সাতক্ষীরায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় তিন জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

ক্রাইমবার্তা রিপোট:  সাতক্ষীরা :সাতক্ষীরায় পাচার ও ধর্ষণের দায়ে পৃথক তিনটি মামলায় তিনজনের যাবজ্জীবন সশ্যম কারাদন্ড প্রদান করেছেন আদালত। বুধবার (৪ জুলাই) দুপুরে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হোসনে আরা আক্তার মামলা তিনটির রায় ঘোষণা করেন।
আদালত সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব নারায়নপুর গ্রামের আব্দুল করিম মল্লিকের কালিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে একটি হোটেল ছিল। তিনি ও তার স্ত্রী হোটেলটি চালাতেন। হঠাৎ একদিন একই উপজেলার চাম্পাফুল ইউনিয়নের জগদীশকাটি গ্রামের কাশেম আলী গাইনের ছেলে গোলাম রসুল ওই হোটেলে কাজ নিতে যায়। হোটেল মালিক তাকে কাজ দেন। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ২০০৫ সালের ২৯ জুলাই গোলাম রসুল পাচারের উদ্দেশ্যে হোটেল মালিকের ছেলে শহীদুল ইসলাম (৪) কে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন ৩০ জুলাই ফরিদপুরে স্থানীয় লোকজন ওই শিশুসহ গোলাম রসুলকে আটক করে পুলিশে দেয়। এ ঘটনায় আব্দুল করিম মল্লিক কালিগঞ্জ থানায় অপহরণের দায়ে গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
এ মামলায় নয়জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও নথি পর্যালোচনা করে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয়মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেন। তবে, মামলার রায় ঘোষণার সময় আসামি অনুপস্থিত ছিল।
এদিকে, এক প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের দায়ে নুর ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও এক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিনমাসের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি তালা উপজেলার আটরই গ্রামের মোকাম মোড়লের ছেলে নুর ইসলাম তার প্রতিবেশী এক প্রতিবন্ধী নারীর ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন। পরে বিয়ে আশ^াস দিয়ে পালিয়ে যায় নুর ইসলাম। এ ঘটনায় ওই প্রতিবন্ধী নারীর ভাই নুর ইসলামসহ তার সহযোগী খায়রুল মোড়ল ও নাজমা বেগমের নামে মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় সাতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও নথি পর্যালোচনা করে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিনমাসের কারাদন্ডের আদেশ দেন। তবে, অপর দুই আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, পৃথক আরও একটি ধর্ষণ মামলায় হাফিজুর রহমান নামে এক যুবককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয়মাসের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার বিবরণে জানা যায়, কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা গ্রামের কাজী গিয়াস উদ্দিনের ছেলে হাফিজুর রহমান তার প্রতিবেশী শেখ মারুফ আহমেদের বাড়িতে কর্মরত কাজের মেয়েকে কু-প্রস্তাব দিত। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ বিষয়টি হাফিজুর রহমানের বাবা-মাকে জানালে তারা ওই মেয়ের সাথে ছেলেকে বিয়ের আশ^াস দেন। এই প্রশ্রয় পেয়ে হাফিজুর রহমান ওই মেয়েকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতে থাকে। এতে মেয়েটি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে হাফিজুর রহমান তাকে বিয়ে না করে পালিয়ে যায়। এঘটনায় ২০০৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মেয়েটি বাদী হয়ে হাফিজুর রহমানের নামে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে।
এ মামলায় পাঁচজনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও নথি পর্যালোচনা করে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয়মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেন।
সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট জহুরুল হায়দার বাবু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তিনটি মামলার আসামিই পলাতক রয়েছে।–

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।