মন্ত্রী-এমপিদেরও সংসদের ভেতরে বাইরে আটকে দেয়া হল: আটকে দিলো পুলিশের দুটি গাড়ি (ভিডিও)

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:  প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া সংসদে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে ও বের হতে পারেননি এমপি-মন্ত্রীরাও। এক পৌর মেয়রকেও আটকে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির বিরুদ্ধে করা হয়েছে মামলা। অবস্থা বেগতিক দেখে সংসদ থেকে বের হয়ে আবারও তাড়াতাড়ি ঘুরিয়ে সংসদে প্রবেশ করেছে গাড়ি।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেলে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সংসদ ভবন, আসাদগেট, মানিক মিয়া এভিনিউ, মনিপুরী পাড়া সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। গাড়ির কাগজপত্র ছাড়া সংসদে ঢুকতে না পেরে বাতিল করা হয়েছে সংসদীয় কমিটির বৈঠকও।

এদিন দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ছিল। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের ড্রাইভারের কাগজপত্র ছিল না। এজন্য আসাদগেটে তার গাড়ি আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে বাধ্য হয়ে মন্ত্রী গাড়ি রেখে হেঁটে সংসদে প্রবেশ করেন। এই কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন (লালমনিরহাট-১) এর গাড়ির সব কিছু ঠিক থাকায় তিনি সংসদে প্রবেশ করতে পারেন। তবে কমিটির ১০ জন সদস্যের মধ্যে আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন (পটুয়াখালী-৩) আর কেউ সংসদে প্রবেশ করতে পারেননি। ছিলেন না মন্ত্রণালয়ের হর্তাকর্তারাও। তাই কমিটির বৈঠক বাতিল করা হয়।

জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন  বলেন, অনেকে বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেননি। তাই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। আগামী বৈঠকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়েও আলোচনা হবে।

MinisterGari-3

এদিকে সংসদে এক মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসে ফেঁসে যান ঝিনাইদহের পৌর মেয়র সাইদুল কবির মিন্টু। তার গাড়ির (ঢাকা মেট্রো-ঠ, ১৬-০০৭৭) ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই, ছিল না প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও। এজন্য তাকেও আটকে রাখা হয়। এমনকি সংসদের অনেক কর্মকর্তাও কাগজপত্র ছাড়া গাড়ি নিয়ে সংসদে যাতায়াত করতে পারেননি।

তবে সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরার গাড়ির কাগজপত্র থাকায় ওই গাড়ি সংসদে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।

রেজাউল করিম হীরা পরে  বলেন, ‘বিষয়টি ভালো। তবে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না গেলেই হয়। অনেকের দেখলাম স্কুল কলেজের ইউনিফর্ম নেই। এরা আসলে কারা?’

Minister-Gari

সংসদ চত্বরে থাকা একাধিক গাড়ির ড্রাইভার  বলেন, ‘স্যার (এমপি) ভেতরে আছেন। সকালে আন্দোলন শুরুর আগে তারা ঢুকছেন। এখন বের হতে চাচ্ছেন না। পরিস্থিতি দেখে বের হবেন।’

দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ঢাকা মেট্রো-চ ৫১-৬২৬৪ নম্বর গাড়িটি আটকে চালকের লাইসেন্স দেখতে চায় আদ-দ্বীন ও ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা। ড্রাইভার লাইসেন্স দেখাতে না পারায় গাড়িতে মার্কার দিয়ে ‘লাইসেন্স নাই, সরকারি গাড়িতে লাইসেন্স লাগে না’ লিখেছে শিক্ষার্থীরা।

একই সময় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ঢাকা মেট্রো-চ ৫৩-৫১৯৬ এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়ি আটকে চালকের লাইসেন্স না পেয়ে এতেও মার্কার দিয়ে ‘লাইসেন্স ছাড়া সরকারি গাড়ি রাস্তায়’ লিখে দেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় অর্ধশতাধিক গাড়ি আটকে দেয় তারা।

Minister-Gari-1

এছাড়াও উত্তরায় চালকের লাইসেন্স না থাকায় দু’টি বেসরকারি টেলিভিশনের তিনটি গাড়ির চাবি নিজেদের জিম্মায় নেয় শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি আইন সবার জন্য সমান। কে মন্ত্রী, কে এমপি আর কে বড় কর্মকর্তা তা আমরা দেখতে চাই না।

এর আগে সোমবার বাংলামোটরে উল্টোপথে চলতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি। মন্ত্রীর সামনেই শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয়- ‘আইন সবার জন্য সমান’।জাগো নিউজ

’গাড়ি চালাচ্ছেন- লাইসেন্স আছে কি?’। বিভিন্ন যানবাহনের ড্রাইভারদের কাছে এই প্রশ্ন রাজধানী জুড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। যাদের লাইসেন্স নেই তাদের গাড়ি আটকে রাখছে তারা। এই অবস্থায় আটকে দেয়া হচ্ছে গাড়ি। এরই ধারাবাহিকতায় তেজগাও থানার দুই গাড়ি আটকা পড়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে। বাকবিতণ্ডাতেও ছাড় দেয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে থানার ভিতরে চলে যায় গাড়িতে থাকা ১০-১২ জন পুলিশ।

jagonews24

আন্দোলনে থাকা প্রীতি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা পুলিশের গাড়ির চালকের লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলে তারা জানায় লাইসেন্স নেই। অন্য আকেটি গাড়ির সিটবেল্ট নেই, গাড়ির লাইসেন্সও দেখাতে পারেনি। এজন্য আমরা গাড়ি দুটি আটকে দেই। এসময় পুলিশ আমাদের নামে মামলা দেয়ার হুমকি দিলে তাদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেই।

তেজগাওয়ে আটকে দেয়া গাড়ি দুটির নম্বর হলো- ঢাকা মেট্রো-ট-১১-৩৪৭৪। অন্যটির নম্বর প্লেটের গাড়ির ইঞ্জিন নম্বর লেখা- ৮০৩৭০।

jagonews24

একজন পুলিশ সদস্য বলেন, আমরা নিয়মিত ডিউটির অংশ হিসাবে থানা থেকে বের হচ্ছিলাম। কিন্তু গাড়ি আটকে দিয়েছে শিক্ষর্থীরা। বাধ্য হয়েই থানায় ফিরে যাচ্ছি। লাইসেন্স আছে কিন্তু ড্রাইভার সেটা বাসায় রেখে এসেছে। অন্যটি সিটবেল্ট সংক্রান্ত সমস্যা খাকায় আটকে দেয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, তারা সড়ক অবরোধ করেনি। গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স চেক করছেন তারা।

jagonews24

উল্লেখ, রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদ ও নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দলে দলে গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স যাচাই করছেন তারা। এসময় যেসব চালকের কাছে বৈধ লাইসেন্স পাওয়া গেছে, তাদের ছেড়ে দেয় তারা।

এসময় তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভিজে ভিজে আন্দোলন করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। আজ সারাদেশের স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হলেও শিক্ষার্থীদের গায়ে ইউনিফর্ম ছিল।

Check Also

হাফিজের কাছ থেকে রাজনীতিতে উৎসাহ না পেয়ে চলে যান সাকিব

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনীতির বিষয়ে উৎসাহিত হয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।