সাতক্ষীরায় বিদ্যুৎ বিভাগের নতুন সংযোগ নিতে নানা হয়রানি * সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষ এখনো বিদ্যুৎ পায়নি

আবু সাইদ বিশ্বাসঃ সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরায় চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম থাকায় সাড়ে তিন লক্ষাধীক মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। ২২ লক্ষ মানুষের বিপরীতে ১৮ লক্ষ ৩৯ হাজার ৩৭০ ব্যক্তিকে বিদ্যুৎ এর আওতায় বলে বিদ্যুৎ বিভাগের দাবী। নতুন করে সংযোগ দেয়া হলেও গ্রাহকদের পোয়াতে হচ্ছে নানা হয়রানি। সরকারের নির্দেশনা মেনে বিদ্যুৎ সংযোগ চাইতে গেলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রাহকদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম নিতির তোয়াক্কা না করে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।
সূত্র মতে বর্তমানে জেলাতে বিদ্যুৎ এর গ্রাহক রয়েছে ৩ লক্ষ ৬৭ হাজার ৮৭৪ জন। আরো প্রায় ৫০ হাজার নতুন সংযোগ দেয়ার কাজ চলছে। বিদ্যুতের আওতায় না আসায় সাতক্ষীরায় সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষ এখনো অন্ধকারে রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব মতে ৭২ হাজার পরিবারের মাঝে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ এর আওতায় ২০ ভাগ মানুষের কাছে এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ওজোপাডিকোর দাবী সাতক্ষীরা পৌরসভাতে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। জেলাতে পল্লী বিদ্যুৎ এর গ্রাহক ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার এবং ওজোপাডিকোর গ্রাহক ৩২ হাজার ৮৭৪ জন। তালা,কলারোয়া ও দেবহাটায় শতভাগ বিদ্যুৎ এর আওতায় আনার কাজ চলছে।
সূত্র জানায় সাতক্ষীরা ওজোপাডিকোর অধীনে প্রতিদিনের গড় চাহিদা রয়েছে ১৪ মেগাওয়াট। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুৎ এ গ্রাহকের জন্য চাহিদা রয়েছে ৭৪ মেগাওয়াট। ৮৮ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ৮৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা জানান বিনেরপোতা উপকেন্দ্রের উপসহকারী। পিডিবিতে বিদ্যুৎ এর কোন ঘাটতি না থাকলেও লোর্ডশেডিং রয়েছে বলে অভিযোগ ।
সরকারের নির্দেশনা মেনে বিদ্যুৎ সংযোগ চাইতে গেলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রাহকদের হয়রানি করছে।
গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী নানা অনিয়মের মাধ্যমে সংযোগ পাইয়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়ম নিতির তোয়াক্কা না করে সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
ভোগান্তির শিকার গ্রাহকদের অযৌক্তিক ও অন্যায় বিল আরোপের শিকার হচ্ছেন। বেশির ভাগ ভুক্তভোগী গ্রাহক ছোটাছুটি করে বিল সংশোধন করতে পারেন না। হয়রানি এড়াতে অনেক গ্রাহক ভুল বা অযৌক্তিক বিলের বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করে দেন। আবার অনেকে চেষ্টা করেও প্রমাণের অভাবে ভুল বিল সংশোধন করতে পারেন না। মিটারে কারিগরি ত্রুটি এবং মিটার রিডারদের খামখেয়ালি ও দুর্নীতির কারণে ভুল বিদ্যুৎ বিলে হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা। মিটার রিডারসহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রতারণার শিকার হচ্ছেন তারা।
উৎপাদন বৃদ্ধির সমানতালে বিতরণ, সঞ্চালন অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার উন্নতি না হওয়ার কারণে এর সুফল কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। জরাজীর্ণ, দুর্বল সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, বিদ্যুিবভ্রাট। স্থানীয় বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে অনেক জায়গায় গ্রাহককে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। স্থাপনাগত দুর্বলতার কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না চুরি, অপচয়।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুতের নতুন মিটার সংযোগ পেতে সর্বসাকুল্য তিন হাজার টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে আবেদন ফি ১শ’ টাকা। জামানত ফেরতযোগ্য ৬শ’/৮শ’ টাকা। ইলেকট্রিশিয়ানদের মজুরি প্রথমে ওয়ারিং ৫শ’ টাকা ও পরে মিটার সংযোগ ৫শ’ টাকা। বৈদ্যুতিক বোর্ড সরঞ্জামসহ ২ হাজার টাকা। কিন্তু দালাল/ ইলেকটিশিয়ানরা অফিসের সঙ্গে যোগ সাজসে নতুন মিটারে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করে থাকে।
বিদ্যুৎ বিতরণকে সেবার আওতায় ধরে হিসাব করা হলেও সংস্থাটি তার অবস্থান ধরে রাখতে পারছে না। সেবার মান উন্নয়নের চেয়ে আয়ের দিকে তাদের দৃষ্টি এখন বেশি। বিদ্যুিেন্দ্রক যেকোনো ত্রুটি মেরামতের প্রাথমিক ব্যয় বহন করার কথা সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানির। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এজন্য নগদ অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। আবার মাস শেষে এ বাবদ দ্বিতীয়বার মাশুলও পরিশোধ করছেন তারা। অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে ডিমান্ড চার্জের নামেও। এ অভিযোগ শুধু শহরে নয়, গ্রামীণ গ্রাহকদেরও। নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে ৫ শতাংশ হারে বিলম্ব মাশুলের বিধান রয়েছে। এর বাইরে আর কোনো মাশুল ধায়েৃর সুযোগ নেই। কিন্তু জরিমানার এ নিয়ম নিয়েও আপত্তি রয়েছে গ্রাহকদের। বিল ইস্যু ও পরিশোধের মাঝখানে সময় থাকে সাধারণত ১০-১২ দিন। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাহকরা অনেক ক্ষেত্রেই বিল হাতে পাওয়ার পর তা পরিশোধে পর্যাপ্ত সময় পান না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রতি দিন ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সাতক্ষীরা ও পল্লি বিদ্যুৎ বিভাগ পাটকেলঘাটায় শতাধীক অভিযোগ জমা পড়ে। ওজোপাডিকোতে অভিযোগ দিতে আসেন সুলতান পুরের মারুফ হাসান। তার অভিযোগ চলতি মাসের বিদ্যুত বিলে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। কয়েক হাজার টাকার বেশি বিল করা হয়েছে। ওজোপাডিকোতে অভিযোগ দিতে আসা কয়েক জনের সাথে গতকাল কথা হয়। বিভিন্ন অনিয়ম,দুর্ণিতি ও হয়রানির কথা তুলে ধরেন তারা।
ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সাতক্ষীরা এর আবাসিক নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হাবিবুর রহমান জানান,শহরের অবৈধ সংযোগ সহ যে কোন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক রবীন্দ্রনাথ জানান,নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া যে কোন হয়রানি বন্ধ করতে তিনি যা যা করা দরকার তাই করবে বলে জানন। লোডশের্ডি বন্ধ করতে ও নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান।

Please follow and like us:

Check Also

অনিশ্চয়তার নতুন যুগে মধ্যপ্রাচ্য

ইউক্রেন-রাশিয়া রেশ কাটতে না কাটতেই ফিলিস্তিনের গাজায় শুরু হয় ইসরাইলি আগ্রাসন। এরপর থেকে অশান্ত হতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।