ইস্ট ওয়েস্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা: ছাত্র বিক্ষোভে গুলি টিয়ার শেল:জাপান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিদর্শন বাতিল

  পুলিশের রায়ট কার ও জলকামান ব্যবহার * পুলিশের সঙ্গে অংশ নেয় একদল যুবক * হামলার বিচার দাবিতে মিছিলেও হামলা * আহত শতাধিক আটক ৬০ * পরিবহন নামলেও সংখ্যায় নগণ্য ভোগান্তি কমেনি

ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট:   রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সোমবারও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। রামপুরার আফতাবনগর, প্রগতি সরণি-বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, শাহবাগসহ অন্যান্য পয়েন্টে দুপুরে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। চলে শেষ বিকাল পর্যন্ত। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় পুলিশের সঙ্গে কিছু যুবকও অংশ নেয়।

মূলত আগের দু’দিন ঢাকার ধানমণ্ডিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদেই শিক্ষার্থীরা এ দিন রাস্তায় নামেন। ছাত্রদের দমাতেই পুলিশ নির্বিচার লাঠিচাজ করেছে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে মুহুর্মুহু টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

রাবার বুলেট এবং পিস্তল থেকে গুলিবর্ষণের খবরও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পুলিশ রায়ট কার ও জলকামান ব্যবহার করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ ও কাল ইস্ট ওয়েস্ট, একদিনের জন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ এবং ঘাতক বাসচালকের ফাঁসিসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ধানমণ্ডিতে পুলিশসহ এক দল যুবক হামলা করে। এর প্রতিবাদে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পেছনে রেখে সামনে এগিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। সোমবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এলে পুলিশ ও যুবক দলটির সঙ্গে যথারীতি সংঘর্ষ বাধে।

বসুন্ধরা এলাকায় সংঘর্ষটি বড় আকার ধারণ করে। এখানে শিক্ষার্থীদের দমাতে গোটা গুলশান জোনের পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছে। সঙ্গে আনা টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট শেষ হয়ে যায়। পরে আবার আনতে হয়েছে। একপর্যায়ে পুলিশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে আলোচনায় বসেও ব্যর্থ হয়। রামপুরা এবং শাহবাগ এলাকায়ও বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় ভাটারা থানার ওসি কামরুজ্জামানসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

গত শনি এবং রোববারও রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ এবং একদল যুবকের সংঘর্ষ হয়। তাতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তিন দিনে আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আড়াই শতাধিক। শাহবাগ, আফতাবনগর ও বসুন্ধরা এলাকা থেকে সোমবার অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় আছেন।

শিক্ষার্থীরা নবম দিনের মত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে অংশ নেন সোমবার। এদিনও সবার মুখে স্লোগান ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’ (আমরা ন্যায়বিচার চাই)। এর মধ্যে গত কয়েক দিনের অসন্তোষ সহিংস প্রতিবাদে রূপ নেয়।

মূলত শনিবার ধানমণ্ডির ঝিগাতলায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও একদল যুবক হামলা চালায়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণহারে নেমে আসেন। সে কারণে অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে সোমবার সরকারের পক্ষ থেকে আগাম নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। স্কুল-কলেজে শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিতের ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

ফলে চার দিন পর রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বড় কলেজের সামনে পুলিশের পাহারা ছিল। বিশেষ করে আগের দু’দিনের বড় ঘটনাস্থল ঝিগাতলা, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা, শাহবাগ, রামপুরা ব্রিজ, প্রগতি সরণি, যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর মহাসড়ক এলাকায় বাড়তি পুলিশ ছিল। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে একদল যুবককেও সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি এড়ানো যায়নি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত পরিবেশ অনেকটাই শান্তিপূর্ণ ছিল। এরপর একে একে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলসহ বের হতে থাকে। তারা সড়ক দখলে নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ অ্যাকশনে যায়। সঙ্গে থাকা যুবকেরাও তখন পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয়।

রাজধানীর পাশাপাশি সিলেট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েটসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও এ দিন শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। কোথাও মানববন্ধন করে তারা। মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী ও ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষকরা। ওইসব স্থানেও শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বড় ধরনের সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।

কয়েক দিনের অঘোষিত ধর্মঘটের পর এদিন ঢাকার রাস্তায় বাসসহ গণপরিবহন চলাচল শুরু করে। তবে সংখ্যায় ছিল কম। ফলে নগরবাসীকে বাসে ওঠার জন্য রীতিমতো যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়েছে।

বাস মালিকদের দু’টি সমিতির ঘোষণা অনুযায়ী অন্য শহর থেকে এদিন ঢাকামুখী সব পরিবহনও ছেড়ে আসে। কিন্তু সোমবারের ঘটনার পর নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বাস মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, পুলিশ গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করছে। এ কারণে গাড়ি কম নামানো হয়েছে।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর রোডে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাস চাপায় নিহত হন। এতে ১৫ জন আহত হন। এর প্রতিবাদে ওইদিনই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এরপর দিন দিন শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ বাড়তে থাকে। পাশাপাশি এতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। শিক্ষার্থীরা নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ, নিরাপদ সড়ক এবং নিহত দুই শিক্ষার্থীর ঘাতক বাসচালকের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দেন।

শনি ও রোববার ধানমণ্ডির ঝিগাতলায় আন্দোলনরত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ওপর বল প্রয়োগ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ আরও বেড়ে যায়। সরকারের নানা পদক্ষেপ এবং পুলিশের বাড়তি তৎপরতার মধ্যেও সোমবার শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসেন। এ দিনের প্রথম বিক্ষোভ মিছিল বের হয় বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি কলাভবন, মধুর ক্যান্টিন, কার্জন হলসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এরপর তারা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

প্রথমে দুপুর দেড়টার দিকে তারা শাহবাগের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে বিকাল ৩টার দিকে মিছিলটি শাহবাগের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। তখন সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল মারে।

দুপুর ১২টার দিকে ক্লাস ফেলে নেমে আসে রাজধানীর আফতাবনগরের ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তারা রামপুরা ব্রিজের দক্ষিণপ্রান্ত দখল করে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় সংঘর্ষ। সেখানে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ বেশ কয়েকটি টিয়ার শেল ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা তখন পিস্তল থেকে গুলি ছোড়েন। এ ছাড়া পুলিশ রাবার বুয়েট ব্যবহার করেছে।

তারা রায়ট কারও (এপিসি) ব্যবহার করে। এ সময় ওই স্থানে পুলিশের সঙ্গে একদল যুবক যোগ দেয়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে গুলিবর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়, পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে ধাওয়া দিয়েছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওই সময় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক নাসরিন আকতার হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। গুলশান জোনের এডিসি আহমেদ হুমায়ুন বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের ভেতর নিতে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর প্রগতি সরণির বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করেন বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসইউ), ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় (আইইউবি) ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষার্থীরা। তখন পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। ধাওয়ার মুখে প্রথমে তারা ফিরে যান। পরে সংগঠিত হয়ে দেড়টার দিকে ফের পুলিশের দিকে এগিয়ে যান ছাত্রছাত্রীরা। তখন তাদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়।

সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখাকালে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ বিভাগের প্রধান বেলাল আহমেদবলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে আমি জানি না। তবে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। এতে শুধু নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা নয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আছে। আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। তারা কারও কথা শুনছে না।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ টিয়ার শেল মারছে। কয়েকটি ক্যাম্পাসের ভেতরেও পড়েছে। আমরা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি। তবে পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষ্যে আমাদের সিকিউরিটি প্রধানের সঙ্গে পুলিশের আলোচনা চলছে।’

প্রায় একই সময়ে প্রতিবাদ মিছিল বের করে বেসরকারি আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হানা দিয়ে ১১ শিক্ষার্থীকে আটক করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। দুপুর সোয়া ২টায় ওই থানার উপ-পরিদর্শক কাওসার যুগান্তরকে বলেন, আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশৃঙ্খলা করায় তাদের মধ্য থেকে ১১ জনকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সালমান হাসান বলেন, আমরা বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি। এখনও গুনে দেখা হয়নি।

বসুন্ধরায় কয়েক ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ : রাজধানীর এ এলাকায় দুটি বড় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এগুলো হচ্ছে- নর্থসাউথ ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি। সোমবার এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কুড়িলে অবস্থিত আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এআইইউবি) শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে বিক্ষোভে নামার চেষ্টা করে। পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় ভাটার থানার ওসিসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে তিন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে আরও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সোমবার বেলা ২টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। একপর্যায়ে পুলিশ মাইকিং করে আলোচনার প্রস্তাব দেয়। কয়েকজন শিক্ষার্থী আলোচনায়ও আসেন। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। ঘটনার সময়ে বসুন্ধরা এলাকার ভেতরে আটকে পড়ে কয়েকশ’ মানুষ। সব ধরনের যান চলাচল, দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে পুরো এলাকায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জড়ো হয়। গ্রামীণফোন অফিসের সামনে থেকে বের হয়ে মূল সড়কের দিকে আসার চেষ্টা করে। এ সময় তারা ফুটপাতে দোকানপাট ভাংচুর করে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শিক্ষার্থীরা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পুলিশও বৃষ্টির মতো রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার আশরাফুল কবির বলেন, শিক্ষার্থীদের হামলায় পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছে। গুলশান পুলিশ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল আহাদ সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে ধরে থানায় পাঠানো হয়েছে। এখন সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না।

ইস্ট ওয়েস্টে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকরাও : রাজধানীর আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের সঙ্গে হেলমেট পরে শ্রমিক ও একদল দুর্বৃত্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে গেটের সামনে ও রাস্তায় অবস্থান নেয়। তারা মিছিল নিয়ে মূল সড়কে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ। এ সময় শিক্ষার্থীরা তিনটি প্রাইভেটকারসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশও তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়, টিয়ার শেল ছোড়ে এবং এপিসি নিয়ে ধাওয়া দেয় এরপর শিক্ষার্থীরা জহুরুল ইসলাম সিটির ভেতরের দিকে অবস্থান নেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আইনুন নাহার জ্যোতি বলেন, ‘সকাল থেকে ক্যাম্পাস শান্ত ছিল। রুটিন অনুযায়ী সব বিভাগে ক্লাস হচ্ছিল। সোয়া ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে হঠাৎ ইটপাটকেল ছোড়া শুরু হয় এবং লাঠি দিয়ে গেটে আঘাত করে হামলাকারীরা। সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীরা গেট বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে বাইরের কিছু ছেলে হঠাৎ ক্যাম্পাসের গেটের বাইরে থেকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া করলে পালিয়ে যায়। এরপর ছাত্ররা বাইরে মিছিল করলে পুলিশ টিয়ার শেল ছোড়ে। পরে ছাত্ররা ভেতরে চলে আসে।

শাহবাগে মিছিল ছত্রভঙ্গ : ওই এলাকায় ছাত্রদের মিছিলে টিয়ার শেল, জলকামান থেকে পানি নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। বেলা ৩টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যেতে চাইলে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন যুগান্তরকে বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে একটি মিছিল পাবলিক লাইব্রেরির দিকে আসতে থাকে। এ সময় শাহবাগ মোড়ে সকাল থেকে অবস্থান নেয়া পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের দিকে এগিয়ে আসে। তখন উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে প্রথমে জলকামান এরপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ শুরু করে।

এসব বিষয়ে রমনা জোনের পুলিশের উপ- কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার  বলেন, পুলিশ আর ছাড় দেবে না। আমরা শাহবাগ এলাকা ফ্রি রাখতে চাই। শিক্ষার্থীরা এসেছিল অবরোধ করতে পুলিশ টিয়ার শেল মেরে তাদের সরিয়ে দিয়েছে। শাহবাগ থানার ওসি (তদন্ত) জাফর আলী বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ধানমণ্ডির রাস্তায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ : ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ দাবিতে গত দু’দিন উত্তাল ধানমণ্ডি, ঝিগাতলা ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় সোমবারের চিত্র পুরোপুরি বদলে গেছে। সোমবার এসব এলাকা ছিল একেবারেই শান্ত। তবে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কয়েকটি পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান করতে দেখা গেছে। তাদের সঙ্গে ছিল সাঁজোয়া যানও। এ ছাড়া এ এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিছু সময় পরপর কয়েকটি মোটরসাইকেল একসঙ্গে মহড়া দিতেও দেখা গেছে।

‘ছাত্রলীগ কাউকে নখের আঁচড়ও মারেনি’ : এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের কাউকে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের কেউ নখের আঁচড়ও মারেনি বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। সোমবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিন সংলগ্ন আইবিএ ভবন প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তিনি দাবি করেন, ছাত্রলীগের কেউ সেখানে ছিল না। আমরা নিজেরাই আক্রান্ত হয়েছি।

উসকানির দায়ে আটক ৩ : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটিয়ে সহিংসতার আহ্বান জানানোর অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক করা তিনজন হলেন মাহবুবুর রহমান, আলমগীর হোসেইন ও সাইদুল ইসলাম। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ, মেমোরি চিপ এবং ফেসবুক আইডি ও গ্র“প জব্দ করা হয়।

জাপান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিদর্শন বাতিল : সফররত জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো’র আজ ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল। তবে তিনি সেখানে আজ যাচ্ছেন না। জাপান দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে কারণ উল্লেখ করা হয়নি।যুগান্তর

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।