শান্তিনিকেতনে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি পাশে থাকার অঙ্গীকার

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মডেল : শেখ হাসিনা * বাংলাদেশের লক্ষ্যে ভারতের পূর্ণ সমর্থন থাকবে : মোদি * তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়নি

  শান্তিনিকেতন, ভারত থেকে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেছেন পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়ে বিশ্বের কাছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘মডেল’ হিসেবে আবির্ভূত হবে। প্রতিবেশী এ দুই দেশের মধ্যে এখনও যেসব সমস্যা আছে, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমেই সেসবের সমাধান হবে।

আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, পরস্পরের বিকাশে সহযোগিতা করছে- তা অন্যদের জন্যও একটি শিক্ষা, একটি উদাহরণ। শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছেন, তা অর্জনে ভারতের ‘পূর্ণ সমর্থন’ থাকবে।

শুক্রবার ভারতের শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ভবনের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এভাবেই দুই দেশের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় জানান দুই নেতা। পরে তারা ‘সম্প্রীতির প্রতীক’ এ ভবনের ফলক উন্মোচন করেন। এ সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রটোকল ভেঙে পাশে ডেকে নেন শেখ হাসিনা।

পরে শান্তিনিকেতনেই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। সূত্র জানিয়েছে, সেখানেও নরেন্দ্র মোদি যে কোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শেখ হাসিনাকে।

তবে শেখ হাসিনা, মোদি ও মমতা- তিনজন একসঙ্গে হলেও বহুল আকাক্সিক্ষত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে এদিন কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আজ মমতার সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক রয়েছে। এতে তিস্তা প্রসঙ্গ আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের মধ্যে এ চুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধার নাম ‘মমতা’।

শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর কেশরীনাথ ত্রিপাঠি, বিশ্বভারতীর ভিসি অধ্যাপক সবুজ কলি সেন, প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অদিতি মহসিন প্রমুখ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এ পারস্পরিক সহযোগিতার পূর্ণ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হব এবং এর ফলে বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মডেল হিসেবে গণ্য হবে বলে আশা করা যায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের বহুমুখী ও বহুমাত্রিক এ সম্পর্ক বিগত সাড়ে নয় বছরে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছে। আমরা আজ দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, উভয় দেশ ভবিষ্যতেও এ সহযোগিতা বিদ্যমান রাখবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা প্রতিবেশী দেশ থাকলে সমস্যাও থাকতে পারে, আমরা কিন্তু সমস্যাগুলো একে একে সমাধান করে ফেলেছি। হয়ত কিছুটা বাকি, আমি সে কথা বলে আমাদের এ চমৎকার অনুষ্ঠান নষ্ট করতে চাই না। কিন্তু আমি আশা করি, যে কোনো সমস্যা আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমেই সমাধান করতে পারব।’

বাংলাদেশের সৃষ্টিলগ্ন থেকে ভারতের সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতবাসী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের সেই অবদান আমরা কোনো দিন ভুলতে পারি না। আমাদের এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে।’

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতের পার্লামেন্টে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে গেল, ভারতের প্রত্যেকটা দলের সংসদ সদস্যরা সবাই মিলে, দল-মত নির্বিশেষে এক হয়ে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বিলটি পাস করে দিল। অনেক দেশে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে যুদ্ধ বেধে আছে। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে, ভ্রাতৃত্ববোধ নিয়ে, আনন্দঘন পরিবেশে আমরা ছিটমহল বিনিময় করেছি।’

এটা সম্ভব হওয়ায় ভারতের সবপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী- আমি এত আবেগাপ্লুত হয়েছিলাম, চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। মনে হল একাত্তর সালে যেভাবে আমরা ভারতের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছিলাম, আবার একবার দেখলাম, ঠিকই আমাদের প্রতিবেশী আমাদের বড় বন্ধু, সে বন্ধু তারা পাশে দাঁড়াল।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শত্র“ হল দারিদ্র্য। এ অঞ্চলকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়েই ভারত ও বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা করাই আমার দায়িত্ব। আমাদের দুই বাংলার মধ্যে যে সম্পর্ক তা আরও সুন্দর হোক, সেটাই আমরা চাই।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায়। ছোট বোন শেখ রেহানার কথায় উজ্জীবিত হয়ে রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানবিক কারণেই ১১ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলতেন, অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়াও, সাহায্য কর। তাই আমাদের ভাত আমরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাগ করে খাব বলে অঙ্গীকার করেছি। তবে তারা দ্রুত স্বদেশে ফিরে যাক- আমরা সেটাই চাই।’ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে বিশ্ব সম্প্র্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দুই বাংলার অভিভাবক আর বাংলাদেশ ভবন হবে দুই দেশের মিলনকেন্দ্র, এমনই দাবি করেন শেখ হাসিনা। আর রবীন্দ্রনাথের অধিকাংশ লেখাই বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে বসে লেখা বলে বাংলাদেশের মানুষের দাবি একটু বেশি বলে জানান শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি শান্তিনিকেতনে ‘এক টুকরো বাংলাদেশ’ গড়তে পেরেছেন বলে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তার চোখের পাতা একসময় ভিজে ওঠে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কষ্ট এবং আনন্দ দুটোই হচ্ছে আজ।’

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পুরনো সম্পর্কের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ইচ্ছে ছিল এখানে বাংলাদেশ বিষয়ে চর্চার জন্য একটি আলাদা জায়গা থাকুক। ২০১০ সালে আমার ভারত সফরের সময় এই ভবনটি স্থাপনের ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত এটি আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে।’ বাংলাদেশ ভবন স্থাপনের সুযোগ দেয়ায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার, ভারত সরকার ও ভারতের বন্ধুপ্রতিম জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

এ সময় শেখ হাসিনা ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা তুলে ধরেন। এ সময় ভারত তাকে ও শেখ রেহানাকে আশ্রয় দেয়ায় তিনি ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বলেন, এখানকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আমাদের খবর নেন। ভারতে আশ্রয় দেন। ভুলব না। এমন øেহছায়া না পেলে কী হতো?

বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মনেপ্রাণে ধারণ করতেন জানিয়ে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘তিনি রবীন্দ্রনাথের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচিত করে রেখেছিলেন।” তিনি বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রবীন্দ্রসংগীত আমাদের দিয়েছে প্রেরণা, জুগিয়েছে উৎসাহ ও সাহস।’

বাংলাদেশের অর্থায়নে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাংলাদেশ ভবনে গবেষকদের সহায়তার জন্য পাঠাগার, অডিটোরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, ডিজিটাল জাদুঘর ও আর্কাইভ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। এই ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ১০ কোটি রুপির একটি স্থায়ী তহবিল গঠন করার ঘোষণা দেন অনুষ্ঠানে।

মোদির আশ্বাস : পরে বক্তৃতা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঞ্চে বসা বঙ্গবন্ধুকন্যার দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘সীমানা অতিক্রম করে দুই দেশই একসাথে উন্নয়ন ও প্রগতির পথে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ আমাদের ভাই। ওদের উন্নয়নে, গরিবি হটাতে, সমস্ত লড়াইয়েই আমরা পাশে আছি। সবরকম সাহায্য করব।’

মোদি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে শিক্ষিত রাষ্ট্র করে তোলার যে লক্ষ্য নিয়েছেন, এ তার দূরদৃষ্টি…। এই লক্ষ্য অর্জনে ভারতের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।’

শেখ হাসিনার পরিকল্পনাকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার ধারাবাহিকতার প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য এক এবং সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর পদ্ধতিও এক। আমাদের দুই দেশের সামনেই জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এদিকে আমরাও আগামী বছরের মধ্যে ভারতের সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছি।’’ মোদি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার শর্ত পূরণ করেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য যেমন গর্বের, ভারতের জন্যও গর্বের। বাংলাদেশ তাদের সামাজিক খাতে যতটা অগ্রগতি করেছে, গরিব মানুষের জীবনযাত্রার সহজ করতে যে কাজ করেছে, আমি স্বীকার করি এটা আমাদের প্রেরণা দিতে পারে।’

মোদির ভাষায়, বাংলাদেশ এবং ভারতের অগ্রযাত্রার সূত্র একটি ‘সুন্দর মালার মতো’। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন ধরে আমাদের সামনে এক ধ্র“ব সত্য এসেছে, তা হল প্রগতি, সমৃদ্ধি, শান্তি ও ঐক্যের জন্য দরকার ভারত এবং বাংলাদেশের বন্ধুত্ব। পারস্পরিক সহযোগিতা। এই সহযোগিতার বিকাশ কেবল দুই পক্ষের কারণেই হয়েছে তা নয়, বিমসটেকের মতো একটি প্ল্যাটফর্মও আমাদের সহযোগিতা, প্রগতি ও সংযোগকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।”

মোদি বলেন, এ সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার স্থল সীমানার মতো জটিল সমস্যা সমাধান হয়েছে, যা এক সময় অসম্ভব বলে মনে করা হতো। কক্ষপথে বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের প্রশংসা করে মোদি বলেন, এই সাফল্যের ফলে এ অঞ্চলে বাংলাদেশের সঙ্গে মহাকাশ প্রযুক্তিতে সহযোগিতার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

গত মার্চে দিল্লিতে ভারতের উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সৌর জোটের সম্মেলনে অংশ নেয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ধন্যবাদ জানান মোদি। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি হয়েছি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সে সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহযোগিতার ইচ্ছা কত প্রবল তা আমি দেখেছি।’

মোদি বলেছেন, শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কের প্রতীক হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ ভবন দুই দেশের শিল্পকলা, ভাষা, ইতিহাস ও শিক্ষাবিষয়ক অধ্যয়ন ও গবেষণা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কেন্দ্রে পরিণত হবে। তিনি বলেন, অনেক বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের বিশেষ করে যুব সমাজের আকাক্সক্ষা পূরণে একসঙ্গে এগিয়ে চলার প্রচুর সুযোগ রয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন বাংলাদেশের একের পর এক উন্নয়নের কথা বলছিলেন তখন মঞ্চে হাসি খেলে যাচ্ছিল শেখ হাসিনার মুখে। বেশ কয়েকবার হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথি ও কর্মকর্তাদের মুখে ছিল হাসি।

বাংলাদেশ ভবন নিয়ে উচ্ছ্বসিত মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘আমার খুব ভালো লেগেছে, এটা দারুণ হয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধুর কথা মনে পড়ছে বারবার। কারণ ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের সম্পর্ক সেই ১৯৭১ সাল থেকে।’ তিস্তা প্রসঙ্গ দূরে রেখেই মমতা বলেন, ‘অবিরল-অবিচল, একেবারে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার মতো, অনেক জল গড়িয়ে গেছে, অনেক জল গড়াবে। কিন্তু দুদেশের সম্পর্ক আরও অনেক অনেক ভালো হবে, এটা আমি বিশ্বাস করি।’ ভারতে কবি নজরুল ইসলামের নামে বিমানবন্দর, একাডেমি, তীর্থ প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গে তুলে ধরে মমতা বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর নামেও একটি বঙ্গবন্ধু ভবন করতে চাই- যখনই আমাদের সুযোগ দেবেন, আমরা করব।’

ভবন উদ্বোধন ও চুক্তি : বক্তৃতাপর্ব শেষে বাংলাদেশ ভবনের ফলক উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা ও মোদি। এ সময় শেখ হাসিনা মমতাকে পাশে ডেকে নেন। সেখানে ছিলেন শেখ রেহানাও। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলাদেশে নানা স্মৃতি ও রচনাসম্ভার নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন তারা। পরে বাংলাদেশ ভবন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে তুলে দিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। উপাচার্য সবুজকলি সেনের সঙ্গে এ চুক্তিতে স্মাক্ষর করেন বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সোহরাব হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত শোনানো হয়।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক : ভবনের উদ্বোধন শেষে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, বৈঠকের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় স্থান পায়।

অন্য কর্মসূচি : পরে বিকালে শেখ হাসিনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শনে যান। সন্ধ্যায় হোটেল তাজ বেঙ্গলে কলকাতার ব্যবসায়ী নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

আজ সকালে আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি দেয়া হবে। কলকাতায় ফিরে বিকালে নেতাজী জাদুঘর পরিদর্শন করার পর আজ রাতেই প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী বিমানে কলকাতার দমদম বন্দরে এসে পৌঁছান। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে শান্তিনিকেতন যান তিনি। প্রথম বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে অংশ নেন। পরে বাংলাদেশ ভবনে আসেন। শান্তিনিকেতনের আশ্রম প্রাঙ্গণের আম্রকুঞ্জে মোদির সঙ্গে বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন শেখ হাসিনা ও মমতা ব্যানার্জি।

Please follow and like us:

Check Also

এদেশের সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি: কাদের

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এদেশের সাম্প্রদায়িকতার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।