সাদা গাড়ীতে উঠার পরই মাহমুদুর রহমানের উপর হামলা :ফেসবুক লাইভে মাহমুদুর রহমান কি বললেন

ক্রাইমবার্তা রিপোট:  কুষ্টিয়ায় জামিন নিতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন  দৈনিক আমার দেশে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক  মাহমুদুর রহমান। এ সময় আদালত এলাকা থেকে ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন তিনি। সেখানে তিনি হামলার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। যা  পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :…

‘আমি এই অভিজ্ঞতায় মোটেও আশ্চর্য হইনি। কারণ দিল্লীর প্রতিনিধিত্বকারী বর্তমান দখলদার সরকারের আমলে এরকমই বাংলাদেশের হওয়ার কথা। দেশে এখন গণমানুষের কোনো অধিকার নাই। সংবাদপ্রত্রের কোন স্বাধীনতা নেই। এখানে একধরণের জঙ্গলের আইন চলছে। এবং সেটার সর্বোৎকৃষ্ট প্রমান আজকে আমারা কুষ্টিয়াতে পেলাম। এরকম দৃশ্য বোধয় কুষ্টিয়াতে আজ পর্যন্ত কেউ দেখেন নি। কারণ এখানে যারা আইনজীবী আছেন প্রত্যেকেই বলেছেন, এটা আমাদের নতুন অভিজ্ঞতা। পুরো আদালত পাড়াজুড়ে ছাত্রলীগের স্বসস্ত্র ক্যাডাররা ঘিরে রেখেছে। তাদের দাবি কি বুঝা যাচ্ছে না, এটুকু বোঝা যায় তারা আমাকে বের হতে দিচ্ছে না।

আমি এখানে এসেছিলাম মানহানীর মামলায় হাজিরা দিতে। আপনারা জানেন যে, মানহানীর মামলায় হাজিরা দিতে হয় ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে। এটাই আইন। এই আইন ভেঙ্গে আমার জামিন বাতিল করার কোন সুযোগ নেই। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব আমাকে জামিন দিয়েছেন। জামিন দেয়ার পর থেকে তারা আর আমাকে এখান থেকে বের হতে দিচ্ছে না। এর পিছন পুরো ইন্দন হচ্ছে, এখানকার যিনি ওসি সেই ভদ্রলোক, এবং যিনি এসপি তাদের ইন্দনেই এই কাজটা হচ্ছে। কারণ ওসি-এসপি দেখেও না দেখার ভান করছে।

আমাদের সামনে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ওসিকে ডাকলেন। বাংলাদেশে আইনের শাসন আজ কোথায় গেছে, এবং পুলিশের ঔদ্বত্য কোন পর্যায়ে গেছে, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ডাকার পরেও সামন্য সৌজন্য দেখিয়েও তিনি আসেন নাই। তিনি বলে দিলেন, আসতে পারবে না। তাহলে বাংলাদেশ আজ কোন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে আপনার বুঝতে পারছেন। এই দেশের জনগণ যদি লড়াই না করে, লড়াই করে যদি ভারতের দালাল সরকারকে প্রতিহত না করে তাহলে মানুষের মুক্তি আসবে না।

কাজেই আমি বন্দী আছে তাদের আমার কিছু যায় আসে না। আপনারা জানেন আমি পাঁচ বছর জেলে ছিলাম। আমার নামে ১২৫টা মামলা। আমি ৩৮দিন পুলিশের রিমান্ডে ছিলাম। সেই রিমান্ডে আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আল্লাহ আমার হায়ত এখনো রেখেছে তাই আমি বেঁচে আছি। যতদিন বেঁচে আছি ন্যায়ের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই করে যাবো।

আপনার দোয়া করবেন আমাদের জন্য যাতে আমরা আজকে বের হতে পারি। যদি জীবীত এখান থেকে রেব হতে না পারি তবে দোয়া করবেন মাগফেরাতের জন্য। আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন : সাদা গাড়ীতে উঠার পরই মাহমুদুর রহমানের উপর হামলা

ছাত্রলীগের হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন দৈনিক আমার দেশে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক  মাহমুদুর রহমান। একটি মানহানীর মামলার জামিন নিয়ে কুষ্টিয়ার আদালত থেকে বের হওয়ার সময় তার উপর হামলা চালায় অর্ধ শতাধীক ছাত্রলীগ কর্মী।

এ বিষয়ে আমাদের কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানিয়েছেন, জামিন নিতে রোববার বেলা ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার আদালতে হাজির হয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান।  তার সাথে ছিলেন কয়েকজন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর, কোর্ট  ইন্সপেক্টর তাকে সাদা গাড়ি দিয়ে পৌছে দেয়ার প্রস্তাব করেন। মাহমুদুর রহমান নিজের গাড়ি আছে উল্লেখ করে প্রস্তাব প্রত্যাক্ষান করলেও নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে সাদা গাড়িতেই উঠতে বাধ্য করা হয়। গাড়িতে উঠে বসার মিনিট খানেকের মধ্যেই ছাত্রলীগ কর্মীরা বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল মারতে শুরু করেন।

আমাদের প্রতিনিধি আরো জানিয়েছেন, কয়েকজন আইনজীবীর সহায়তায় ওই গাড়ি থেকে পুনরায় আদালত ভবনে  নিয়ে  আসার আগেই  রক্তাক্ত হয়েছে মাহমুদুর রহমানের শরীর। তখন আদালত প্রাঙ্গনের অবস্থা ছিল থমথমে। পরে সেখানে পৌঁছান সদর থানার অসি নাসির উদ্দিন। তিনি মাহমুদুর রহমানকে নিরাপত্তা দিয়ে গন্তব্যে পৌছে দেয়ার আশ্বাস দেন। 

মাহমুদুর রহমানের সাথে আছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা মাহমুদুর রহমানের উপর হামলা চালিয়েছে।

সাংবাদিক নেতা এম আবদুল্লাহ জানান, ৫০০ ধারার একটি মানহানি মামলায় জামিন নিতে মাহমুদুর রহমান কুষ্টিয়া আদালতে আসেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন। এই মামলার বাদী হলেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তুষার।

শুনানি শুরু হওয়ার আগ থেকেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে আদালত ভবন ঘেরাও করে আছে।  এ সময় মাহমুদুর রহমান কয়েকবার আদালত ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

জানাগেছে পুলিশের সেল্টারে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা লাঠিসোটা নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ ঘেরাও করে রাখে। এ ব্যাপারে বার বার কুষ্টিয়ার এসপি সহ পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা চেয়ে

ও ব্যর্থ হন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা এ পরিস্থিতি ম্যাজিস্ট্রেটকে জানালে, তিনি আমাদেরকে তার কক্ষে বসতে দিয়েছেন। আমরা দীর্ঘক্ষণ  ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে বসে ছিলাম। বেলা পৌনে ৫টার দিকে আদালত কক্ষ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।

এতে রক্তাক্তভাবে আহত হন সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান।

 

সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদ কুষ্টিয়ার সদস্য সচিব এ্যাড, শামীম উল হাসান অপু জানান, মানহানির একটি মামলায় জামিন নিতে আজ রোববার কুষ্টিয়া সদর জুডিশিয়াল ম্যাজেস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মাহমুদুর রহমান। উভয় পক্ষের শুনানির পর বিচারক এম এম মোর্শেদে জামিন আদেশ দেন। দুপুর ১টার দিকে তিনি সঙ্গীদের সাথে আদালত থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে আদালত ভবনের প্রতিটি প্রবেশ দ্বারে ছাত্রীলীগের নেতাকর্মীরা আটকে দেয়। এসময় তিনি পুনরায় আদালতের এজলাসে আশ্রয় নেন। বিকালে আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার উপর হামলা ঘটনা ঘটেছে।

আহত মাহমুদুর রহমান এখন ঢাকার পথে রয়েছেন।

Check Also

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইয়াছিন আলীকে গ্রেফতার করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।