স্ত্রী হত্যার দায়ে সাতক্ষীরা কারাগারে আটক কুদ্দুসকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধবী ছাত্রী স্ত্রী মাশহুদা সুলতানাকে গলায় ওড়না পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র স্বামী আবদুল কুদ্দুসকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা দায়রা জজ  প্রথম আদালতের বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন। আসামি আব্দুল কুদ্দুস এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সাজা প্রাপ্ত আসামী আব্দুল কুদ্দুস (২৫) খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার শ্রীকন্ঠপুর গ্রামের মৃত মহিউদ্দীন সরদারের ছেলে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের মৃত শাহসূফী আহম্মদ মাও. মোহাম্মদ এলাহি বক্সের মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১ম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী মাশহুদা সুলতানা ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র আব্দুল কুদ্দুস ২০১১ সালের জুন মাসে দুইজন দুজনকে ভালাবেসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামী আব্দুল কুদ্দুস অন্য আর একটি মেয়ের সাথে প্রেম ঘটিত ব্যাপারে জড়িয়ে পড়েন। স্বামীর এই অনৈতিক কর্মকান্ডে তার স্ত্রী প্রায়ই বাঁধা দিতেন। এক পর্যায়ে ২০১২ সালেরর ২২ জুন আব্দুল কুদ্দুস তার শ্বশুর বাড়ি সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের পীর বাড়িতে (হাসান পীর) বেড়াতে এসে স্ত্রী মাশহুদার সাথে এই বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যরা রাতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেন। এ সময় আব্দুল কুদ্দসের শাশুড়িসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদের মেয়েকে তালাক দিতে বললে কুদ্দুস ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে রাতে কুদ্দুস আলাদা রুমে ঘুমাতে যান এবং তাঁর স্ত্রী মাশহুদা মায়ের রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। গভীর রাতে আব্দুল কুদ্দুস তার স্ত্রীকে মোবাইলে তার রুমে ডেকে নিয়ে আসেন এবং দৈহিক মেলামেশা করেন। একপর্যায়ে মাশহুদা তার মায়ের ঘরে যেতে চাইলে আসামী কুদ্দুস বাঁধা দেন। মাশহুদা চিল্ল চিল্লি করতে গেলে আসামী কুদ্দুস তার গলায় ওড়না ও গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। ওই রাতে ঘরে স্ত্রীর লাশ রেখে আসামী কুদ্দুস গোসল করেন এবং  ফজরের নামাজ আদায়ের পর শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় গিয়ে আত্মসমার্পণ করে করে পুলিশকে জানান, তিনি তার স্ত্রী মাশহুদাকে হত্যা করেছেন। কুদ্দুস পরে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দেন।

নিহত মাশহুদার চাচা আব্দুল্লাহিল গালিব বাদী হয়ে আসামী আব্দুল কুদ্দুসের নামে সদর থানায় ওই দিনই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজমুল হাসান ওই বছরের ১৫ আগস্ট দীর্ঘ তদন্ত শেষে আসামীর নামে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।

মামলার নথি ও ১২ জন স্বাক্ষীর জেরা-জবানবন্দি, সুরোতহাল ও ময়না তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা শেষে বিচারক গতকাল বুধবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে এ মামলার আসামী আব্দুল কুদ্দুসকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাস কারাদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। আসামী কুদ্দুস গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই রায় ঘোষণার সময় পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বছর জেল হাজতে আছেন।

এ মামলায় আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন, সাবেক পিপি এড. আবু বক্কর ছিদ্দিক। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সাবেক পিপি এড. এসএম হায়দার ও এপিপি এড. দাশ কার্ত্তিক চন্দ্র।

রায় ঘোষণার আগে ও পরে আসামী কুদ্দুসের প্রতিক্রিয়া: আসামী পক্ষের আইনজীবী এড. আবু বক্কর সিদ্দিক রায় ঘোষণার পূর্বে আসামী কুদ্দুসকে বলেন, একটু পরেই তোমার ফাঁসির আদেশ হতে পারে- উত্তরে আসামী বলেন, কোন ব্যাপার না। এরপর আদালত রায় ঘোষণার পর আসামী কুদ্দুস কাঠগড়ায় স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, স্যার- আমি ৬ বছর জেলে আছি, আমার এই সাজাটা যাবজ্জীবন সাজা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েন।

আদালতের পর্যবেক্ষণ: রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। যদিও মামলায় কোন প্রত্যক্ষ সাক্ষী নেই, তবুও যেহেতু আসামী একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং আইনও সেটি সমর্থন করে। এছাড়া পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও নথিপত্র পর্যালোচনায় হত্যার ঘটনাটি রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করতে সক্ষম হয়েছেন। যেকারণে এই মামলায় মৃত্যুদন্ড দেয়া উচিত। কিন্তু যেহেতু আসামীর বয়স (ঘটনার সময় ২০ বছর) কম এবং সে দীর্ঘদিন জেল হাজতে থেকে বিচার প্রার্থণা করছেন, বিধায় তাকে মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের দন্ডাদেশ দেয়া হল।

——0——–

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী স্ত্রী মাশহুদা সুলতানাকে হত্যার দায়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র স্বামী আবদুল কুদ্দুসকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন সাতক্ষীরার একটি আদালত।

বুধবার সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম জনাকীর্ন আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন। আসামি আবদুল কুদ্দুস এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে ২০১২ সালের ২২ জুন স্বামী আবদুল কুদ্দুস তার শ্বশুর বাড়ি সাতক্ষীরার খানপুর গ্রামে পীর পরিবারে বেড়াতে আসেন। রাতে তিনি তার স্ত্রী মাশহুদা সুলতানাকে কলার সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন অবস্থায় রশি ও গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। ভোরে তিনি ফজরের নামাজ আদায়ের কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সকালে ঘাতক কুদ্দুস সাতক্ষীরা থানায় আত্মসমর্পণ করে পুলিশকে জানান তিনি তার স্ত্রী মাশহুদাকে হত্যা করেছেন। কুদ্দুস পরে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। কুদ্দুস খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার শ্রীকন্ঠপুরের মো. মহিউদ্দিনের ছেলে।
প্রকৃত ঘটনা হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী স্ত্রী মাশহুদা সুলতানা ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবদুল কুদ্দুস সম্পর্ক করে বিয়ে করে। বিযের বছর খানেক পর মাশহুদা সুলতানা আবদুল কুদ্দুসের সাথে সম্পর্কেও অবন্নতি হয়। ২০১২ সালের ২১জুন আবদুল কুদ্দুস সাতক্ষীরার খানপুর গ্রামে পীর সাহেবের মেয়ে মাশহুদা সুলতান কে নিয়ে যাওয়ার জন্য মেয়ের বাড়িতে আসে। এক পর্যায়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজন মাশহুদা সুলতার সাথে কুদ্দুসকে একত্রে থাকতে বাধা দেয়। রাতের কোন এক সময়ে কুদ্দুস মাশহুদা সুলতানার ঘরে প্রবেশ কর। পরে রাতের কোন এক সময়ে মাশহুদা সুলতা কে হত্যা করে কুদ্দুস। হত্যার পর সকালে কুদ্দুল সাতক্সীরা সদর থানাতে এসে হত্যার ঘটনা খুলে বলে।
আদালত বলেন আবদুল কুদ্দুস কর্তৃক স্ত্রী মাশহুদাকে হত্যার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও তার বয়স বিবেচনায় তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

সরকার পক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. কার্তিক চন্দ্র দাস। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাড. হায়দার আলি ও অ্যাড. আবুবকর সিদ্দিক । বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলাকারাগারে টুপি বুনে সময় পার করেন কুদ্দুস।

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।