রাজধানীতে আজও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা: কাদের ও শাহজানের পদত্যাগের দাবী

ক্রাইমবার্তা রিপোট:  বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে সপ্তম দিনেও রাজধানীতে বিক্ষোভে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

শনিবার সকাল থেকে দনিয়া, জুরাইন, মালিবাগ, ঝিগাতলা, মিরপুর, লালবাগ, শাহবাগ, সাইন্সল্যাব, বাড্ডা ও উত্তরায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী নিরাপদ সড়কের দাবিতে জড়ো হয়েছেন।

বিক্ষোভের পাশাপাশি তারা গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের উৎসাহিত করছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ঢাকাসহ বেশিরভাগ জেলায় অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নির্দেশে এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

বেলা ১১টার দিকে মিরপুর-২ থেকে শত শত শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে এসে মিরপুর-১০ এর গোলচত্বরে জড়ো হন। সেখানে নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।

পাশাপাশি ফুটওভার ব্রিজ ও ফুটপাথ ব্যবহারে লোকজনকে উৎসাহিত করছেন। গাড়ির লাইসেন্সও পরীক্ষা করছেন। এতে পুলিশও তাদের সহায়তা করছেন।

পল্লবী পুলিশের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) সাইকা পাশা  বলেন, ওরা প্রতিদিন যা করছেন, আজও তাই করছেন। আগের কয়েক দিনের মতো তারা আজও গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা করছেন।

সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষার্থীরা শান্তিনগর মোড়ে জড়ো হন। সেখানে কুড়ি জনের মতো শিক্ষার্থীকে জড়ো হতে দেখা যায়।

একই সময়ে বীরশ্রেষ্ঠ নূল মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ঝিগাতলা মোড়ে বিক্ষোভ করেন। মালিবাগে আবুল হোটেলের সামনেও জড়ো হন শিক্ষার্থীরা।

শনিবার সকাল ১০ থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিংয়ের সামনে অর্ধ শতাধিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে সড়কে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন তারা।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা নর্থ টাওয়ারের সামনে এসে পুলিশের বেরিকেড ভেঙে সড়ক অবরোধ করেন। তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।

উত্তরা জোনের এডিসি (ট্রাফিক) রহিমা আক্তার লাকী  বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনের মতো আজও গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা করছেন।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাল্টায় পবিহন মালিক-শ্রমিকরা বাস না নামানোয় সড়কে শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজি অটোরিকশাই চলাচল করছে।

শিক্ষার্থীরা অবরোধ তৈরি না করে শুধু এসব গাড়ি থামিয়ে চালকদের ও গাড়ির লাইসেন্স দেখতে চাচ্ছে।

সকাল ১০টার পরে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে মিরপুর ১ নম্বরের দিকে যায়। ফিরে ওই চত্বরে অবস্থান নিয়ে গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা শুরু করে।

আজ বেলা ১১টার দিকে শাহবাগ, ফার্মগেট, পান্থপথ, সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর, মতিঝিল প্রভৃতি স্থানে তাদের দেখা যায়।

ফার্মগেট মোড়ে অবস্থান নিয়েছে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, আইডিয়াল কমার্স কলেজ ও তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ছাড়া আহত হয় বেশ কয়েকজন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। তারা যানবাহন ও চালকের লাইসেন্স তল্লাশি করছে। কোনো অনিয়ম পেলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশের কাছে মামলা করার জন্য। তারা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানও প্রত্যেক্য পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নয়টি দাবি করেছে। তাদের সব দাবি মেনে নেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার উচিত বলে জানান তিনি।

এরই মধ্যে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতারা বলেছেন, নিরাপদ বোধ না করা পর্যন্ত তারা রাস্তায় বাস নামাবেন না। ফলে অঘোষিত ধর্মঘট চলছে। গতকাল থেকেই আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

আরো পড়ুন :
শিক্ষার্থীদের সাথে অভিভাবকেরাও রাজপথে
নিজস্ব প্রতিবেদক
ন্ধের দিনেও রাস্তায় নেমেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল কোথাও কোথাও অভিভাবকেরাও ছিলেন। শিক্ষার্থীদের সাথে সহমত পোষণ করে অভিভাবকদেরও রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়াতে দেখা গেছে। তবে গতকাল শিক্ষার্থীরা কোথাও রাস্তা অবরোধ করেনি। শিক্ষার্থীরা এখন নৌপরিবহন মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিটিই সবচেয়ে বড় করে দেখছে। যদিও ৯ দফা দাবির মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রীর ক্ষমাপ্রার্থনার দাবিটি ছিল।

গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও অভিভাবকদেরও রাস্তায় দেখা গেছে। সকালে মিরপুর-২ নম্বর সনি সিনেমা হলের সামনে শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নামে। তাদের সাথে অভিভাবকেরাও ছিলেন। মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরাও সেখানে অংশ নেন। আগের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিরপুর-১৩ নম্বর থেকে ১০ নম্বর পর্যন্ত রাস্তায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা যৌথ হামলা চালান বলে অভিযোগ করা হয়। অভিভাবক ও সাবেক শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বলেন, তাদের সন্তানদের ওপর হামলা হয়েছে; প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নেমেছেন।

শায়লা নামে এক অভিভাবক বলেন, তাদের সন্তানরাতো অযৌক্তিক কোনো দাবি করেনি। তারা সড়কে নিরাপত্তা দাবি করেছে। তারা মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ দাবি করেছে। এটা তো অপরাধ নয়। তাদের সন্তানদের ওপর কেন হামলা করা হলো। মিরপুর-১০ নম্বরেও অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা যানবাহনের কাগজপত্র তল্লাশি করে।

শাহবাগে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যানবাহনের কাগজপত্র তল্লাশি করেছে শিক্ষার্থীরা। বেলা পৌনে ১১টায় শাহবাগে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় যানবাহনগুলো লেন মেনে চলায় বাধ্য করে শিক্ষার্থীরা। পান্থপথ থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি পর্যন্ত রাস্তায় গতকাল লাইন ধরে এবং নির্দিষ্ট লেন মেনে গাড়ি চলতে দেখা যায়। সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকাতেও যানবাহনের লাইসেন্স তল্লাশি করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় কয়েক শিক্ষার্থী জানায়, তারা শুধু দাবি নিয়ে রাস্তায় এসেছে। কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য নয়।

এ দিকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠন রাস্তায় নেমেছে। অরাজনৈতিক ওই সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে শিগগির শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।

গত ২৯ জুলাই দুপুরে ছুটির পরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আবদুল করিম সজীব এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিয়া খানম মিম নিহত হয়। তারা রাস্তার পাশের ফুটপাথে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল। এ সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে দুইজন নিহত হয়। ওই ঘটনায় আরো বেশ কয়েক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। পথচারীরা আহতদের কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে গুরুতর আহত কয়েকজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর ৯ দফা দাবিতে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। দাবগুলোর সাথে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগের দাবিও যুক্ত হয়েছে।

Please follow and like us:

Check Also

আবুল কাশেম কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি,তাই জনগণ তাকে বার বার নির্বাচিত করতেন: সাতক্ষীরায় মিয়া গোলাম পরওয়ার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।