান্নামের আগুন তার কাছ থেকে এক বছরের পথের সমান দূরে সরে যায় আর যে ব্যক্তি তিন দিন রোজা রাখে তার উপর বেহেশত ওয়াজিব হয়ে যায়। পুনশ্চ: তিনি এরশাদ করেন, রজব হলো বেহেশতের একটি স্রোতস্বিনী জলধারার নাম যা দুধের চেয়ে অধিক শুভ্র এবং মধুর চেয়ে মিষ্টি। যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা রাখবে অবশ্যই সে সেই ¯্রােতস্বিনীর পানি পান করবে।

সুতরাং রজব মাসকে কোন অবস্থাতেই হাত ছাড়া করা উচিত হবে না। কিংবা অবহেলা ও উদাসীনতার মধ্য দিয়ে এ মাসের ফজিলতপূর্ণ দিনগুলিও অতিবাহিত করা আদৌ সমীচীন নয়। কেউ কেউ হয়তো এমন ধারণা করতে পারে যে, রমজান মাস তো এখনও অনেক দূরে। আমরা রমজান মাস আসার কিছু দিন পূর্বে নিজেকে প্রস্তুত করে নিব। কিন্তু কোন বিবেকবান ও জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি কখনও এমন ধারণা করতে পারে না। হয়তো এমনও হতে পারে রমজান মাস আসার আগেই কেউ এ পৃথিবী ত্যাগ করে চলে গেল। এখানে রজব মাসকে রমজান মাসের প্রবেশমুখ বলা হয়েছে এ অর্থে যে, আত্মিকভাবে রমজান মাসে প্রবেশ করা; না শারিরিকভাবে। এমনও হতে পারে যে, কেউ শারিরিকভাবে রমজান মাসে প্রবেশ করেছে; কিন্তু আত্মিক ও মানসিকভাবে রমজান মাসের জন্য প্রস্তুত হতে পারি নি। (সংগৃহিত: সাখাওয়াত উল্যাহ, সহ-সম্পাদক,

Please follow and like us:

Check Also

ঢাকায় প্রথম মহিলাদের ঈদের জামাত

বাংলায় মুসলমান সমাজে নারীদের প্রতিকূলতার ইতিহাস অনস্বীকার্য। নারীদের শিক্ষা, চিকিৎসা, বিবাহ ও অন্যান্য ব্যাপারে ইসলামের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।