প্রেমিককে নিয়ে স্ত্রী যেভাবে হত্যা করে আইনজীবী রথীশকে

রংপুর: রংপুরে নিখোঁজ থাকা আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবু সোনাকে ২৯ মার্চ রাতেই হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ।
রংপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাবু সোনার স্ত্রী রিতা ভৌমিক ও তার এক সহযোগী জড়িত বলে জানিয়েছেন তিনি।
বেনজির আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক অশান্তি, বিদ্বেষ ও অবিশ্বাস থেকেই রংপুরের বিশেষ পিপি রথিশকে হত্যা করা হয়েছে। এর পেছনে ছিল তার স্ত্রী রিতা ভৌমিকের ‘পরকীয়া’ কর্মকাণ্ড।
তিনি জানান, আটকের পর রথিশের স্ত্রী রিতা ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পেরেছি, দুই মাস আগেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল তারা। তবে নানা কারণে সেটা তখন সম্ভব হয়নি। রিতা ভৌমিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাতে রথিশের লাশ উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের মহাপরিচালক জানান, এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে গ্রেফতারকৃতদের বিচারের মুখোমুখি করা। এ ব্যাপারে তদন্ত হবে। তদন্ত হলেই আমরা বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবো।
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রিতা ভৌমিক ও তার ‘প্রেমিক’ কামরুল ইসলাম জাফরীকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে রংপুর নগরীর তাজহাট মোল্লাপাড়ার একটি নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় রংপুরের বিশেষ পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবু সোনার লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব। লাশটি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
রংপুর র‌্যাব-১৩-এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আরমিন রাব্বি জানান, নিহত আইনজীবী বাবু সোনার স্ত্রী ও তার প্রেমিকের জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে তাদের দেখানো জায়গা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহতের ছোট ভাই সাংবাদিক সুশান্ত ভৌমিকসহ স্বজনেরা পায়ের জুতা দেখে বাবু সোনার লাশ শনাক্ত করেন। দীপা ভৌমিক ও কামরুল ইসলাম জাফরী একে অপরের সহকর্মী। তারা দুজনই তাজহাট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
র‌্যাব জানায়, এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে দীপা ভৌমিককে তাদের নগরীর বাবুপাড়ার বাসা থেকে আটক করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, তার স্বামীর লাশ তাজহাট মোল্লাপাড়া মহল্লার তার প্রেমিক কামরুল ইসলাম জাফরীর বড় ভাই খাদেমুল ইসলাম জাফরীর নির্মাণাধীন বাসায় আছে। পরে দীপা ভৌমিক ও কামরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাসায় গিয়ে বস্তার মধ্যে বালুর ভেতরে লুকিয়ে রাখা লাশ উদ্ধার করা হয়।
লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে রংপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু, নিহত বাবু সোনার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক, ভগ্নিপতি অধ্যাপক ডা. অনিমেষ মজুমদারসহ অনেকে ঘটনাস্থলে যান। তারা বাবু সোনার লাশ শনাক্ত করেন।
রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, গত শুক্রবার আইনজীবী বাবু সোনা নিখোঁজ হন। ঘটনাটি জানানোর পর থেকেই তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এর পরদিন শনিবার নগরীর রাধাবল্লভ এলাকার বাসা থেকে বাবু সোনার স্ত্রী দীপা ভৌমিকের প্রেমিক কামরুল ইসলাম জাফরীকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এরপর দীপা ভৌমিককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়ার পর বাবু সোনার লাশ উদ্ধার করা হয়।

Please follow and like us:

Check Also

এদেশের সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি: কাদের

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এদেশের সাম্প্রদায়িকতার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।