গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে জামায়াতের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা:ক্ষুব্ধ জোটের শরিকরা

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:  খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এককভাবে মেয়র প্রার্থী দেবে জামায়াতে ইসলামী। এরই মধ্যে গাজীপুরে মহানগর আমীর অধ্যক্ষ মো. সানাউল্যাহ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। খুলনায় এখনও তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। দু-এক দিনের মধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। তবে এককভাবে

মেয়র পদে জামায়াত প্রার্থী দেয়ায় ২০ দলীয় জোটের শরিক অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছে।অবশ্য জোটের নেতৃত্বে থাকা বিএনপি বলছে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করা হবে। তারা দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেই জোটগতভাবে একক মেয়র প্রার্থী দেবে।

জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, ‘শুধু জাতীয় নির্বাচনে জোটগতভাবে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত আছে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচনে আলাদাভাবে প্রার্থী দেয়ার সুযোগ আছে।

একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতও দুই সিটিতে মেয়র প্রার্থী দেবে। তবে যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এ ব্যাপারে স্থানীয় ২০ দলের নেতারা আলোচনায় বসবেন। সেখানে মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান  বলেন, ‘যে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেই পারে। বিএনপির মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত হলে জোটের বৈঠক ডাকা হবে। বৈঠকে জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। আশা করছি দুই সিটিতে জোটগতভাবেই মেয়র পদে প্রার্থী দেয়া হবে।’

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বুধবার মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মো. সানাউল্যাহ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। গাজীপুর উন্নয়ন পরিষদের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচন

করবেন। অন্যদিকে জামায়াতের একটি সূত্র জানিয়েছে, খুলনা সিটি কর্পোরেশনেও মেয়র পদে প্রার্থী দেবে দলটি। তবে প্রার্থী কে হবেন তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। খুলনা মহানগর আমীর আবুল কালাম আজাদ ও সেক্রেটারি জেনারেল মাহফুজুর রহমানের মধ্যে যে কোনো একজনকে চূড়ান্ত করা হতে পারে। দু-এক দিনের মধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।

জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, অতীতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোয় মেয়র প্রার্থী চূড়ান্তকরণের সব দায়িত্ব জোটের প্রধান শরিক বিএনপির ওপর ছেড়ে দিয়েছিল জামায়াত।

এর বিনিময়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের ছাড় দেয়ার প্রস্তাব জামায়াত করলেও তাতে খুব একটা সাড়া দেয়নি বিএনপি। এতে কাউন্সিলর পদে তাদের নিশ্চিত জয় হাতছাড়া হয়েছে। তাই তারা খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আদালতের নির্দেশে স্থগিত হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জামায়াত উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিমউদ্দিনকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছিল জামায়াত। সূত্র জানায়, মেয়র পদে প্রার্থিতা দেয়া জামায়াতের একটি কৌশল।

তারা মূলত মেয়র পদে প্রার্থী দিয়ে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যাপারে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা চায়। এটি হলে বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দেবে জামায়াত।

বিএনপি ও জামায়াতের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, জয়ের সম্ভাবনা আছে জামায়াতের এমন কাউন্সিলর ও মহিলা সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিএনপি ছাড় দিলে মেয়র প্রার্থী দেয়া থেকে বিরত থাকবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত দলটি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান  বলেন, ‘অতীতেও এ রকম ঘটনা ঘটেছে। পরে জোটের বৈঠকে জোটগতভাবে প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত হলে তা সবাই মেনে নিয়েছে। এবারও সে রকমই হবে।

তিনি বলেন, জামায়াতও একটি রাজনৈতিক দল। তাদেরও গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। হয়তো তাদের কিছু দাবি-দাওয়া থাকতে পারে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা হবে।

এদিকে দুই সিটি কর্পোরেশনে জামায়াত প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে ২০ দলীয় জোটের শরিক অনেকে। তাদের মতে, অতীতে স্থানীয় নির্বাচনেও জোটগতভাবেই প্রার্থী দেয়া হয়েছে। জোটের বৈঠকেও জোটগতভাবে প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত আছে।

জোটের শরিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে জামায়াতের মেয়র প্রার্থী দেয়া উচিত হয়নি। জোট ছাড়লে সেটা আলাদা বিষয়।

তবে ধারণা করছি, কাউন্সিলর নিয়ে তাদের দাবি-দাওয়া আছে। সেটির সমাধান হলে মেয়র পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবে জামায়াত।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে জামায়াতের মেয়র পদে প্রার্থী দেয়াটা একটি কৌশল। তারা হয়তো কাউন্সিলর নিয়ে দরকষাকষি করতে এ কৌশল নিয়েছে।

তবে অতীতের মতো এবারও জোটগতভাবে মেয়র প্রার্থী দেয়া হবে। এর আগে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হবে। সেখানেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।’

ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। জোটের ঐক্য অটুট আছে, থাকবে।’

৩১ মার্চ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।

১৫ মে একই দিনে এ নির্বাচনের ভোট হবে। তফসিল অনুযায়ী মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ১২ এপ্রিল; যাচাই-বাছাই ১৫-১৬ এপ্রিল ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ এপ্রিল।

আজ ২০ দলের বৈঠক : এদিকে আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নিয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বৃহস্পতিবার রাতে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকে দুই সিটির প্রার্থিতা নিয়েও আলোচনা হবে। যুগান্তর

Please follow and like us:

Check Also

পৃথিবীর যেসব দেশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিরও উপরে

জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ভয়াবহতার সাক্ষী হতে যাচ্ছে সারাবিশ্ব। প্রতিদিনই একটু একটু করে বৈরি হচ্ছে আবহাওয়া, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।