স্কুল শিক্ষার্থীদের দিয়ে শিক্ষকের জমির ধান কাটানোর অভিযোগ

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:  গৌরীপুরে সোমবার স্কুল শিক্ষার্থীদের দিয়ে শিক্ষকের জমির ধান কাটানো ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে ধান কাটায় নিয়োজিত ছাত্রদের খাওয়ানোর জন্য রান্না করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে স্কুলশিক্ষক আবু সাঈদের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষক উপজেলার পাছার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা সবাই পাছার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
অভিভাবকদের অভিযোগ, এলাকায় প্রতি কাঠা জমির ধান কাটা ও মাড়াই করতে প্রায় ১৫শ টাকা খরচ হয়। ওই টাকা বাঁচাতেই আবু সাঈদ শিক্ষার্থীদের দিয়ে নিজের জমির ধান কাটাচ্ছেন। কিন্তু তিনি প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আবু সাঈদের বাড়ি উপজেলার রাইশিমুল গ্রামে। তিনি পাছার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি গ্রামে ‘সমাধান প্লাস’ নামক একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন। ওই কোচিং সেন্টারে স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। রবিবার শিক্ষার্থীদের নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে নিজের ধান ক্ষেতে নিয়ে যান আবু সাঈদ। পরে সারাদিন শিক্ষার্থীদের দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করায়।
সোমবার দুপুরে রাইশিমুল গ্রামে আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ৬/৭জন স্কুলছাত্রী দুপুরের রান্নার কাজে ব্যস্ত। আর বাড়ির সামনে ধান ক্ষেতে প্রখর রোদের মধ্যে ছাত্রদের একটি দল ধান কাটছে। আরকেটি দল সেই ধানের বোঝা মাথায় নিয়ে ওই শিক্ষকের বাড়ির উঠানে নিয়ে আসছে মাড়াই করার জন্য। এসময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে ছাত্ররা ধান কাটা ফেলে ছুটাছুটি করে পালিয়ে যেতে শুরু করে। পরক্ষণেই আবু সাঈদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আবারো ছাত্রদের ধান ক্ষেতে নিয়ে আসে কাজ করানোর জন্য।
ধান কাটায় নিয়োজিত কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, সাঈদ স্যারের প্রতি কাঠা জমির ধান সাতশ টাকা চুক্তিতে কাটছি। তবে আমাদের দলের অনেকই স্কুলে না গিয়ে টাকা ছাড়াও ধান কাটার কাজ করেছে।
আবু সাঈদ বলেন, পাছার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্যান্য স্কুলের ২২জন দরিদ্র শিক্ষার্থী শ্রমিক হিসেবে আমার জমিতে ধান কাটছে। ওরা আমার কোচিংয়ে পড়াশোনা করে।
প্রধানশিক্ষক শাহ আরশাদুল হক বলেন, গত দুদিন ধরে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম হচ্ছে। পরে জানতে পারি শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাঁকি দিয়ে এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের জমিতে ধান কাটছে। যেসব শিক্ষার্থী ধান কাটছে তাদের অধিকাংশই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। কিন্তু কেন তারা পরের জমিতে ধান কাটছে বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়।
গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম বলেন, আবু সাঈদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের দিয়ে ধান কাটানোর বিষয়টি শোনেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের দিয়ে ধান কাটানোর বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, যে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ধান কাটায় অংশগ্রহণ করেছে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Please follow and like us:

Check Also

কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রী’র আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিনিধি :সাতক্ষীরার কলারোয়ায় স্বামী আজহারুল ইসলামের পুরুষাঙ্গ কেটে দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণা খাতুন আত্মহত্যা করেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।