সাতক্ষীরার আলোচিত মুক্তামনি দাদার কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত:র্স্বস্তরের মানুষের সমবেদনা জ্ঞাপন

আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা: সবাইকে কাঁদিয়ে নিজ দাদার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হল আলোচিত মুক্তামনি। বুধবার জোহরের নামাজের পর ২.১০ মিনিটে স্থানীয় মসজিদে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাদা ইজাহার গাজীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। এ সময় মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম গাজী, মা আসমা বেগম, বোন হীরামণি, দাদি সালেহা বেগমসহ হাজারো মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়ে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে গণমাধ্যম কর্মীরা।
এর আগে সকাল ৭ টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় মুক্তামণির। বাদ জোহর বাড়ির পাশেই তার জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজারো মানুষ অংশ নেন।
মুক্তামনির চাচা ওসমান গনি বলেন, মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মেরিনা আক্তার, উপজেলা চেয়ারম্যন আসাদুজ্জামান বাবু, সদরের সাবেক ইউ এন ও শাহ আব্দুস সাদিসহ প্রশাসনের বড়বড় কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ দুর দূরান্ত থেকে শত শত লোকজন এক পলক দেখার জন্য ভীড় করে মুক্তামনির বাড়িতে। এ সময় পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে আকাশবাতাস ভারি হয়ে যায়। সকলের চোখে পানি চলে আসে। পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলে সকলেই।
তিনি আরো বলেন, মৃত্যুর আগে মাজে মাঝে মুক্তামনি দাদার কবর দেখার আগ্রহ প্রকাশ করতো। তখন পরিবারের সদস্যরা হুইল চেয়ারে করে নিয়ে তাকে দাদার কবর দেখিয়ে নিয়ে আসতো। এ কারনেই তাকে তার দাদার কবরের পাশে শায়িত করা হয়েছে।
বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার কামারবায়সা গ্রামের ১০ বছরের শিশু মুক্তামনি দেড় বছর বয়স হতে রোগের সাথে সংগ্রাম করে বুধবার (২৩ মে) সকাল ৭টা ৫০ মিনিটি মারা যায়।
এর আগে গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে খবর প্রকাশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনায় আসে মুক্তামণির খবর।
২০১৭ সালের ১০ জুলাই তাকে ঢাকায় ভর্তি করার পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আবুল কালাম আজাদ ও ডা. সামন্তলাল সেনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম ছয় মাস ধরে তাকে চিকিৎসা দেয়। এ সময় তার দেহে কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করা হয়।
চিকিৎসায় তার স্বাস্থ্যের আশানুরুপ উন্নতি হয় বলে ডাক্তার দাবী করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি সরকারি খরচে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এদিকে ঢাকায় টানা ছয় মাস চিকিৎসা শেষে এক মাসের ছুটিতে মুক্তামণি ২০১৭ এর ২২ ডিসেম্বর বাড়ি ফিরে যায়। এর পর থেকে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে রেখে তার চিকিৎসা চলতে থাকে। এরই মধ্যে তার অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। গত তিন দিন যাবৎ অবস্থা মারাত্মক আকার ধারন করে। ডান হাতের ক্ষতস্থান আবার নতুন করে পচন ধরে। পঁচা স্থান দিয়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করে ছোট বড় পোকা।
মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম গাজী বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জ্বর এসেছিল মুক্তামণির। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে কথা বলি। তখন তিনি সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে ডাক্তার পাঠিয়ে দেন বাড়িতে। সদর হাসপাতালের ডাক্তার হাফিজুল্লাহ ও ফরহাদ আলম এসে জ্বরের চিকিৎসা করেন। তাৎক্ষণিক আমি ওষুধপত্র নিয়ে আসি। দুপুরে ও রাতে সেই ওষুধ খাওয়াই। রাতে একটা ছবেদা ফল খেয়েছিল মুক্তামণি। বুধবার সকালে কিছু খায়নি। আমার হাতের ওপর মারা যায় মেয়েটি।
গত ২০১৭ সালের ৯ জুলাই ‘লুকিয়ে রাখতে হয় মুক্তাকে’ শিরোনামে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে নিয়ে সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। মুক্তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। পরে তাকে ১১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার পর তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ারও উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে সেখানকার চিকিৎসকরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুক্তামণির হাত দেখে আঁতকে ওঠেন। একইসঙ্গে হাত অপারেশনের জন্য অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা দেশেই অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কয়েক দফা অপারেশনও করেন। তবে হাতের কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি।
২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হয় মুক্তামণিকে। দীর্ঘ ৬ মাস চিকিৎসা সেবার পর এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে আসে মুক্তামণি। তবে পরবর্তীতে মুক্তামণি আর ঢাকায় যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। একই সঙ্গে মুক্তামণির অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ঢাকায় যেতে নিরুৎসাহী হয়ে পড়ে তার পরিবারও।
গত ১৯ মে মুক্তামনি সংবাদ মাধ্যকে জানায়, আমি আর সুস্থ হব না। ডাক্তার স্যাররা অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমাকে সুস্থ করতে পারেননি। জানি না কতদিন এভাবে বেঁচে থাকব আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।
মুক্তামণি মৃত্যুর আগে পানি খেতে চেয়েছিল। তবে পানি আনার আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আলোচিত এই মেয়েটি। মুক্তামণির দাদি সালেহা বলেন, সকালে মুক্তামণি আমার কাছে পানি খেতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পানি খেতে পারেনি। পানি নিয়ে যাওয়ার আগে মুক্তামণি মারা যায়। তখন মুক্তার বাবা ইব্রাহিমও মা আসমা বেগম পাশে বসে ছিল।
মুক্তামনির মৃত্যুতে গভীর শোক এবং শোক সন্তাপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে,বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক,বুদ্ধিজীবি,সাংবাদিক সহ সর্বস্তরের মানুষ।
–আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা

Please follow and like us:

Check Also

কলারোয়া  উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি আবুল কাশেমের ইন্তেকালঃ বঙ্গবন্ধু বিশেষ সুপারিশে  যিনি কারা মুক্ত হন

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।