শিবিরকর্মীকে বিয়ে করায় …….মেয়ের মায়ের মামলা

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:ঢাকা : জান্নাতুল মাওয়া মিরা (২১)। ভালোবেসে বিয়ে করেন মুরাদুল ইসলাম নয়নকে (২৫)। তবে সবই হয় গোপনে, কাজী অফিস ও আদালতে। এরই মধ্যে ভাগ্যের সন্ধানে দক্ষিণ আফ্রিকা পাড়ি জমান নয়ন। আর বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মিরা সরাসরি শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে ওঠেন।
এতেই ক্ষেপে যান মিরার পরিবার। তার মা মেয়েকে অপহরণের মামলা ঠুকে দেন নয়ন ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় পুলিশ বুধবার বিকেলে মিরাকে উদ্ধার করে। বৃহস্পতিবার আদালতে তোলার পর মায়ের সঙ্গে যেতে না চাওয়ায় তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেয়া হয়েছে।

ঘটনাটি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পশ্চিম শাকপুর গ্রামের। মিরার মা আয়েশা বেগমের দাবি, তার মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্কা (১৭)। তাছাড়া ছেলে ছাত্রশিবির করে। এজন্য তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে তিনি মেনে নিবেন না।

পুলিশ ও এই দম্পতির স্বজনেরা জানান, কয়েক বছর আগে বোয়ালখালীর পশ্চিম শাকপুর গ্রামের পূর্ব রাজার বাড়ির জাফর আহম্মদের ছেলে মুরাদুল ইসলাম নয়নের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই গ্রামের লিয়াকত আলীর মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া মিরার।

এরপর পরিবারকে না জানিয়ে তারা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন। পরে কোর্টে গিয়ে এফিডেভিটও করেন। এক পর্যায়ে উপার্জনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা পাড়ি জমান নয়ন।

মিরা বাবার বাড়িতেই ছিলেন। সম্প্রতি তাদের এই বিয়ের খবর উভয় পরিবার জেনে যায়। শুরু হয় বিবাদ। এক পর্যায়ে বিয়ে মেনে পুত্রবধূকে ঘরে তুলে নিতে রাজি হন জাফর আহম্মদ।

কিন্তু, বেঁকে বসেন মিরার মা ও স্বজনেরা। পরে বাবার বাড়ি ছেড়ে মিরা গোপনে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নয়ন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন মিরার মা। এই মামলায় পুলিশ মিরাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রামের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়েছে।

নয়নের মা বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছে। ওদের বিয়ের বয়স হয়েছে। সংসার করবে ওরা, আমরাও মেনে নিয়েছি। কিন্তু, আমার বেয়াইন ষড়যন্ত্র করে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।’ তবে মিরার মা আয়েশা বেগমের দাবি, ‘ওরা যেখানে, যেভাবেই বিয়ে করুক, আমি এ বিয়ে মানি না। আমার মেয়ের এখনো বিয়ের বয়স হয়নি। তাকে ফুসলিয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নয়ন ছাত্রশিবির করে। তার সঙ্গে আমি আমার মেয়ের বিয়ে মেনে নিতে পারি না। এই বিয়ে কোনোভাবেই মানব না।’

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় জান্নাতুল মাওয়া মিরার। মিরা বলেন, ‘মা বললে তো আর হবে না। আমার একাডেমিক কাগজপত্র দেখলেই বয়স নিশ্চিত হওয়া যাবে। নয়ন আর আমি স্বেচ্ছায় কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছি।’

মিরার ভাষ্যে, তাকে শ্বশুর বাড়ির কেউ অপহরণ করেনি। মা জেদ করে স্বামী ও শ্বশুরের পরিবারের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এজন্য তাকে জেলে থাকতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘সাত সমুদ্র তের নদী, যত দূরেই থাকুক নয়ন আমার স্বামী। তার পানেই পুরো জনম চেয়ে থাকব। হয় স্বামীর বাড়ি, না হয় জেল হবে আমার ঠিকানা। কোনোভাবেই মায়ের বাড়িতে ফিরব না।’

বোয়ালখালী থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আবু কাউসার জানান, মায়ের অপহরণ মামলার পর জান্নাতুল মাওয়া মিরাকে তার স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। দুই পরিবার সমঝোতায় না এলে আদালতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।