পানির অভাবে সাতক্ষীরায় আমন আবাদের লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে সংশয়: শ্যালো মেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে চাষাবাদের চেষ্টা

আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা: পর্যাপ্ত পানির অভাবে সাতক্ষীরাতে আমন ধানের আবাদে হিমশীম খাচ্ছে চাষীরা। বীজ তলা তৈরি নিয়েও বিপাকে। বাধ্য হয়ে অনেকে ভুগর্ভস্থ পানি তুলে আমন চাষের চেষ্টা করছে। এতে আবাদের লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে সংশয় দেখা দিয়েছে। জেলায় ভরা বর্ষাতেও বৃষ্টির তেমন দেখা নেই। এদিকে প্রচন্ড খরতাপে অতীষ্ট হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

দিনপঞ্জি অনুযায়ী আষাঢ়-শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল। কিন্তু আষাঢ় মাস পেরিয়ে শ্রাবণের শেষদিন পেরোতে থাকলেও জেলাতে তেমন বৃষ্টিপাত হচ্ছেনা। প্রকৃতির এমন বিরুপ আচরণের ফলে রোপা আমন চাষাবাদের ভরা মৌসুমেও কৃষকরা ধানের চারা রোপন করতে পারছেন না। অনেক কৃষক আগাম আবাদের জন্য বীজতলা চারা প্রস্তুত করলেও সেই চারা বীজতলাতেই নষ্ট হতে বসেছে। তবে কেউ কেউ শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপন করছেন। অন্যদিকে কাজ কামের সংকটে পড়েছে কৃষি শ্রমিকরা। বসে বসে সময় পার করছেন তারা। জমানো টাকা খরচ করে টানাটানির মধ্যে তাদের সংসার চলছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, এবার জেলায় প্রায় ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন লাগানো শেষ হলেও ভরা বর্ষাকালে জেলায় পরিমিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আমন চাষীরা। তাই এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জমিতে চাষ দিয়ে রাখলেও পানির অভা

বে চারা রোপন করতে পারছেন কৃষক। শ্রাবণের শেষে ও তেমন বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় হতাশ তারা।

কৃষকরা জানিয়েছেন, জেলায় সাধারণত মধ্য আষাঢ় থেকে শুরু করে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত আমন ধানের চারা জমিতে রোপন করা হয়। কিন্তু এবার তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা আমন চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

মূলত বর্ষাকালে বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে প্রাকৃতিক নির্ভও পানিতে চাষীরা রোপা আমন চাষ করে থাকে। কিন্তু এবার আষাঢ়ের শুরু থেকেই খুব কম বৃষ্টি এই অঞ্চল। মাঝে মধ্যে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও সেই পানি জমিতে লেগে থাকেনি। এতে করে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে পানি না জমায় সেই জমি এখনও পতিত পড়ে আছে। সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনেকের বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে। কারো কারো বীজতলায় চারা তৈরি থাকলেও পানির অভাবে সেই চারা জমিতে লাগাতে পারছে না। সাধারণত বীজতলায় তৈরী হওয়া চারা ২৫-৩০ দিনের মধ্যে জমিতে লাগানো হয়। কিন্তু অনেক কৃষকের চারার বয়স দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই অতিরিক্ত খরচ করে শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে পানি দিয়ে চারা লাগানোর কাজ শুরু করেছেন। অন্যদিকে আগাছা প্রতিরোধের জন্য আমন ক্ষেতে ৪ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হচ্ছে। এসব কারণে কৃষকের খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ। সদর পৌরসভার কুকরালির এলাকার কৃষক আহসানুর ও সোলৈমান জানান, খরার জন্য আমনের চারা মরে গেছে। এখন আবারও আমন চারা কিনে রোপন করতে হবে। বর্তমানে স্যালো মেশিন দিয়ে রোপন করা চারা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। শ্যালো মেশিন দিয়ে আমন চাষাবাদ করতে হলে খরচ হবে দ্বিগুণ। কৃষকের মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাবে।

সদরের ফিংড়ি ইউনিয়নের বালিথা গ্রামের রমজান আলী। একজন পেষাদার কৃষক। বৃষ্টির পানি না পেয়ে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপন করছেন। এতে তার খচর অনেক বেশি হবে। কিন্তু বীজ তলায় চারা আর রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে দ্রুত রোপন করতে হচ্ছে। এমন অবস্থা অনেকেরই।
এবার এ জেলাতে ৮৪ হাজার হেক্টও জমিতে আমন উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর জেলায় ৮৩ হাজার ৭ শত ৬৫ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৭ হাজার ৮ শত ৮০ হেক্টর, কলারোয়া উপজেলায় ১১ হাজার ৩ শত ৮০ হেক্টর, তালা উপজেলায় ৭ হাজার ৩ শত ১০ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ৫ হাজার ২ শত হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৭ হাজার ১৫ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ৯ হাজার ২ শত ৩০ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৫ হাজার ৭ শত ৫০ হেক্টর জমিতে ।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মান্নান জানান, জেলার বেশির ভাগ কৃষক বৃষ্টির পানিতে আমনের আবাদ করে। কিন্তু চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়তে এখনো সব জমিতে আমনের আবাদ হয়নি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমন আবাদের লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হবে তিনি আশাবাদি।

এদিকে বৃষ্টিপাত না হলে খরায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি রোপা আমনের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।—
আবু সাইদ বিশ্বাসঃ

Check Also

আশাশুনিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত

এস, এম মোস্তাফিজুর রহমান ॥ আশাশুনিতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’২৪ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।