যখন ইচ্ছে সরাসরি ফোন কর, নিজের নম্বর দিয়ে কিমকে ট্রাম্প

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনকে তাঁর নিজের টেলিফোন নম্বরটা দিয়ে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বললেন, ‘‘এটা তোমার কাছে রাখ। আমাকে ফোন কর সরাসরি, প্রয়োজনে।’’

তার মানে, হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসের রিসেপশন রুমের হরেক বিধিনিষেধের পাঁচিল টপকে আর ট্রাম্পের কাছে পৌঁছতে হবে না কিমকে। চাইলে, প্রয়োজনে সরাসরি রিসিভার তুলে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এ বার বলতে পারবেন, ‘হ্যালো …কিম বলছি…’।

কিমকে যে তাঁর নিজের টেলিফোন নম্বরটা দিয়েছেন, ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সেই খবরটা দিয়েছেন ট্রাম্পই, শুক্রবার। কিমের ফোন কবে আসবে তার প্রতীক্ষায় না থেকে, ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগে তিনিই ফোনটা করবেন কিমকে। উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ডাইরেক্ট ল্যান্ড লাইন নম্বরে। আগামী কাল, রবিবার, ‘ফাদার্স ডে’তে।

কিমের সঙ্গে বয়সের ফারাকে ট্রাম্প দ্বিগুণেরও বেশি। যেন পিতৃতুল্য! ট্রাম্প এখন ৭২ আর কিম পা দিয়েছেন ৩৪ বছরে।

প্রশ্ন উঠছে, তাই কি ওয়াশিংটন থেকে পিয়ংইয়ংয়ে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনকে সরাসরি ল্যান্ড লাইনে ফোন করার জন্য আগামী কাল, রবিবার ‘ফাদার্স ডে’-কেই বেছে নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প? বিশ্ব রাজনীতিতে ‘দাদা’ আমেরিকা কি তবে উত্তর কোরিয়া প্রশ্নে ‘বাবার ভূমিকা’ নিতে চাইছে?

ইউরোপের ক্যাথলিক সমাজে প্রতি বছর ১৯ মার্চ দিনটিকে ‘ফাদার্স ডে’ হিসেবে পালন করা হয়। আর আমেরিকায় ওই দিনটা পালন করা হয় জুনের তৃতীয় রবিবারে। এ বার সেই তারিখটা ১৭ জুন। যে দিনে কোনও পিতা তাঁর পরিবারের সঙ্গে দিনটা কাটান আনন্দে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ফক্স নিউজ’-এর তরফে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এ বার কী করবেন তিনি ‘ফাদার্স ডে’তে?

ট্রাম্প জবাব দেন, ‘‘ওই দিন আমি উত্তর কোরিয়ার মানুষদের ফোন করতে চলেছি। উত্তর কোরিয়ায় আমেরিকায় যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চলেছি।’’ (প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনের নামোল্লেখ করেননি ট্রাম্প)।

গত মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর ঐতিহাসিক বৈঠকের পর থেকেই পিয়ংইয়ং নিয়ে নানা জায়গায় সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে।

হোয়াইট হাউসের লনে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আমি তো এখন ওকে (পড়ুন কিম জং-উন) যখন তখন ফোন করতে পারি। বলতেই পারি, ‘সমস্যাটমস্যা থাকেই, ছাড়ো তো ও সব’। আমি তো ওকে আমার ডাইরেক্ট নাম্বার দিয়েছি। বলেছি, কোনও অসুবিধা হলেই সরাসরি আমাকে ফোন কোর।’’

দু’দিন আগেও যে দেশ ‘ঘোর শত্রু’ ছিল, সেই উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুখে ভাল ভাল কথা শোনা যাচ্ছে দেখে খুশি নন অবশ্য অনেকেই। প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটরা তো বলতে শুরুই করে দিয়েছেন কিমের সঙ্গে শান্তি বৈঠকে বসে পিয়ংইয়ংকে বড় বেশি ছাড় দিয়ে ফেলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পিয়ংইয়ংয়ের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দীর্ঘ ইতিহাসকে বেমালুম ভুলে গিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তা নিয়ে গুঞ্জন চলছে সংবাদমাধ্যমেও।

ট্রাম্প অবশ্য সে সব গুঞ্জনকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। এক সাংবাদিককে ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘এ সব কেন করছি, জান? আমি চাই না, পরমাণু অস্ত্র তোমাকে আর তোমার পরিবারকে ধ্বংস করে দিক। আমি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছি।’’ প্রশ্ন উঠছে, বিশ্ব রাজনীতির ‘দাদা’ আমেরিকা কি তবে পরমাণু অস্ত্রের ভয়ে হয়ে উঠতে চাইছে ‘স্নেহভাজন পিতা’?

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।