রাখে আল্লাহ মারে কে: বেচে গেলেন সেই পিকআপের তলে পড়া ফয়সাল( দেখুন সেই ভিডিওটি)

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:  ‘পিকআপ ভ্যানটি নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্র ফয়সাল মাহমুদের পেটের ওপর দিয়ে গিয়েছে। বৈধ কাগজ আছে কি না তা চেক করতে যাত্রাবাড়ী থেকে শনির আখড়ার দিকে আসা পিকআপ ভ্যানটি থামানো হয়। কাগজ চাইতেই গাড়ির সামনে ও পাশে থাকা ছাত্রদের ধাক্কা দিয়ে চলে যায় চালক। এ সময় ফয়সাল মাহমুদ গাড়ির নিচে পড়েন এবং পিকআপটির চাকা তার পেটের ওপর দিয়ে গিয়েছে।’ এসব কথা জানান প্রত্যদর্শী মো: শামীম।

গতকাল প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ফয়সালকে দেখতে এসে এসব কথা বলেন তিনি। পেটের ওপর দিয়ে গাড়ির চাকা গেলেও সে আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: এ টি এম বাহার উদ্দিন। তিনি জানান, ফয়সালের মাথা ও স্পাইনাল কর্ডে কোনো আঘাত নেই। তার হিপ জয়েন্টে সামান্য ফ্রাকচার হয়েছে। এক মাস বেড রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে আহত ফয়সাল মাহমুদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা দুই পাশ দিয়ে চলাচলকারী গাড়ি থামিয়ে বৈধ কাগজ আছে কি না তা চেক করছিলাম। এ সময় পুলিশ আমাদের সহায়তা করছে। আমাদের পাশেই ছিলেন তারা। পিকআপ ভ্যানটি আসার পর আমরা থামাই। আমি ছিলাম সামনে। ড্রাইভারের পাশে ছিল আরো কয়েকজন। গাড়িটি থামিয়ে লাইসেন্স চাইতেই হুট করে টান দেয় ড্রাইভার। পাশে যারা ছিল তারা ছিটকে পড়ে। আর আমি ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যাই। পুলিশের সামনেই আমাকে চাপা দেয় পিকআপটির চালক।’

গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে পিকআপ ভ্যানের চাপায় আহত হন নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া ফয়সাল মাহমুদ। গাড়ি চাপার ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৮টায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন করে আন্দোলনকারীরা। মানববন্ধন চলাকালে দুই পাশ দিয়ে চলাচল করা গাড়িগুলোর বৈধ কাগজ চেক করছিল শিার্থীরা। সাড়ে ৯টায় যাত্রাবাড়ী থেকে শনির আখড়ার দিকে আসছিল একটি পিকআপ ভ্যান। এই ভ্যানটির লাইসেন্স দেখতে চাইলেই হুট করে টান দেয় চালক। গাড়ির চাপায় পড়ে ফয়সাল।
আহত হওয়ার পর তাকে দ্রুত সাইনবোর্ড এলাকার প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যায় বন্ধু ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা শিার্থীরা। হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের এক নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফয়সাল। রাত পৌনে ১০টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়।

ফয়সালের বাবা শামসুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমার ছেলের বড় কোনো তি হয়নি, এতেই আমি খুশি। বিচার চেয়ে আর কী হবে? আমরা নিরীহ মানুষ। ঝামেলায় যেতে চাই না।
শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ডে ফয়সালকে চাপা দেয়ার ঘটনায় তাৎণিক প্রতিবাদ জানায় ওই এলাকায় অবস্থান নেয়া শিার্থীরা। দুই পাশের সড়কে অন্তত ১৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে বিুব্ধ শিার্থীরা। বাসগুলো ভাঙচুরের পর ছাত্রদের ধাওয়া দেয় স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও বাস শ্রমিকেরা।

দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অন্তত ১৫ জন ছাত্র দাবি করেন, স্থানীয় ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগসহ অন্য কর্মীরা ছাত্রদের ওপর হামলা করে। ছয় সাতজন ছাত্রকে মেরে আহত করেছে।
শনির আখড়ার দেশ বাংলা হাসপাতালের ম্যানেজার আল-আমিন জানান, তিনজন ছাত্র তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের আঘাত ছিল বেশি। তাকে মাথায় আঘাত করা হয়েছিল। তার নাম রাকিব। আরেকজন পায়ে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তার নাম তাওহীদ। অন্যজনের নাম জানাতে পারেননি তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই দুপুরে বিমানবন্দর সড়কে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় তিন দিন ধরে লাগাতার রাজপথ আটকে বিােভ করছে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। গতকাল বুধবার সারা দিন রাস্তা আটকে প্রতিবাদ জানিয়েছে শিার্থীরা। এই বিােভে অংশ নিতে এসে গাড়ি চাপায় আহত হন ফয়সাল।

ফয়সালকে ঢামেকে স্থানান্তর 
রাজধানীর শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পিকআপ ভ্যানের চাপায় আহত হওয়া নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্র ফয়সাল মাহমুদকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। বুধবার রাত পৌনে ১০টায় তাকে ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়।
ঢামেক সূত্র জানায়, জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর ফয়সাল মাহমুদের সমস্যার কথা শুনে ইউরোলজি বিভাগে পাঠান কর্তব্যরত চিকিৎসক। তার মূত্রথলিতে রক্ত জমেছে- এমন আশঙ্কা থেকে তাকে ইউরোলজি বিভাগে পাঠানো হয়।
ইউরোলজি বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডা: মাসুদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা তার সমস্যার কথা শুনে আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়েছি। কিন্তু কোনো সমস্যা পাইনি। লিভার বা অন্য কোনো সমস্যা থাকতে পারে। তাই পরে সার্জারি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।’

আরো পড়ুন :

জাবালে নূরের মালিক গ্রেফতার : চালক সাত দিনের রিমান্ডে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে বাসচাপায় দুই শিার্থী নিহতের ঘটনায় জড়িত ঘাতক বাস জাবালে নূরের মালিক শাহাদাৎ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গতকাল তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব। তবে কোথা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা জানায়নি র‌্যাব। এ দিকে দুই বাসের রেষারেষির কারণে দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বাসচালক মাসুম বিল্লাহর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম এ এইচ এম তোয়াহা এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত সোমবার তিনটি বাসের চালক এবং দুইজন সহকারীকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে চালক মাসুম বিল্লাহকে বরগুনা থেকে ও সহকারী এনায়েতকে বরিশাল থেকে গ্রেফতার করা হয়। আরেক চালক জুবায়েরকে পটুয়াখালী এবং অন্য একটি বাসের চালক সোহাগকে মুন্সীগঞ্জ ও সহকারী রিপনকে বরিশাল থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।
বাসমালিককে গ্রেফতারের বিষয়ে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই আমরা কড়া নজরদারির মধ্যে রেখেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের চাপা দেয়া জাবালে নূর বাসটির (ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭) মালিক শাহাদাৎ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুরে। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাননি।
ঢাকার অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের ডিসি আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম জাবালে নূর বাসের চালক মাসুম বিল্লাহকে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন। সে আবেদনের পরিপ্রেেিত বিচারক সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

জানা গেছে, মামলায় গ্রেফতার অন্য আসামিরা হলেনÑ এনায়েত হোসেন (৩৮), সোহাগ আলী, রিপন হোসেন ও জোবায়ের। তারা কারাগারে রয়েছেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ২৯ জুলাই জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস (রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো-১১-৯২৯৭) একই পরিবহনের কয়েকটি বাসের সাথে বেপরোয়া গতিতে প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। হোটেল রেডিসনের বিপরীতে জিল্লুর রহমান ফাইওভারের পাশে বাসে ওঠার অপোয় থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৪-১৫ জন ছাত্রছাত্রীর ওপর গাড়িটি উঠিয়ে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে চালক পালিয়ে যায়।
এই ঘটনায় গুরুতর আহতদের মধ্যে ওই কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল করিম রাজীব মারা যায়। এ ছাড়া এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র সোহেল রানা, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইমরান চৌধুরী, মেহেদী হাসান জিসান, রাহাত, সজিব, জয়ন্তি, প্রথম বর্ষের ছাত্রী রুবাইয়া, এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তৃপ্তাসহ আরো কয়েকজন বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় সিএমএইচ হাসাপতালসহ ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, প্রতিযোগিতায় লিপ্ত বাসগুলোর মধ্যে চারজন চালক ও হেলপারের নাম পেয়ে তাদের র‌্যাবের সহায়তায় গ্রেফতার করা হয়। তবে ঘাতক বাসের চালকসহ প্রতিযোগিতায় থাকা অজ্ঞাতনামা চালক ও হেলপার এখনো পলাতক। এর মধ্যে ঘাতক বাস ঢাকা মেট্রো-১১-৯২৯৭ ও ঢাকা মেট্টো গ-১১-৭৫৮০ জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে বর্তমানে পরিস্থিতি অনেক উত্তপ্ত রয়েছে। ওই কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ঘাতক বাসচালক ও তাদের সহকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে অন্দোলন করে আসছে। তাদের সামাল দিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে জাবালে নূর পরিবহনের ঘাতক চালককে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। এর আগে গত রোববার দিবাগত রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিহত দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম এই মামলা দায়ের করেন।

গত রোববার রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় প্রাণ হারায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল করিম ওরফে রাজীব (১৭) এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মিম।

পুলিশ ও প্রত্যদর্শীরা জানিয়েছেন, আবদুল্লাহপুর থেকে মোহাম্মদপুর রুটে চলাচলকারী জাবালে নূর পরিবহন লিমিটেডের একটি বাসের চালক হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারান। এ সময় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিার্থীদের ওপর বাসটি উঠে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই শিার্থী প্রাণ হারায়। গুরুতর আহত হয় বেশ কয়েকজন।

 

Check Also

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে: স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইয়ে রাষ্ট্রপতি

মহান স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।