এই যুদ্ধের আরেক নামই জিহাদ: তসলিমা নাসরিন

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: নারীদের পোশাক নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে পড়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই তোলপাড় চলছে। এ জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। এবার এ বিষয়ে মন্তব্য করলেন নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তার মতে, মোশাররফ করিমকে যদি ক্ষমা চাইতে হয়, তবে দেশে অন্ধকার যুগ চলছে।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের এক অনুষ্ঠানে মোশাররফ করিম বলেন, ‘একটা মেয়ে তার পছন্দমতো পোশাক পরবে না? আচ্ছা পোশাক পরলেই যদি প্রবলেম হয়, তাহলে সাত বছরের মেয়েটির ক্ষেত্রে কী যুক্তি দেব, যে বোরকা পরেছিলেন তার ক্ষেত্রে কী যুক্তি দেব? কোনো যুক্তি আছে?’

এরপর মোশাররফের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সমালোচনা শুরু করেন অনেকে। সামাজিক মাধ্যমে উঠে বিতর্কের ঝড়। এ প্রেক্ষিতে নিজের ফেসবুক পেজে ক্ষমা চান মোশাররফ।

লেখেন, ‘আমি পোশাকের শালীনতায় বিশ্বাসী। এবং তার প্রয়োজন আছে। এই কথাটি সেখানে প্রকাশ পায়নি। ধর্মীয় অনুভূতি তে আঘাত করা আমার অভিপ্রায় না। এ ভুল অনিচ্ছাকৃত। আমি অত্যন্ত দুঃখিত। দয়া করে সবাই ক্ষমা করবেন।’

এ প্রসঙ্গে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকউন্টে তসলিমা লিখেছেন, মোশাররফ করিম বাংলাদেশের টিভি নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা। তিনি সেদিন কিছু কথা বলেছেন স্টুডিওর দর্শকদের উদ্দেশে। মেয়েদের যৌন হেনস্তার জন্য পোশাক নাকি অন্য কিছু দায়ী! যা বললেন তা এমন কোনও বিপ্লবী কথা নয়। পোশাক যদি দায়ী, তাহলে ৭ বছর বয়সী মেয়ে কি কোনও যৌন উত্তেজক পোশাক পরে যে তাকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়? বোরকা পরা মহিলাই বা কী কারণে যৌন হেনস্তার শিকার হয়? মেয়েদের পোশাক নয়, পুরুষের নোংরা অন্তরই ধর্ষণের জন্য দায়ী। সুতরাং অন্তরের ময়লা দূর করতে হলে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে, এই যুদ্ধের আরেক নামই জিহাদ।’

তসলিমা আরও লেখেন, ‘মোশাররফ সেই ভালোমানুষি সংজ্ঞা দিয়েছেন জিহাদের। মোশাররফের মতো সাদামাটা কথাবার্তা যদি মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত দিয়ে থাকে, আর সেই কারণে তাকে যদি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়, তাহলে তো অন্ধকার যুগ চলছে দেশে। মোশাররফকে ক্ষমা চাইতে হলো তাদের কাছে, যারা মনে করে মেয়েদের স্বল্প পোশাকের কারণেই পুরুষরা তাদের ধর্ষণ করে, যারা মনে করে বোরকা আর হিজাব পরে ধর্ষণ বন্ধ করতে পারে মেয়েরাই।’

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।