ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আ’লীগ সাধারণ সম্পাদকের বৈঠক;শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: .ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের ফটোসেশন (ছবি- সংগৃহীত)ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের ফটোসেশন (ছবি- সংগৃহীত)

দিল্লি সফররত আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সৌজন্য সাক্ষাতের কথা ছিল। কিন্তু সোমবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতের শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়েও স্পষ্ট মতামত জানালেন মোদি। ফলে সৌজন্য সাক্ষাতের মোড়কে এই বৈঠক এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও সাহসী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে মোদি এটাও স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তার সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থন কার দিকে!
বিদেশের কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল কিংবা পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলের হাজির থাকার ঘটনা বিরল। এই দু’জন তো বটেই, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন ও মুখপাত্র রবীশ কুমারও ছিলেন মোদির সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈঠকে।
বিজেপি নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের বৈঠক (ছবি- বিজেপি সাধারণ সম্পাদকের টুইটার থেকে নেওয়া)অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযূষকান্তি ভট্টাচার্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও আবদুর রহমানের মতো শীর্ষ নেতারা। উপস্থিত ছিলেন দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলিও।
বৈঠকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গের অবতারণা করেন মোদি নিজেই। শুরুতেই তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এ সময় তিনি বলে, ‘একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে সত্যি করে পাকিস্তান ভেঙে যে রাষ্ট্রের জন্ম হয়, আজ সব সূচকে তারা সেই পাকিস্তানের চেয়ে কত এগিয়ে গেছে— ভাবাই যায় না। আজ কোথায় পাকিস্তান, আর কোথায় বাংলাদেশ!’
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে ওবায়দুল কাদের (ছবি- সংগৃহীত)তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গেও মোদি নিজেই বলেন, ‘যত দ্রুতসম্ভব এই চুক্তি যেন সম্পাদন করা যায়, সেই লক্ষ্যে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
রোহিঙ্গা সংকটেও বাংলাদেশের ভূমিকাকে পুরোপুরি সমর্থন জানিয়ে মোদি বলেন, ‘ভারত চায়, যত দ্রুতসম্ভব এই সংকটের নিষ্পত্তি হোক এবং রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের বাসভূমিতে ফিরতে সক্ষম হোক।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এমন খোলামেলা মতবিনিময়ে উচ্ছ্বসিত আওয়ামী লীগ নেতারাও। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে অল্প সময়ের জন্য হোটেলে ফিরে আবার বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য বেরিয়ে যাওয়ার ফাঁকে ওবায়দুল কাদের শুধু বলে গেলেন, ‘অসম্ভব ভালো মিটিং হয়েছে। ভেরি ভেরি পজিটিভ আউটকাম!’
বৈঠকে উপস্থিত দুই দেশের ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা (ছবি- বিজেপি সাধারণ সম্পাদকের টুইটার থেকে নেওয়া)পরে সন্ধ্যায় দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির নতুন কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক হয় বিজেপি নেতাদের। তাতে বিজেপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব, ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিনয় সহস্রবুদ্ধেসহ দলের সিনিয়র নেতারা।
বিজেপির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ-সম্পর্কিত বিষয়গুলো মূলত রাম মাধবই দেখাশুনো করেন। আওয়ামী লীগকে বিজেপির পক্ষ থেকে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন তিনিই। আর ২০১৬ সালের নভেম্বরে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বিজেপির যে নেতারা উপস্থিত হয়েছিলেন, সেই দলের নেতৃত্বেও ছিলেন ড. সহস্রবুদ্ধে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের (ডানে) ও বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব (ছবি- বিজেপি সাধারণ সম্পাদকের টুইটার থেকে নেওয়া)ভারতে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বরাবরই ভালো। তবে ভারতের শাসক দলের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিরা দিল্লিতে আনুষ্ঠানিক সফরে আসছেন ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক পর্যন্ত করছেন— এ ঘটনা একেবারেই নজিরবিহীন।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘আওয়ামী লীগকে এই আমন্ত্রণের মধ্যে দিয়ে আমরা এটাই বোঝাতে চাই যে বাংলাদেশে আমাদের সমর্থন গণতন্ত্রের প্রতি, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রতি।

—————–০————-

ঢাকা : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ সোমবার দিল্লিতে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশকে উন্নতি ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথে দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার জন্য গতকাল দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্চ প্রশংসা করেছেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, মোদি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নতির দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবনে দেখা করার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে মোদি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন, তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেভাবেই দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন।’

সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবি প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। গতকাল রোববার ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে তিন দিনের ভারত সফরে যান আওয়ামী লীগের ১৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।

প্রতিনিধিদলটি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করার পাশাপাশি ভারতের সংসদ ভবনসহ মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধ পরিদর্শন করার কথা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয় নিয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।

ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে প্রতিনিধি দলে আছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান; সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মিছবাহউদ্দিন সিরাজ, এনামুল হক শামীম ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল; প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ প্রমুখ।

প্রতিনিধি দলের সম্মানে গতকাল রোববার দিল্লিতে নৈশভোজের আয়োজন করে বাংলাদেশ মিশন। নৈশভোজে কূটনীতিবিদসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নেন।

Please follow and like us:

Check Also

আশাশুনির বদরতলা-ব্যাংদহা সড়কে পল্লী বিদ্যুতের পরিত্যাক্ত খুটির রড: l দুর্ঘটনার শঙ্কা

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান( আশাশুনি) সাতক্ষীরা।। আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের বদরতলা টু ব্যাংদহা সড়কে পল্লী বিদ্যুতের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।