সেনা মোতায়েনে ভয় কেন : আমীর খসরু

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:  জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে ভয় কেন ? প্রশ্ন রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ভয় পায় বলেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সেনা মোতায়েন চায়না। তিনি বলেন, দেশের যে কোনো ধরনের দুর্যোগ উত্তরণে সেনাবাহিনীর অগ্রনী ভুমিকা রয়েছে। তাহলে একটি নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে এই বাহিনীর ভুমিকা থাকলে ক্ষতি কি?

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। ‘নাগরিক অধিকার ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারটি সরকারের কাছে এতো স্পর্শকাতর হয়ে গেলো কেনো? তা দেশের মানুষ বুঝে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন করে এতোগুলো নির্বাচন হলো একটিও প্রশ্নবিদ্ধ হলো না। অথচ সেনাবাহিনী ছাড়া যেসব নির্বাচন হয়েছে সেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হলো। তাহলে তাদের তদারকিতে নির্বাচনের বিষয়টি স্পর্শকাতর হলো কেন?

তিনি বলেন, তাদের কাছে স্পর্শকাতর কারণ তারা ভয় পাচ্ছে নিজেদের দুর্বলতার কারণে। সেনাবাহিনীর প্রতি কোনো রাজনৈতিক দলের দুর্বলতা থাকলে বুঝতে হবে তারা দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি অন্যায় করছে। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ভুমিকা পালন করলে তাদের ভয় হতো না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, সেনাবাহিনী দেশের মানুষের যে কোনো দুর্যোগের সামনে দাঁড়িয়েছে। ভোটাধিকার কেড়ে মতো এতো বড় বিপদ বা দুর্যোগ আর নেই। এমন দুর্যোগে সেনাবাহিনীর ভুমিকা থাকলে তাদের সমস্যা কোথায়? নিশ্চয়, ডাল মে কুচ কালা হয়া। কোনো সমস্যা অবশ্যই আছে, না হলে তাদের ভয় কেন?

আগামী সংসদ নির্বাচনে মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সেনা বাহিনীর ভুমিকা প্রত্যাশা করছে জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার ক্ষমতায় থাকতে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে উন্নয়নের মিথ্যাচার করছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে উন্নয়নের কথা বলে যাচ্ছে। অধিকার কেড়ে নিয়ে যখন বারবার উন্নয়নের কথা বলতে থাকে তখন আপনাকে বুঝতে হবে এটা একটা নিশ্চিত স্বৈরাচার সরকার। যুগে যুগে এটা হয়ে আসছে। উন্নয়নের কথা বিক্রি করে ক্ষমতা ধরে রাখা।

সরকার উন্নয়নের নামে ধোঁকা দিচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, উন্নয়নের যে মূল ভিত্তি সেগুলো হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান। গত আট বছর আগে দেশের মানুষের যে জীবনযাত্রার মান ছিলো আজকে সেই অবস্থান থেকে ৯/১০ শতাংশ কমে গেছে।

মানবসম্পদ উন্নয়নে আমরা আজ সর্বনিম্ন। আজকে দেশে সাড়ে ৪ কোটি মানুষ বেকার। যাদের চাকরি আছে তাদের জীবন যাত্রার মানও করে গেছে। বাংলাদেশে আজকে ব্যক্তিগত কোনো বিনিয়োগ নেই। বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না। সরকারি বিনিয়োগে যে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে এর টাকাটা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই টাকা সুইস ব্যাংকে যাচ্ছে, লন্ডনে মায়েশিয়া, কানাডাও যাচ্ছে, বাড়ি করছে। এগুলো সব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

বিশ্ব এখন ওপেন। কার বাড়ি কোথায় সব জানা যায়। এগুলো লুকানো সম্ভব নয়। পানামা পেপারসে তাদের নাম এসেছে। ব্যাংকগুলো খারাপ পরিস্থিতি করে রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে দুই বছর আগে, এখনো তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করছে না। কারন এই টাকা চুরি করার পেছনে তাদের লোকজন জড়িত”, বলেন দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

সরকার প্রবৃদ্ধি নিয়ে মিথ্যাচার করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তন হলে বিষয়টি তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। যে দেশে মানুষের চাকরি নেই, ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে-এই পরিস্থিতিতে যদি বলেন ৭ শতাংশ প্রবৃদ্বির কথা এর চেয়ে মিথ্যা আর কিছু হতে পারে না। বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বলছে, এই খবর সত্যি নয়। কারণ অর্থনীতির মাঠ পর্যায়ের যে খবর তার সঙ্গে এই প্রবৃদ্ধির খবরের মিল নেই। এটি বানোয়াট। যখন সরকার পরিবর্তন হবে এটার তদন্ত হওয়া উচিত যে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে মিথ্যা প্রবৃদ্ধি দেখানো।

সংগঠনের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এস এম হাসান তালুকদার, জিনাফের সভাপতি মিয়া মো: আনোয়ার প্রমুখ।

Please follow and like us:

Check Also

নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

চট্টগ্রামে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।