আশাশুনির খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন ৪ গ্রাম প্লাবিত

ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ  আশাশুনি: আশাশুনির থানাঘাটায় খোলপেটুয়া নদীর পাউবো’র ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে শতাধিক মৎস্য ঘের, পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি এবং একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্লাবিত এবং আতঙ্কগ্রস্ত ভাঙন এলাকার মানুষ দ্রুত তাদের গৃহপালিত পশু-পাখিসহ মালামাল নিয়ে পাশ্ববর্তী পাউবো’র বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে সচেতন এলাকাবাসি জানান আশাশুনি উপজেলার ৩/৪ টি ইউনিয়নে প্রতিবছর নদী ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু কেন এই ভাঙন? ভাঙনের নেপথ্যে কোনো হাত আছে কীনা তা সাংবাদিকদের কাছে উল্টো জানতে চেয়েছেন তারা। এলাকাবাসি বলেন, গোন আসলেই ওই ইউনিয়নগুলোর জনপ্রতিনিধিদের মালকোচা মেরে বাঁধ মেরামত করতে দেখা যায়। তারপর বাঁধ সংস্কারের নামে যে বরাদ্দ দেয়া হয় তার কোনো খবর জনগণ জানতে পারে না। শুধু তাই না, বানভাসি মানুষের জন্য যে ত্রাণ ও সাহায্য দেয় সরকার তারও কোনো হিসেব পায়না সাধারণ মানুষ। রাতের আঁধারে এসব বাঁধ কেউ কেটে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি করে কীনা তা কেউ এ পর্যন্ত খতিয়ে দেখেননি। বারবার নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। আর সেই ক্ষয়-ক্ষতির ছবি নিয়ে চলে সেলফি উৎসব। রবিবার খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভাঙার খবর জানাতে গিয়ে এলাকবাসি এভাবে পাল্টা প্রশ্ন করেন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে।
এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান আবুহেনা সাকিলের নেতৃত্বে বাঁধ রক্ষায় অর্ধ সহস্্রাধিক শ্রমিক সন্ধ্যার পরে ভাটায় জেনারেটরের আলোয় প্রাণপণ কাজ করতে দেখা গেছে।
সরজমিনে ঘুরে প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুর ১২টার দিকে খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের থানাঘাটা গ্রামের পাউবো’র ৪নং পোল্ডারের পাঁড়–ইপাড়ার জামাল মাষ্টারের মৎস্য ঘের সংলগ্ন ৫০ ফুটাধিক বেড়িবাঁধ হঠাৎ ভেঙে নদীগর্ভে চলে যায়। মুহূর্তের মধ্যে জোয়ারের পানি তীব্র বেগে ভেতরে প্রবেশ করে থানাঘাটা, বিলবকচর, ঢালীরচক ও পুঁইজালা ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়। সন্ধ্যায় ভাটায় পানি সরা কালিন ভাঙন বৃদ্ধি পেয়ে ১০০ ফুটের অধিক আকার ধারন করেছে।
ওই সব গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে শতাধিক ছোট বড় মৎস্য ঘের ও পুকুর। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, বিলবকচর প্রাইমারি স্কুল, ঢালীরচক ঠাকুরবাড়ী স্কুল ও বকচর সাইক্লোন সেল্টারসহ বেশকিছু মসজিদ-মন্দির।


এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুহেনা সাকিল এ প্রতিবেদককে জানান, সংশ্লিষ্ট এলাকার ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্থ সাড়ে ৩ চেইন বেড়িবাঁধটি মেরামতের জন্য অতি সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সুপারিশে ৮লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কাজের দায়িত্ব পান স্থানীয় ঠিকাদার আব্দুস সালাম গাজী। কাজ শুরু করার জন্য ঝুকিপূর্ণ বাঁধের ভেতরে পানি থাকায় এবং মাটির জন্য কাজ করা সম্ভব হয়নি। আপাতাত জরাজীর্ণ বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়ে শুক্রবার থেকে শ্রমিক লাগিয়ে মেরামত করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে রোববার দুপুুরে বাঁধটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। রাতের জোয়ারের আগে পানি রক্ষা বাঁধ আটকানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
পাউবো’র সহকারি প্রকৌশলী আবুল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ডিসিএম পদ্ধতিতে আব্দুস সালাম কন্ট্রাক্টরকে কাজ করার অনুমোতি দেয়া হয়েছিল। ভাঙ্গনের অপর পারে মাটি থাকলেও খরচ বাঁচানোর স্বর্থে স্থানীয় ঘের মালিক জামাল মাষ্টারের মৎস্য আগামী রোববার পানি সরিয়ে দেয়ার আশ্বাসে আপাতাত কাজে হাত দেননি এরই মধ্যে বাঁধ ভেঙ্গে অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হল। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাঁধ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট পাউবো কর্তৃপক্ষ ২ হাজার ও ইউপি চেয়ারম্যান আবুহেনা সাকিল প্রায় ৩ হাজার মোট ৫ হাজার প্লাষ্টিক বস্তা এবং প্রয়োজনীয় বাঁশ ও প্রেক জোগাড় করে জেনারেটরের আলোয় অর্ধসহস্্রাধিক শ্রমিক লাগিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। রাতেই হয়ত বাঁধ পানি আটকানো সম্ভব হতে পারে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাফ্ফারা তাসনীন জানান, ডিসিএম পদ্ধতি কিনা সেটা আপাতাত আমার জানা নেই। তবে এতটুকু জানি, ঝুকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কারে টেন্ডার হয়েছে এবং কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। আমি সার্বক্ষনিক পরিস্থিতির তদারকি করছি এবং ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছি। বাঁধটি মেরামতে আমার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যহত থাকবে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান জানতে আমাদের লোকজন কাজ করছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রাতের জোয়ারে বাঁধ মেরামত করা সম্ভব না হলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবে। সেই সাথে সাথে বাড়বে ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও। বাঁধ মেরামতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসি।

Please follow and like us:

Check Also

আশাশুনির বদরতলা-ব্যাংদহা সড়কে পল্লী বিদ্যুতের পরিত্যাক্ত খুটির রড: l দুর্ঘটনার শঙ্কা

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান( আশাশুনি) সাতক্ষীরা।। আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের বদরতলা টু ব্যাংদহা সড়কে পল্লী বিদ্যুতের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।