বাস চালানোর লাইসেন্স নেই চালক মাসুমের, দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়ার কথা স্বীকার

ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রির্পোটঃ  জাবালে নুরের চালক মাসুম বিল্লাহ শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে বাস চাপা দিয়ে মেরে ফেলার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি আগে গিয়ে যাত্রী তোলার জন্য বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলেছেন এবং অন্যদের আহত করেছেন। আজ বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের (সিএমএম) কাছে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি এ কথা বলেন।

চালক মাসুম বিল্লাহকে সাতদিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আজ তাঁকে আদালতে হাজির করে। ঢাকার মহানগর হাকিম গোলাম নবী জবানবন্দি রেকর্ড করে মাসুম বিল্লাহকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। মাসুমের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার উত্তর চাকামইয়া গ্রামে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম বলেন, মাসুম বিল্লাহ দুই শিক্ষার্থীকে ইচ্ছাকৃতভাবে জেনেশুনে বাস চাপা দিয়ে মেরে ফেলার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর হোটেল রেডিসনের বিপরীত পাশের জিল্লুর রহমান উড়ালসড়কের ঢালের সামনে বাস চাপায় নিহত হয় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ওরফে রাজীব (১৭) এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)। গুরুতর আহত হয় আরও নয় শিক্ষার্থী।

মাসুমের লাইসেন্স পরীক্ষা করে দেখা যায়, তিনি গত বছরের ৪ জুন গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পান। তবে বাস চালানোর কোনো অনুমতি তাঁর ছিল না, ছিল দুই চাকার হালকা যান চালানোর অনুমতি।

পুলিশ কর্মকর্তা কাজী শরিফুল বলছেন, ঘটনার দিন দুপুরে ক্লাস শেষে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা হোটেল রেডিসনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। উদ্দেশ্যে যার যার গন্তব্যে যাওয়া। এ সময় জিল্লুর রহমান উড়াল সড়ক দিয়ে জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাস ছুটে আসে। তিনটি বাসের চালকই আগে যাত্রী ওঠানোর জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন।

আদালত সূত্র বলছে, বাসগুলোর মধ্যে মাসুম বিল্লাহর বাসটি ছিল বাম পাশে। তিনি তখন আগে যাওয়ার জন্য বেপরোয়া চালিয়ে গাড়িটি দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রছাত্রীদের ওপর তুলে দেন। গত রোববার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে এখনো লেগে আছে রক্তের দাগ।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক আয়ুব আলী  জানান, তিনি জাবালে নূর পরিবহনের বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে দুজনকে নিহত হতে দেখেছেন। তিনটি বাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলার দৃশ্যও তিনি দেখেছেন। পুলিশও আদালতকে দেওয়া প্রতিবেদনে বলছে, মাসুম বিল্লাহ ইচ্ছাকৃতভাবে বাস চাপা দিয়ে দুজন শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলেছেন।

বাস চাপার ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মিমের বাবা জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে যে ধারায় (দণ্ডবিধির ৩০৪-খ) মামলা করেন, তা ছিল বেপরোয়া যান চালিয়ে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ। এই ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ বছরের কারাদণ্ড। তবে শহীদ রমীজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর ঢাকাসহ সারা দেশে ঘাতক বাসচালক ও চালকের সহকারীদের বিচার চেয়ে আন্দোলন শুরু হয়।

গত ১ আগস্ট পুলিশ মামলার ধারা সংশোধন চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছে। আদালতকে পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত করে দেখা গেছে, ঘটনার দিন বাসে ওঠার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল ছাত্রছাত্রীরা। জখমের মাধ্যমে মৃত্যু হতে পারে জেনেও জাবালে নূর পরিবহনের বাস চালক, চালকের সহকারীরা তাঁদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারার অপরাধ করেছেন। এ ধরার অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

বাস মালিক শাহাদাতবাস মালিক শাহাদাতদুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার পরদিন চারজনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এঁরা হলেন, এনায়েত হোসেন (৩৮), সোহাগ আলী (৩৫), রিপন হোসেন (৩২) ও জোবায়ের (৩৬)। এই চারজনকে গত ৬ আগস্ট সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। বর্তমানে তাঁরা পুলিশের হেফাজতে আছেন।

দুই শিক্ষার্থীর নিহতের মামলায় গত ২ আগস্ট জাবালে নূর পরিবহনের মালিক শাহাদাত হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পুলিশ তাঁকে ১০ দিন রিমান্ডে নিতে চাইলে আদালত সাত দিন রিমান্ডে রাখার অনুমতি দেন। বর্তমানে তিনিও পুলিশ হেফাজতে আছেন।

বাস মালিক শাহাদাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হালকা যানের চালক মাসুমকে বাসচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে অপরাধ করেছেন। পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, বাস মালিক শাহাদাত জাবালে নূর কোম্পানির সভাপতি জাকির হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নোমান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলি আহম্মেদকে প্রতিদিন ৭০০ টাকা করে দিতেন। এই চক্রের সদস্যদের নির্দেশে বাসের মালিক শাহাদাত অনুপযুক্ত চালক নিয়োগ দেন।

তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর যারা জড়িত আছেন তাদেরও গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।প্রথম আলো

Check Also

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে: স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইয়ে রাষ্ট্রপতি

মহান স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।